মাতারাকে খেপিয়েছেন তো ফেঁসেছেন!

ইয়র্কার আর বাউন্সার হলো একজন ফাস্ট বোলারের অন্যতম হাতিয়ার৷ বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানরা এই ইয়র্কার বা বাউন্সে নাস্তানাবুদ হয়। কিন্তু এই জায়গায় এই মানুষটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়র্কার বলকে লেগ সাইড দিয়ে করতেন সীমানা পার। যে কোনো বলকে নিয়েই রীতিমতো ছেলেখেলা করতেন মাঠে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের যদি আরেক নাম বলা হয় সেটি হবে সনাথ জয়াসুরিয়া। আর সেই জন্যই তার নামকরণ হয় ‘মাতারা হারিকেন'।

শ্রীলঙ্কা সেবার ভারত সফরে গিয়েছিলো। ম্যাচের দিন এক দর্শক খেলার দিন একটা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে আসে। সেই প্ল্যাকার্ডে যা লেখা ছিল, তার বাংলা করলে দাঁড়ায় – ‘আমরা এমন একজন মা চাই যিনি ভারতে একজন জয়াসুরিয়ারর জন্ম দিতে পারেন।’

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, ‘কোন ব্যাটসম্যানকে বল করতে আপনার তাঁর ভয় হতো?’ তিনি বলেছিলেন, ‘কারো জন্য এটা খুব বড় প্রশংসাবানী, যদি বলা হয় যে তিনি খেলাটার ধরণই পাল্টে দিয়েছেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে তার পারফরম্যান্সের পর ইনিংসের শুরু কিভাবে করতে হয়, সেটার ব্যাপারে সবার ধারণাই পাল্টে গিয়েছিল।’

_______________

ইয়র্কার আর বাউন্সার হলো একজন ফাস্ট বোলারের অন্যতম হাতিয়ার৷ বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যানরা এই ইয়র্কার বা বাউন্সে নাস্তানাবুদ হয়। কিন্তু এই জায়গায় এই মানুষটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়র্কার বলকে লেগ সাইড দিয়ে করতেন সীমানা পার। যে কোনো বলকে নিয়েই রীতিমতো ছেলেখেলা করতেন মাঠে। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের যদি আরেক নাম বলা হয় সেটি হবে সনাথ জয়াসুরিয়া। আর সেই জন্যই তার নামকরণ হয় ‘মাতারা হারিকেন’।

১৯৮৯ সাল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বক্সিং ডে ম্যাচে অভিষেক হয় লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান সাথে বোলার সনাথ জয়াসুরিয়ার। দলে জায়গা পেয়েছেন মূলত বোলার হিসেবে সাথে শেষের দিকে পিঞ্চ হিটিং এর জন্য৷ তবে তিনি কেমন জানি ব্যর্থ ছিলেন সেই সময়। ১৯৯৫ পর্যন্ত ব্যাটিং এভারেজ ৩০ পার করতে পারেন নি৷

১৯৯৬ সাল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ফিরোজ শাহ কোটলা স্টেডিয়ামে ভারতের মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা। শক্তিমত্তার বিচারে রীতিমতো হাতি পিঁপড়ের তুলনা দুই দলের। তার উপর ভারতের হোম গ্রাউন্ড এডভান্টেজ তো আছেই। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে যায় ভারত৷ শচিন টেন্ডুলকারের অনবদ্য ১৩৭ রানে ভর করে ২৭১ রানের টার্গেট দাঁড় করায় ভারত। আর এই বড় রান তাড়া করতে নেমে বোলারদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন সনাথ৷

