চার বছর আগের এক ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফাইনালে তাঁর জন্য মহেন্দ্র সিং ধোনির স্বপ্ন চুরমার হয়েছিল। শ্বাসরুদ্ধ সেই ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে জেতার জন্য শেষ বলে চেন্নাই সুপার কিংসের দরকার ছিল মাত্র দু’রান।
সেই রান শার্দুল ঠাকুর করতে না পারায় ধোনির দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় রোহিত শর্মার মুম্বাই। শার্দুল এখন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। গতকাল ইডেনে আরসিবির বিরুদ্ধে তিনটি পেল্লাই ছক্কা মারেন। ২৯ বলে ৬৮ রানের ইনিংস দেখতে দেখতে অনেকেই হয়তো ভাবছিলেন এ কী দেখছি! যা দেখছি তা কি সত্যি!
শার্দুল ঠাকুর বড় ছক্কা হাঁকাতে পারেন। সেই ছেলেবেলা থেকেই। হ্যারিস শিল্ডের ম্যাচে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড বইয়ের পাতায় নাম তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু আইপিএল ফাইনালে মোক্ষম সময়ে তাঁর ব্যাট বোবা থেকে যায়।
ব্যর্থতার আরও আখ্যান রয়েছে। খেলার মাঠে একাধিক বার বিপর্যয় সঙ্গী হয়েছে শার্দুলের। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে মাত্র ১০ বল করার পরেই কুঁচকির চোটে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে।
তারও বছর খানেক আগে শচীন টেন্ডুলকরের ১০ নম্বর জার্সি পরে খেলতে নেমে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। রোহিত শর্মার কোচ দীনেশ লাড শার্দুলেরও কোচ। মারাত্মক জোরে বল করার জন্য ছোট বয়সেই দীনেশ লাডের নজরে পড়ে যান শার্দুল।
মুম্বাইয়ের স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলের বিরুদ্ধে খেলা ছিল তারাপুর বিদ্যামন্দিরের। শার্দুল ছিল তারাপুর বিদ্যামন্দিরের ক্লাস নাইনের ছাত্র। শার্দুল ৭০ রান করেছিলেন। আর বল হাতে পাঁচটা উইকেট নিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচটা হেরে যায় শার্দুলরা।
পালঘরে থাকতেন শার্দুল। ট্রেনে করে মুম্বই আসতে ঘণ্টা তিনেক সময় লাগত। শার্দুলকে নিজের বাড়িতে এনে রাখেন দীনেশ। তাঁর স্ত্রী প্রথমটায় রাজি হননি। পরে সম্মতি দেন। বিবেকানন্দ স্কুলের হয়ে হ্যারিস শিল্ডের এক ম্যাচে রাধাকৃষ্ণণ স্কুলের বাঁ-হাতি স্পিনার বিশাল ধ্রুবকে এক ওভারে ছ’টি ছক্কা মেরেছিলেন। সেই ম্যাচে ৭৩ বলে ১৬০ রান করেছিলেন শার্দুল।
চোট, ধেয়ে আসা সমালোচনার ঝড়, ব্যর্থতা কাটিয়ে বার বার মাঠে ফিরে এসেছেন শার্দুল। এবার যেমন ইডেনে শার্দুলের ব্যাট কথা বলল। হারতে থাকা ম্যাচে শার্দুল আর রিঙ্কু প্রাণ আনলেন। বল করে উইকেটও নিলেন ঠাকুর। রিঙ্কু বলছিলেন, ‘ঠাকুর ভাই ভাল বল কানেক্ট করছিল, তাই ওকে স্ট্রাইক দিচ্ছিলাম।’ ক্রিকেট যেমন কাঁদায়, তেমনই কিন্তু হাসায়।