অদ্ভুত খোলা একটা স্টান্সে তিনি ক্রিজে দাঁড়ান। দূর থেকে দেখলে অনেকটা শিবনারায়ন চন্দরপল বলে মনে হয়। ক্রিকেট রোমান্টিকতায় শুধু ব্যাটিংয়ের কথা চিন্তা করলে তাঁকে নিয়ে আগ্রহের জায়গা ওইটুকুই। ব্যাটিং সৌন্দর্য্য সেরকম নেই। কিন্তু বিধাতা পাকিস্তানের বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলমের জন্য বরাদ্দ রেখেছিলেন চূড়ান্ত আগ্রহের এক গল্প, যেটা অনেক বছর চর্চিত হবে!
অনেক বছরের বঞ্চনা ফাওয়াদ আলমের সাথে! ২০০৯ এর অভিষেকেই সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন। তবুও মাত্র তিন টেস্ট খেলেই বাদ পড়াটা ছিল অবিচার! এরপর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেছে। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। একের পর এক সেঞ্চুরি করেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গড় ছিল ৫৭। কিন্তু মহসিন খান, ইনজামাম উল হক – কোন নির্বাচক প্যানেলের সুনজরে পড়েননি!
কিন্তু, লড়াইটা বন্ধ করেননি ফাহাদ। ফলাফল, ভাগ্য সহায় হয়েছিল একটা পর্যায়ে এসে। প্রায় ১১ বছর আর ৮৮ টেস্ট পরে দলে ফিরেছিলেন! ফিরে আবার শূন্য! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফাওয়াদকে দিয়ে চলে না, তার সেই টেম্পারামেন্ট নাই। ফেরার পরে মাত্র দুই টেস্টের ব্যর্থতায় আবার সেই কথা উঠে গিয়েছিলো।
কিন্তু ফাওয়াদ নিজের জাত চেনানোর জন্য বেছে নিলেন দলের সবচেয়ে বিপদের সময়কেই!
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে শেষদিনে আরও দরকার ছিল ৩০২ রান। হাতে মাত্র ৭ উইকেট! জেতার চিন্তা পরে, আগে টেস্ট বাঁচানোর চিন্তা। সকালেই আজহার আলী আউট হয়ে গেলেন! ফাওয়াদের উপর দায়িত্ব ভারী হলো।
ধৈর্য্য আর এতো বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এতো বছরের বঞ্চনার জবাব, নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ- সব মিলেই যেন চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার সাথে ফাওয়াদ আলম ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। ফাওয়াদ ১০২ রান করে বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু, লড়াইয়ের বার্তা তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন তা অনবদ্য।
অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে এখনও পাকিস্তানের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। শেষ এক ঘণ্টা-আধা ঘণ্টা টেস্টটা আরও কী রঙ দেখাবে সেটা সময়ই বলবে! পাকিস্তান তাদের অনিশ্চয়তার রঙ আবারও দেখিয়ে হেরেও যেতে পারে।
তবে আক্ষরিক অর্থে গ্ল্যামারাস রাজসিক প্রত্যাবর্তন এটি নয়, ফাওয়াদের জীবন কাহিনীর সাথে যেটি মিলতো সেই পরিস্থিতির বিচারে ফাওয়াদের প্রত্যাবর্তন হলো বুক উঁচু করে সংগ্রাম জয়ের ভঙ্গিতেই! পোয়েটিক জাস্টিসের অদ্ভুত আর চুড়ান্ততম উদাহরণ টেস্ট ক্রিকেট ফাওয়াদের ধৈর্য্য আর পরাকাষ্ঠা দেখার দিনের অপেক্ষাতেই ছিলো।
১১ বছর পরে টেস্ট দলে ফিরে এসে দলকে রক্ষা চেষ্টার এই রূপকথার গল্প শুধুই তাই সংগ্রামী ফাওয়াদ আলমের!