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে নিয়ম ছিলো যে, ১৫ ওভার পর্যন্ত সার্কেলের বাইরে দুইজন ফিল্ডার থাকতে পারবে। সুতরাং, ক্যাপ্টেন অর্জুন রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়াসুরিয়াকে পাঠান ওপেনিংয়ে। লক্ষ্য একটা পাওয়ার হিটিং দিয়ে এই ১৫ ওভারে রান কভার করা। এই ১৫ ওভারে সকল দলের এভারেজ ছিল ৬০-৬৫ আর সেই এভারেজকে বুড়ো আঙ্গুক দেখিয়ে শ্রীলঙ্কা ভারতের বিপক্ষে করে ১১৭, কেনিয়ার বিপক্ষে ১২৩ আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২১। ভারতের বিপক্ষে সেদিন জয়াসুরিয়া খেলেন ৭৯ রানের ভয়ানক ইনিংস। মজার বিষয় সেদিন শ্রীলঙ্কা প্রথম তিন ওভারেই নেয় ৪২ রান, যেটি এ যুগের টি-টোয়েন্টিতেই স্বপ্নের মতো।

  • ইউ ডোন্ট মেস উইদ জয়াসুরিয়া

বিশ্বকাপের পর রীতিমতো ব্যাটিং দানবে পরিণত হন তিনি। তার সাথে পাল্লা দেবার মতো এগ্রেসিভ ব্যাটসম্যান ছিলো আরো, কিন্তু কেউই তার মতো ধারাবাহিক ছিলো না। আর এদিকে তিনি একের পর এক রেকর্ড করেই যাচ্ছেন। তার করা ১৭ বলে হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড স্বমহিমায় টিকে ছিল ১৯ বছর। আর তার দ্রুততম সেঞ্চুরিটি মাত্র ৪৮ বলের। ১৯৯৭ সালে তিনি হন উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার৷

শ্রীলঙ্কার এই দানবীয় ব্যাটসম্যানের শুরু হয়েছিলো সাধারণভাবেই। ১৯৬৯ এর ৩০ জুন শ্রীলঙ্কার মাতারায় জন্ম নেন তিনি। শ্রীলঙ্কান টিমে তখন অধিকাংশ ক্রিকেটার ছিলো কলম্বো থেকে আগত কিন্তু এই জায়গায় ভিন্ন ছিলেন জয়াসুরিয়া। স্কুল ক্রিকেটে অসাধারণ পারফরম্যান্স এর কারণে ১৯৮৮ সালে ডাক পান অনূর্ধ্ব ১৯ দলে।

সেসময় তিনি দলে আসেন একজন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে, বাঁহাতি স্পিনের সাথে মিডল অর্ডার আর লোয়ার অর্ডার এ ব্যাটিং করতে তিনি। যুব বিশ্বকাপের ভালো খেলার কারণে জায়গা পান বি দলে এবং বি দলের হয়ে পাকিস্তান সফরে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ডাক পান জাতীয় দলে।

১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বারের মতো ম্যাচ সেরা হন তিনি। তবে সেটা ব্যাটসম্যান হিসাবে নয় একজন বোলার হিসেবে। বাঁহাতি স্পিনের ঘূর্ণিতে একাই নেন বিপক্ষ ইংল্যান্ডের ছয় উইকেট। বল হাতে নিজেকে প্রমাণ করার দরুণ দলে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করলেও ব্যাট হাতে ছিলে নির্বিকার। তিনি ছিলে লফটেড কাট আর পুল শটের মাস্টার৷ কিন্তু মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতে নেমে এই শট খেলে ম্যাক্সিমাম সময় বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ আউট হন তিনি।

আর এমন সময় টিম ম্যানেজমেন্ট এমন এক সিদ্ধান্ত নেন যেটা তার নামের পাশে পুরোদস্তুর ব্যাটিং তকমা লাগিয়ে দিয়েছিল। তারা জয়াসুরিয়াকে দিয়ে ওপেনিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কারণ প্রথম দশ ওভারে ফিল্ড রেস্ট্রিকশন কাজে লাগিয়ে জয়াসুরিয়া তার শটগুলো দিয়ে দ্রুত রান তুলে নিতে পারবনে।

