এক দশক আগে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল হংকং। যদিও পরের সময়টাতে এগোয়নি হংকং ক্রিকেট, চমকটা আর ধারাবাহিকতায় রূপ নেয়নি। তবে এগিয়েছেন সেদিনের উনিশ বছরের তরুণ মার্ক চাপম্যান। হংকং ছেড়ে নিবাস গড়েছেন নিউজিল্যান্ডে, জানান দিচ্ছেন নিজের প্রতিভার।
চাপম্যানের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা হংকংয়ের হয়েই। ছোটদের বিশ্বকাপ খেলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন সহযোগী দেশটির হয়ে। নিজের অভিষেক ওয়ানডেতেই ১১৬ বলে ১২৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে চমকে দিয়েছিলেন গোটা বিশ্বকে। তাঁর দারুণ ব্যাটিংয়ের সুবাদেই দেশটি স্বপ্ন দেখছিলো ক্রিকেটের বড় মঞ্চে আলো ছড়ানোর। কিন্তু চাপম্যানের চোখে ছিল রঙিন স্বপ্ন, তিনি জানতেন টেস্ট ক্রিকেটের স্বাদ পেতে চাইলে হংকং ছাড়তে হবে তাঁকে।
জানতেন বাবার সুবাদে নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ আছে তাঁর। সেই সুযোগটা দুহাত ভরে গ্রহণ করলেন, পাড়ি জমালেন জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ের উদ্দেশ্যে। ২০১৫ মৌসুমেই অকল্যান্ডের হয়ে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে নাম লেখান চাপম্যান। কিন্তু জীবনের এই অধ্যায়ের শুরুতেই ধাক্কা খান এই তরুণ, নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেতেই কেটে যায় তিন বছর।
এই তিন বছরে বহুবার দল থেকে বাদ পড়েছেন। দলের বাকিরা যখন ম্যাচ খেলেছেন, তখন একটিমাত্র সুযোগের অপেক্ষায় মাথা কুটে মরেছেন চাপম্যান। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে গেছেন প্রতিনিয়ত। আধুনিক ক্রিকেটের সাথে তাল মেলাতে নিজের শটে বৈচিত্র্য এনেছেন। ক্যান্টাবুরির বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এরপর নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে রীতিমতো রানবন্যা বইয়ে দিয়েছেন এই তারকা। ফোর্ড ট্রফি কিংবা প্ল্যাংকেট শিল্ড, সকল ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায় উপরের দিকেই ছিল তাঁর নাম। ফলে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলে ডাক পেতেও সময় লাগেনি। ২০১৮ সালে অভিষেক হলেও জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন গত কয়েক বছর, নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি মোটেই। অবশ্য তারকাবহুল কিউই দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পাওয়াও অন্যতম কারণ ছিল রান না পাবার পেছনে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কেন উইলিয়ামসনের ইনজুরি, রস টেলরের অবসর কিংবা ফ্যাঞ্চাইজি লিগের সুবাদে তারকা খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতির সুবাদে, টি টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের ভরসার এক নাম চাপম্যান। দলের বিপদেই যেন নিজের সেরাটা খেলতে ভালোবাসেন এই তারকা, ক্রমেই কিউই মিডল অর্ডারে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ভরসার নাম হিসেবে।
পাকিস্থানের বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরুন না! সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭৩ রানেই চার উইকেট হারিয়ে বসে কিউইরা। ততক্ষণে পেরিয়ে গেছে ম্যাচের অর্ধেক, অন্য কেউ হলে হয়তো সম্মানজনক হারের পথেই এগোতো। কিন্তু চাপম্যান যেন অন্য ধাতুতে গড়া, পরের এক ঘন্টায় হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদিদের উপর যেন ঝড় বইয়ে দিলেন। ১১ চার এবং চার ছক্কায় ৫৭ বলে অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস খেলে চার বল বাকি থাকতেই জিতিয়ে ফিরেছেন দলকে। অথচ ছোটখাটো গড়নের চাপম্যানকে দেখে কে বলবেন এই ভদ্রলোক নির্দ্বিধায় বড় বড় সব ছক্কা হাঁকান বিশ্বসেরা বোলারদের!
কিউই ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মের ক্রমেই বিদায় জানাচ্ছে ক্রিকেটকে। ফর্মটা তাই ধরে রাখতে পারলে মার্ক চাপম্যানই হয়তো বনে যাবেন কিউই ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রতিনিধি।