এ বছরের শেষদিকেই ভারতের মাটিতে বসবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তাই নিজেদের দল গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত প্রতিটি দলই। বিশ্বকাপে অংশ না নেয়া কিংবা কোচ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ঠিকই নিজেদের স্কোয়াড গুছিয়ে নেবার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে পাকিস্তান।
ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইতোমধ্যেই ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে বাবর আজমের দল। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ জিতলেই আইসিসি ওয়ানডে রায়ংকিংয়ের এক নম্বরে উঠবে দলটি। সিরিজের পুরোটা জুড়েই অপ্রতিরোধ্য ছিল স্বাগতিকরা, কোনো ম্যাচেই বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে দেয়নি কিউইদের।
সেই পুরনো দিনগুলো থেকেই টপ অর্ডার পাকিস্তানের জন্য দুশ্চিন্তার এক নাম। অথচ এবারের আসরে বিশ্বের সেরা টপ অর্ডার নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে পাকিস্তান । ফখর জামান, ইমাম উল হক এবং বাবর আজম তিনজনেই ওয়ানডেতে আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।
বাবর এবং ফখরের ব্যাটিং গড় পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে বেশ আগেই, অন্যদিকে ৪৯ গড় নিয়ে ইমামও আছেন সেই পথেই। আইসিসি ওয়ানডে ব্যাটসম্যান র্যাংকিংয়ের সেরা পাঁচের তিনজনই পাকিস্তানের।
ইমাম কিংবা বাবরের বড় ইনিংস খেলার দক্ষতা প্রশ্নাতীত হলেও তাঁদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেদের ব্যাটিং স্টাইলে পরিবর্তন এনেছেন এই দুই তারকা। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেই আগের তুলনায় আক্রমণাত্নক ব্যাটিং করেছেন এই দুজন। অন্যদিকে ফখর জামান তো ইনিংসের শুরু থেকেই মারকুটে ভঙ্গিমায় ব্যাট করতে পছন্দ করেন।
পাকিস্তানের টপ অর্ডারের দুরন্ত ফর্মের কারণেই কিনা মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো ব্যাটারকে ব্যাট করতে হচ্ছে মিডল অর্ডারে। অথচ টি টোয়েন্টিতে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দুয়ে থাকা রিজওয়ান বিশ্বের যেকোনো দলেই টপ অর্ডারে সুযোগ পাবার যোগ্যতা রাখেন। নিজের দিনে একাই ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেবার ক্ষমতা রাখেন এই তারকা।
ইফতিখার আহমেদ কিংবা আগা সালমানরাও ধীরে ধীরে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে অলরাউন্ডার সালমানের যেন পুর্নজন্ম ঘটেছে কিউইদের বিপক্ষে সিরিজে। কেবল স্কোয়াড নয়, কেউ ইনজুরিতে পড়লে যাতে বিপাকে না পড়তে হয় সেই কারণে বিকল্পও তৈরি রেখেছে দলটি।
সায়্যিম আইয়ুব, মোহাম্মদ হারিস, আব্দুল্লাহ শফিক ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিভার জানান দিয়েছেন। বুঝিয়ে দিয়েছেন সুযোগ পেলে তাঁরাও হয়ে উঠতে পারেন ভবিষ্যতের তারকা।
পাকিস্তানের একমাত্র দুশ্চিন্তার জায়গা পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে। ফাহিম আশরাফ মাঝে আশার আলো দেখালেও তাঁর মূল সমস্যা ইনজুরি। প্রতিভা নিয়ে সংশয় না থাকলেও বছরের বেশিরভাগ সময় মাঠের বাইরেই থাকেন এই তরুণ।
তবে পাকিস্থান এই সমস্যা সমাধান করেছে বিশ্বমানের দুই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার খেলিয়ে। ইমাদ ওয়াসিম এবং মোহাম্মদ নওয়াজ হতে পারেন ভারতের ধীরগতির পিচে বাবরের তুরুপের তাস। কার্যকরী বোলিংয়ের পাশাপাশি নিচের দিকে নেমে ঝড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য আছে এই দুজনের।
পেস বোলিং ডিপার্ট্মেন্ট কখনোই পাকিস্তানের দুশ্চিন্তার কারণ ছিল না। বিশ্বমানের সব পেসাররা উঠে এসেছেন পাকিস্তান থেকে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে পাকিস্তান দলে তাই পেসারের ছড়াছড়ি। দলে শাহীন শাহ আফ্রিদির পাশাপাশি হারিস রউফ এবং নাসিম শাহের জায়গা একপ্রকার সুনিশ্চিত।
এছাড়া দলে নতুন আসা ইহসানউল্লাহ এবং জামান খানও বুঝিয়ে দিয়েছেন নিজের মূল্য। মোহাম্মদ হাসনাইন, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, শাহনেওয়াজ দাহানিরা হয়তো বিশ্বের যেকোনো দলের স্কোয়াডে সহজেই জায়গা পেয়ে যেতেন। কিন্তু দলটা পাকিস্তান বলেই হয়তো তাঁদেরকে পুড়তে হবে বিশ্বকাপ খেলতে না পারার বেদনায়।
কেবলমাত্র একাদশ নয়, বিশ্বকাপ সামনে রেখে গোটা স্কোয়াডই গুছিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। এখন দেখার বিষয় বছর শেষের বিশ্বকাপে মাঠের লড়াইয়ে নিজের শক্তিমত্তার প্রদর্শন করতে পারে কিনা বাবর আজমের দল। নাকি আরো একবার আনপ্রেডিক্টেবল তকমা নিয়েই খালি হাতে ফিরতে হবে তাঁকে।