অধিনায়ক এবং কোচের ন্যায় ক্রিকেটে নির্বাচকের ভূমিকাও কম নয়। জাতীয় দলের জন্য প্রতিভাবান ক্রিকেটার তুলে আনা ছাড়াও, অপেক্ষাকৃত তরুণদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি করতে হয় তাঁদের। তাঁদের সিদ্ধান্তগুলোই বদলে দেয় কোনো দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। আসুন দেখে নেয়া যাক, ভারতের ইতিহাসের পাঁচ নির্বাচককে যারা ব্যর্থ হয়েছিলেন নিজেদের দায়িত্ব পালনে।
- এমএসকে প্রসাদ
২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভারত জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন এমএসকে প্রসাদ। তাঁর সময়কালে ভারত কোনো আইসিসি ট্রফি জেতা তো দূর, কয়েকবার তো সেমিফাইনাল কিংবা ফাইনালেই উঠতে পারেনি।
এমএসকে প্রসাদ তাঁর সময়কালে বেশ কিছু বাজে সিদ্ধান্তের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। যেমন যুবরাজ সিংকে টি-টোয়েন্টিতে দলে না ডাকা, সুরেশ রায়নাকে উপেক্ষা করা। এমন কি ২০১৯ বিশ্বকাপে আম্বাতি রাইডুকে না নিয়ে স্কোয়াডে রাখেন বিজয় শংকরকে যে সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়।
- দিলীপ ভেঙসরকার
২০০৬ সালে ভারত জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে নিযুক্ত হন দিলীপ ভেংসরকার। তাঁর দায়িত্ব প্রাপ্তির এক বছর বাদেই ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারত তাঁদের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফলাফল করে। গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় তো বটেই, বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ হেরে জন্ম দেয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা অঘটনের।
গোটা বিশ্বের জন্যই সেটা ছিল বিস্ময়ের, কারণ এর আগের বিশ্বকাপেই ভারত ফাইনাল খেলেছিল। ভারত দলে সেসময় অনেক বেশি সিনিয়র এবং বয়স্ক খেলোয়াড় ছিল। যদিও পরবর্তীতে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত তরুণ এক দল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নেয়। তবে ২০০৭ বিশ্বকাপের জন্য শক্তিশালী দল গড়তে না পারার ব্যর্থতার দায় বর্তায় দিলীপ ভেংসরকারের কাঁধেই।
- সন্দীপ পাতিল
২০১২ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ভারত জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন সন্দ্বীপ পাতিল। তাঁর সময়কালেই ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে ভারত। কিন্তু তাঁর অধীনে থাকাকালীন সময়েই আইসিসি ট্রফিতে ভারতের বাজে পারফরম্যান্সের ধারা শুরু হয়।
তাঁর অধীনেই ২০১২ এবং ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৫ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে যায় ভারত। কিন্তু কোনো টুর্নামেন্টেই জিততে পারেনি দলটি।
- মহিন্দর অমরনাথ
২০১১ সালে ভারত জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক নিযুক্ত হন মহিন্দর অমরনাথ। যদিও এক বছর বাদেই বিসিসিআই তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। তাঁর বিসিসিআই বিরোধী খোলামেলা কথাবার্তার কারণেই মূলত তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়াতে সিরিজ হারের পর তিনিই মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন। এছাড়া তাঁর নিজের রাজ্য উত্তরাঞ্চলের সমর্থনও পাননি এই তারকা।
- চেতন শর্মা
২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক ছিলেন চেতন শর্মা। কোনো সন্দেহ ছাড়াই ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচক ছিলেন তিনি। গত মাসেই সংবাদমাধ্যমে তাঁর উপর চালানো এক স্ট্রিং অপারেশন ফাঁস হয়, যেখানে বিসিসিআই এবং ভারতীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে বিতর্কিত সব মন্তব্য করেন এই নির্বাচক।
বিগত দুই বছরে ভারতীয় দল নির্বাচন নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন চেতন শর্মা। তাঁর সময়েই ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় ভারত। এছাড়া শিরোপা জেতার দাবিদার হলেও ২০২১ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়। গত মাসে তাঁর বিতর্কিত কথাবার্তার জেরে বরখাস্ত হন চেতন শর্মা।