ক্রিকেট দুনিয়ার চারিপাশে যেন জুয়ারিদের আনাগোনা। বিশেষ করে বড় সব টুর্নামেন্টকে ঘিরে জুয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা। ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল) ঘিরে জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলে পুরো বিশ্বজুড়ে। এ যেন রীতিমত ‘ওপেন সিক্রেট’। এবার তেমনই এক জুয়ারি সরাসরি যোগাযোগ করেছেন মোহাম্মদ সিরাজের সাথে।
মোহাম্মদ সিরাজ, ভারত জাতীয় দলের একজন সদস্য। তাছাড়া এবারের আইপিএলে তিনি খেলছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে। রয়েছেন দারুণ ফর্মে। পাঁচ ম্যাচে নিয়েছেন আট উইকেট। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই খেলোয়াড়ের কাছে ফোন এসেছে এক জুয়ারির।
তবে খুব বেশি কালক্ষেপণ না করে তিনি তা দ্রুতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। ফোন কল আসার সাথে সাথে তিনি বিষয়টি বিসিসিআই অধীনস্থ ‘অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট’ -কে অবহিত করেছেন। মূলত সেই জুয়ারি ব্যাঙ্গালুরু দলের ভেতরের খবরাখবর জানতে চেয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজের কাছে। তবে সেসব বিষয়ে কোন ধরণের তথ্য প্রকাশ করার আগেই সিরাজ বিষয়টি এসিইউ-কে জানিয়েছেন।
তবে মজার বিষয় হল, ফোন করা ব্যক্তি পেশাদার ম্যাচ ফিক্সার নন। তিনি একজন গাড়ি চালক। আইপিএলকে কেন্দ্র করে তিনি জুয়ায় অংশ নিয়েছেন। সেখানে প্রচুর পরিমাণে লোকসানের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। নিজের সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতেই ভেতরের তথ্যের সন্ধান করছিলেন হায়দ্রাবাদের সেই গাড়ি চালক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিসিসিআই প্রতিনিধি ভারতীয় এক সংবাদ সংস্থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিরাজের সাথে যোগযোগ করা ব্যক্তি কোন বাজিকর ছিলেন না। সে ম্যাচ চলাকালীন জুয়ায় আসক্ত হায়দ্রাবাদের একজন গাড়ি চালক। সে প্রচুর অর্থ লোকসান করেছেন এবং সিরাজকে ভেতরের খবর পেতে ফোন করেছেন। সিরাজ এই ঘটনা দ্রুতই জানিয়ে দেয়। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দোষীকে ধরে ফেলেছে।’
এর আগেও বহুবার আইপিএলকে ঘিরে ধরেছিল বাজিকরদের কালো থাবা। এস শ্রীশান্তসহ অনেক ক্রিকেটারকে গ্রেফতার করা হয় স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে। সে সাথে চেন্নাই সুপার কিংসের সাবেক প্রধান গুরুনাথ মায়াপ্পানও একই পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন।
এরপর থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) ও আইপিএল গভর্নিং বডি বেশ সচেষ্ট দুর্নীতির বিরুদ্ধে। সেই জন্যেই আইপিএলের প্রতিটি দলের সাথে একজন করে এসিইউ সদস্য থাকেন। তারা ক্রিকেটারদের সাথে একই হোটেলে থেকে সকল ধরণের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন।
এর আগে ২০২১ সালে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। তিনি আইপিএল চলাকালীন সময়ে তার সাথে বাজিকরের যোগাযোগ করার বিষয়টি চেপে যান। যদিও তিনি কোন ধরণের ফিক্সিংয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন না। তবুও তথ্য চেপে যাওয়ার কারণে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়।
এই একই রকম ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাননি সিরাজ। তাইতো তিনি সময়মত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন। এমনকি অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পেরেছে বিসিসিআই।