১৯৯৪ সালে ওপেনার হিসেবে খেলা শুরু করেন তিনি এবং সেই বছর ডিসেম্বরের ওপেনার হিসেবে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পান তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন ১৪৩ বলে ১৪০ রানে ইনিংস। পরের বছর জানুয়ারীতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পান নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু এরপর ‘৯৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছিলেন নিস্প্রভ।

খেলে গেছেন বিপিএলেও।

বিশ্বকাপ সিরিজের আগে বাজে ফর্মে থাকার পরেও তিনি দলে জায়গা পান। কারণ, শ্রীলঙ্কান টিম ম্যানেজমেন্ট পিঞ্চ হিটার তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে কিছু করতে চান। সেই সময় প্রথম ১০ ওভার সার্কেলের বাহিরে দুইজন মাত্র ফিল্ডার থাকলেও ব্যাটসম্যানরা মেরে খেলতো না। তাদের কাছে তখন ফিল্ডিং সুবিধা নেয়ার চাইতেও নতুন বলে টিকে থাকা বেশি কাম্য ছিল। তবে এইদিকে নিউজিল্যান্ডের মার্ক গ্রেটব্যাচ বলেন, ‘একটু ভিন্ন স্টাইলে ব্যাট চালালে প্রথম ১০ ওভারের পুরো ফায়দা ওঠানো যায়।’

গ্রেটব্যাচের সেই কথার প্রেক্ষিতে লঙ্কান টিম ম্যানেজম্যান্ট ওপেনার হিসেবে সনাথ জয়াসুরিয়া ও রমেশ কালুভিথারানাকে পাঠান৷ আর পিঞ্চ হিটিং তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে দুই ওপেনার প্রতিপক্ষের উপর তান্ডব চালাতে থাকেন। গ্রুপের বাকি দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং উইন্ডিজ ওয়াকওভার দেয়ায় গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় শ্রীলঙ্কা আর সেইখানে বিপক্ষ ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচে ফয়সালাবাদে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৩৫ রান সংগ্রহ করে ইংলিশরা।

ভালো একটা সংগ্রহ কিন্তু ভয়ের বিষয় বিপক্ষ দলে আছে জয়াসুরিয়ার মতো ব্যাটসম্যান। ফলাফল যা হবার তাই হলো, ৪৪ বলে ৮২ রানের ভয়ঙ্কর ইনিংস খেলে ৯ ওভার বাকি রেখে ৬ উইকেটে জয় লাভ করে সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করে শ্রীলঙ্কা।

সেমিফাইনাল, মুখোমুখি আবার ভারতের। কিন্তু এইবার ব্যর্থ তিনি। মাত্র ১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। দল করে ২৫১ রান। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শচীন টেন্ডুলকারের মাস্টারক্লাস ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছে ভারতবাসী। আর এই সুন্দর স্বপ্নে দুঃস্বপ্ন হয়ে হাজির হলো বোলার সনাথ জয়াসুরিয়া। টেন্ডুলকারকে স্ট্যাম্পড আউট করেন তিনি, আর এই উইকেটেই খেলার মোড ঘুরে যায়।

৯৮ রানে ১ উইকেটে থাকা ভারতের স্কোর চোখের পলকেই হয়ে উঠে ১২০ রানে ৮ উইকেট। এই সময় ক্ষেপে উঠে ভারতীয় দর্শকরা ফলে খেলা বন্ধ করে শ্রীলঙ্কাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। সেদিন ব্যাটিংয়ে ঝড় তুলতে না পারলেও বল হাতে নাচিয়ে ছেড়েছেন ভারতীদের। নিয়েছেন তাদের তিন উইকেট৷

ফাইনালে নিজে ছিলেন নিস্প্রভ কিন্তু আরেক ব্যাটসম্যান ডি সিলভার সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা। আর এই চ্যাম্পিয়ন হবার পেছনে অলরাউন্ডিং ভূমিকা রেখেছেন জয়াসুরিয়া৷ ব্যাট হাতে ৬ ম্যাচে ১৩১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২২১ রান আর বল হাতে ৬ উইকেট। আর টুর্নামেন্ট সেরাও হয়েছেন তিনি।

