ইয়াশ, এখানেই পৃথিবীর শেষ নয়!

শেষ ওভারে প্রতিপক্ষের প্রয়োজন ২৯ রান। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটা চাপমুক্ত ভাবেই বোলিং করার কথা শেষ ওভার করতে আসা বোলারের। কিন্তু গুজরাট টাইটান্সের পেসার ইয়াশ দয়াল যেন বোলিংটা করতেই ভুলে গেলেন। রিঙ্কু সিংকে টানা তিনটি বলই করলেন ফুলটস। শেষ দুটো বলও ছিলো খুবই বাজে। অবিশ্বাস্য ভাবে শেষ পাঁচ বলে ছক্কা মেরে কলকাতাকে ম্যাচ জিতিয়ে নায়ক রিঙ্কু সিং। অন্যদিকে শুধু যেন অবিশ্বাসের চোখ নিয়ে রিঙ্কুর উদযাপনের দিকে চেয়ে রইলেন ইয়াশ।

ইয়াশ দয়ালের বাবা চন্দরপল দয়াল আবার এখন সাবেক ক্রিকেটার। খেলেছেন ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে। চন্দরপল দয়ালের নিয়মিত দিন শুরু হতো দৈনিক পত্রিকা পড়ার মাধ্যমে। তবে সোমবারের দিনটা যেন তাঁর জন্য একটু ব্যতিক্রম। এদিন তিনি পত্রিকা খুললেন না। যদি আবার ছেলের সেই কান্নাভরা মুখটা পত্রিকায় দেখতে হয়। ইয়াশের শেষ বলটায় রিঙ্কু সিং ছয় মারার পরই টেলিভিশনের সামনে থেকে উঠে যান ইয়াশের বাবা। ছেলের ওই ভয়ানক মুখটা দেখতেও যেন কষ্ট হবে বাবা চন্দরপলের।

এমনিতে নিজের আবেগ খুব একটা প্রকাশ করেন না ইয়াশ। বাবা চন্দরপলও জানতেন সেটা। কিন্তু ছেলে শেষ বলটা করার পরেই টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া বাবা চন্দরপল দয়াল তাঁর আত্নীয়স্বজনদের কাছ থেকে শুনলেন ছেলে ইয়াশের কান্নার কথা। তবে নিজে ছেলের সাথে কথা বলবার সাহসটুকু পাননি বাবা চন্দরপল৷ তাঁর পরিবারের বাকি সদস্যদের বললেন তারা নিজে ইয়াশকে শান্তনা দেয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চন্দরপল দয়াল বলেন, ‘আমি তাদের বলি তারা যেন ইয়াশকে অনুপ্রেরণা দেয়। মনোবলকে জাগিয়ে তোলে। স্বাভাবিকভাবেই ইয়াশ অনেক ভেঙে পড়েছিলো। সে খুব কম কথা বলে এবং সে একজন ইন্ট্রোভার্ট।’

চন্দরপল আরো বলেন, ‘আমি একজন ক্রিকেটার ছিলাম কিন্তু বাবা-মা হবার বিষয়টি আলাদা। আমিও কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো, কেন এমন হলো? কিভাবে হলো? আমার সন্তানের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছিলো।’

সেই মূহুর্তেই চন্দরপল সিদ্ধান্ত নিলেন এই কঠিন সময়ে ছেলে ইয়াশের পাশে থাকার। ইয়াশের দল গুজরাটের পরের ম্যাচটি মাঠে বসে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন।

এরপরই ছেলেকে ফোন করলেন বাবা। সাহস যোগানোর চেষ্টা করলেন ছেলেকে। চন্দরপল ইয়াশকে বললেন, ‘ভয় পেয়োনা। ক্রিকেটে এটা নতুন নয় যে বোলাররা মার খাবে। বড় বড় বোলারদের সাথেও এমনটা হয়েছে। শুধু পরিশ্রম করে যাও। খুঁজে বের করো যে কোথায় ভুল হচ্ছে। কিন্তু মনে রেখো এটাই প্রথমবার ক্রিকেটে ঘটেছে এমনটা নয়। মালিঙ্গা, স্টুয়ার্ট ব্রডদের মত বড় বোলারদের সাথেও এমনটা ঘটেছে।’

ছেলের মত বাবা চন্দরপলও ছিলেন পেস বোলার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভিজ্জি ট্রফিতে খেলার সময় একবার তিন বলে তিনটি ছক্কা হজম করে বসেন চন্দরপল। ছেলেকে শুনিয়েছেন সেই স্মৃতিও। সেই কথাই বলছিলেন গণমাধ্যমকে, ‘সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিলো সেটি।আইপিএলের মত বড় আসর ছিলো না সেটি। তবুও সাধারণ মানের এক ব্যাটসম্যান আমাকে তিনটি ছক্কা মেরে বসল। আমি ইয়াশকে সেই গল্প অনেকবার বলেছি। সেই ম্যাচে আমরা হেরে যাই। গত রাতে ইয়াশের সাথে কথা বলার সময় আমি বারবার সেই ম্যাচের কথা বলছিলাম তাকে।’

ছেলেকে শান্তনা দিতে চেষ্টার কমতি নেই বাবা চন্দরপলের। তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলেছি আমি তোমার কাছে আসছি। আমি তোমার সাথে থাকব। আমি জানি ও ফিরে আসবে। এটা একটা কালো রাত ছিলো। আশা করি এমন দিন ওর জীবনে আর আসবে না। সে আরো শক্তিশালী হয়েই ফিরবে।’

অ্যাথলেটদের জীবনে এমন কঠিন সময় আসবেই। কিন্তু জীবনের এমন কঠিন সময়ে যখন তারা পান পরিবারের সাপোর্ট তখন সবকিছু যেন সহজ হয়ে যায় তাদের জন্য। পাঁচ ছক্কা হজম করে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ইয়াশ দয়াল পাশেই পাচ্ছেন বাবাকে। বাবার অনুপ্রেরণায় হয়তো আরো দুর্দান্ত বোলার হয়েই মাঠে ফিরবেন ইয়াশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link