চার নদীর অথৈ মোহনা

পরম আরাধ্য জাতীয় দলের দরজা। স্বপ্ন ওই লাল সবুজ জার্সি। সেই স্বপ্নটা একটা সময়ে এসে পূরণ করেছেন অনেকে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয় এবং আফিফ হোসেনরাও রয়েছেন সেই তালিকায়। তবে এক মোহনায় মিলিত হয়েছেন এরা সকলে। কেউ আজ নেই জাতীয় দলে।

এটা সত্য যে, নেই। তবে এটাও সত্য যে ফিরে আসার দ্বার একেবারেই অবরুদ্ধ না। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সে দ্বার যে সংকীর্ণ সেটাও এক বাস্তবতা। তবুও সব কিছু পেছনে ফেলে ক্রিকেটটাকে উপভোগ করাটাও তো বেঁচে থাকার নতুন দুয়ার খুলে দেয়। সে কাজটাই  যেন করছেন ইমরুল, রিয়াদ, বিজয়, আফিফরা।

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের মঞ্চে এরা সবাই রয়েছেন রানের মধ্যে। সবার ব্যাট থেকেই রান আসছে প্রতিনিয়ত। এদিক থেকে সবার উপরে অবস্থান এনামুল হক বিজয়ের। গেলবার ডিপিএলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটে লিস্ট এ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রানের মালিকও বনে গিয়েছিলেন ডান-হাতি এই ব্যাটার।

এরপর তিনি জাতীয় দলের সুযোগ পেয়েছিলেন ঠিক। তবে তাঁর পছন্দের ফরম্যাটে নয়। যে ফরম্যাটে তিনি রেকর্ড গড়েছেন সেই ফরম্যাটে খুব বেশি সুযোগ মেলেনি এনামুল বিজয়ের। অগ্যতা অন্য ফরম্যাট বিবেচনায় তিনি রয়ে গেছেন দলের বাইরে। তবে ধারাবাহিক রান প্রবাহ অব্যাহত রাখলে তিনি নিশ্চয়ই আবারও সুযোগ পাবেন। সেক্ষেত্রে জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের ওপেনার তামিম ইকবালকেই বরং চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন তিনি।

কেননা তামিমের যে সময় ফুরাবার পথে। সেই ফুরিয়ে যাওয়া সময়ের সুযোগটা লুফে নিতে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন আরও একজন। তিনি ইমরুল কায়েস। এইতো মোহামেডানের জার্সি গায়ে সিটি ক্লাবের বিপক্ষে পেয়ে গেলেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ জাতীয় দলে বহু ম্যাচ জয়ের নিরব কাণ্ডারি ইমরুল। তবে তিনি বরাবরই  ব্রাত্য। শেষ একটা সুযোগের আসায় হয়ত রান ফোয়ারা ছড়িয়ে যাচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।

সেই শেষ সুযোগের অপেক্ষা করছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলে তিনি হয়ত বিদায় নিতে চেয়েছিলেন জাতীয় দল থেকে। তবে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক পারফরমেন্স তাঁর কাছে থাকা সহজ সুযোগটুকু একপ্রকার কেড়ে নিয়েছে। নিজেকে তাই প্রমাণ করতে মরিয়া রিয়াদ। পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ দলে জায়গা পেতে ডিপিএলই আদর্শ প্রমাণের মঞ্চ।

সেটাকে আদর্শ মেনে এগিয়ে চলছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। বাংলাদেশের বর্তমান হেড কোচ চাণ্ডিকা হাতুরুসিংহে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, নিজেকে প্রমাণ করে আফিফকে ফিরতে হবে জাতীয় দলে। আফিফ সেই কাজেই যেন দিয়েছেন নিজের মনোযোগ। তিনি মূলত মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে স্বস্তি পান। কিন্তু জাতীয় দলে তাঁর রোলটা ভিন্ন। সে রোলে খুব একটা মানিয়ে নিতে পারছেন না আফিফ। গোলযোগ সেখানেই।

জাতীয় দলের টপ-অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার মোটামুটি নির্ধারিত। বলা চলে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটিং অর্ডারই রয়েছে বর্তমান বাংলাদেশের। তাওহীদ হৃদয় দলের ভারসাম্য আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকে নিজেকে পরিণত হওয়ার প্রমাণ রেখেছেন। তাই তো মিডল অর্ডারে রদবদল আসা কঠিন।

আফিফকে তাই ফিনিশার রোলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। অথবা চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স করে মিডল অর্ডারে নিজের একটা জায়গা তৈরি করে নিতে হবে। অন্যদিকে, এনামুল বিজয় আর ইমরুল কায়েসের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খুব সহসাই পূরণ হওয়ার সুযোগ ক্ষীণ। জাতীয় দলে ওপেনার হিসেবে তামিম ইকবাল অনড়। কেননা তিনি তো ওয়ানডে ফরম্যাটের অধিনায়ক। অন্যদিকে, তাঁর সঙ্গী হিসেবে লিটন দাস নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

তাছাড়া তিন নম্বর পজিশনে নাজমুল হোসেন শান্ত অবশেষে দ্যুতি ছড়াতে শুরু করেছেন। তাইতো টপ অর্ডারে ইমরুল কিংবা বিজয় জায়গা করে নিতে চাইলে কাঠখড় পোড়াতে হবে দ্বিগুণের বেশি। রইলো বাকি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাঁর জাতীয় দলে ফেরার রাস্তা এক প্রকার অবরুদ্ধই বলা চলে। বয়স বেড়েছে। সেই সাথে কমেছে স্ট্যামিনা আর ফ্লেক্সিবিলিটি। সব মিলিয়ে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে রিয়াদের শূন্যস্থান বলে কিছু নেই।

ব্যাটিং পজিশনে তাঁর জায়গাটা নিজের আয়ত্ত্বে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এখন দ্রুতগতিতে রান করছেন মুশফিক, আস্থার স্তম্ভ হয়েই ছিলেন তিনি বহু আগে থেকেই। তাই রিয়াদ হয়ত এই ডিপিএলকে নিজের ক্রিকেট খেলার ক্ষুধা নিবারণ হিসেবে কাজে লাগিয়ে রান করে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে একটা বিষয় না বললেই নয় যে – ক্রিকেট বেশ অনিশ্চিত একটা গন্তব্যের নাম। তাইতো খেলোয়াড়দের ভাগ্য খুলে যাওয়াও বেশ অনিশ্চিত। যেকোন সময়, ঘটে যেতে পারে যেকোন কিছু। তাইতো রানের অবারিত ধারা প্রবাহিত হতে থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link