সেই বছর পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও করেন সেঞ্চুরি। তবে তিনি সবচেয়ে বড় চমকটা দেখার ১৯৯৭ সালের কলম্বো টেস্টে ভারতের বিপক্ষে৷ সেই ম্যাচে প্রথম কোনো লঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন তিনি আর সাথে রোশান মহানামার সাথে গড়া ৫৭৬ সাথের জুটি টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি। জয়াসুরিয়ার সেই মহাকাব্যিক ইনিংসে ভর দিয়ে ৬ উইকেটে ৯৫২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা যা এখনো টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ৷

সেই সিরিজের পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১৯৯ রানের ইনিংস। ১৯৯৮ সালে কেনিংসটন ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বোলারদের উপর রোলার কোস্টার চালিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। আর এতেই প্রমাণিত হয় বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে শুধু ওয়ানডে না টেস্টেও সফলতা পাওয়া যায় তবে সেটা ধারাবাহিক হতে হবে যেমনটা হয়েছেন জয়াসুরিয়া।

১৯৯৯ এর বিশ্বকাপ ভালো যায়নি শ্রীলঙ্কার। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাদের। বিশ্বকাপের পর রানাতুঙ্গার পরিবর্তে অধিনায়ক হন জয়াসুরিয়া। ২০০০ সালে অফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টে ১৫৬ বলে খেলেন ১৪৮ রানের ইনিংস। না তিনি অন্য ক্যাপ্টেনদের মতো ক্যাপ্টেন্সি পাওয়ার পর এগ্রেসিভ স্টাইল ছেড়ে ডিফেন্সিভ ব্যাটিং শুরু করেন নি। তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ হারিকেন স্টাইলেই ছিলেন।

ওয়ানডেতে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির কাছেই ছিলেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামার পর শারজায় ভারতের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে থাকেন তিনি। সবাই ভাবলো ডাবল এইবার হয়েই যাবে কিন্তু না গাঙ্গুলির বলে আউট হয়ে ১৮৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।

এরপর আসলো ২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। জয়াসুরিয়ার নেতৃত্বে প্রথম কোনো মেজর ট্রফি খেলতে নামছে শ্রীলঙ্কা। গ্রুপপর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে দলকে সেমিফাইনালে নিয়ে যান তিনি। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪২ রানে ইনিংস ভাইটাল রোল প্লে করে। এবং শ্রীলঙ্কা কোয়ালিফাই করে ফাইনালে। ফাইনালে আবার পুরাতন প্রতিপক্ষ মানে ভারত। কিন্তু বৃষ্টি বাগড়ায় ফাইনাল আর শেষ হয় নি ফলে দুইদলকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

২০০৩ সালো ভিবি সিরিজে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ সেঞ্চুরি করে বেশ ভালো ভাবেই শুরু করেন তিনি। বিশ্বকাপেও এই ফর্ম বহাল ছিল। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১২৫ বলে ১২০ রানের ইনিংস খেলেন। বেশ ভালো শুরু করলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিদায় নিতে হয় তাদের। আর বিশ্বকাপের পরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অনাকাঙ্খিত হারে সেই টুর্নামেন্ট এর ফাইনাল খেলতে পারেনি। আর এরপরেই তিনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে আসেন।

অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন, কিন্তু ছাড়েননি নিজের ঐতিহ্য। ২০০৪ এশিয়া কাপে দুই সেঞ্চুরিতে ২৯৩ রান করে দলকে শিরোপা জিতান এবং হন টুর্নামেন্ট সেরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ফয়সালাবাদে করেন নিজের তৃতীয় টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি।

২০০৫ সালে ব্যর্থ তিনি। কিন্তু ২০০৬ এ সেটা পুরো পুষিয়ে নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের সিরিজে তাণ্ডব। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বোলারদের উপর ঝড় চালান তিনি। চার ম্যাচ হেরে শেষ ম্যাচে ইংলিশরা সম্মান রক্ষার ম্যাচ খেলতে নামে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩২১ রান করে তারা ভেবেছিলো অন্তত এইটা জিততে পারবে। কিন্তু না বিপক্ষ দলে যেহেতে জয়াসুরিয়া আছে তাহলে সেই স্বপ্ন দেখাও পাপ।

থারাঙ্গাকে সাথে নিয়ে ইংল্যান্ড বোলিং লাইন আপ নিয়ে রীতিমতো ছিনিমিনি খেলেন তিনি। ৩১ ওভারেই ২৮০ রান তুলে এই জুটি। থারাঙ্গা ধীরস্থির ভাবে সেঞ্চুরি করলেও রীতিমতো দানবের আসনে ছিলেন এই জয়াসুরিয়া খেলেন ৯৯ বলে ১৫২ রানের ইনিংস। আর মাত্র ৩৮ ওভারের ৩২১ এর বাঁধা উতরে যায় শ্রীলঙ্কা।

২০০৭ বিশ্বকাপ, জয়াসুরিয়ার শেষ বিশ্বকাপ। পুরো বিশ্বকাপে করেন দুইটা সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কাও বেশ ভালো খেলছে। ফলাফল স্বরুপ ফাইনালে যায় শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া। বৃষ্টির কারণে খেলা নেমে আসে ৩৮ ওভারে। এই ৩৮ ওভারে এডাম গিলক্রিস্টের ভয়ানক ব্যাটিংয়ে ভর দিয়ে ২৮১ রান করে অজিরা। বেশ ভালোই জবাব দিচ্ছিলো শ্রীলঙ্কানরা। কিন্তু জয়াসুরিয়া ব্যাক্তিগত ৬০ রানে আউট হলে থেমে যায় লঙ্কান ইনিংস। ৫৩ রানে পরাজিত হয়ে রানারআপ হয় লঙ্কানরা।

২০০৭ এ সাদা পোশাকে নিজের শেষ ম্যাচে অ্যান্ডারসনের ৬ বলে ৬টা চার মেরে নিজের তান্ডবের জানান দেন। প্রথম ইনিংসে ৯৩ রানে পিছিয়ে থাকার পরেও সেই টেস্ট শ্রীলঙ্কা জিতে নেয়৷ টেস্ট ক্যারিয়ার শেষে তার পরিসংখ্যান রীতিমতো ঈর্ষণীয়। ১১০ ম্যাচ খেলে ৪০ গড়ে করেন ৬৯৭৩।

২০১১ সালে তাকে শ্রীলঙ্কা দলের নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, আর সেই আমন্ত্রণ তিনি গ্রহণ করে তিনি জানান দেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেই তিনি অবসরে যাবেন। কিন্তু তার শেষ টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে কোনটিই ট্রেডমার্ক জয়াসুরিয়া স্টাইলে হয় নি। শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৮ রান আর ওয়ানডে ২ রান। ৪৪৫টি ওয়ানডেতে ৩২.১৩ গড়ে ১৩৪৩০ রান। যদি প্রথম থেকেই তিনি ওপেনিংয়ে খেলতেন তাহলে স্ট্যাটসটা হয়তো ভিন্ন হতো।

গ্রেটদের গ্রেটনেস মাপার জন্য পরিসংখ্যান দরকার নেই। তাঁদের স্টাইলই তাদের গ্রেটনেসের পরিচয়। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সাথে বাঁ-হাতি বোলিং মিলিয়ে বিপক্ষ দলকে নাস্তানাবুদ করার মাধ্যমে তার উত্থান হয়েছিল। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অন্য পর্যায়ে। যার বিরুদ্ধে বোলিং করার সময় হাঁটু কাপতো বোলারদের। আর তাই হয়তোবা শচীন টেন্ডুলকার বলেছেন, ‘আমি ডন ব্র্যাডমানকে দেখিনি, তবে সনাথ জয়াসুরিয়াকে দেখেছি। আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যানদের মাঝে সে অন্যতম।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...