আইপিএলে বিদেশিদের জন্য কোটা মাত্র ৪ টা। দিল্লী ক্যাপিটালসের একাদশে তাই ওয়ার্নার, মিশেল মার্শ, এনরিখ নর্কিয়াদের টপকে যে মুস্তাফিজ তেমন একটা সুযোগ পাবেন না, তা অনুমেয়ই ছিল। হয়েছেও তাই। দুই ম্যাচ বাদে সিংহভাগ ম্যাচেই জায়গা হয়েছে সাইডবেঞ্চে।
ইংল্যান্ডের মাটিতে আইরিশদের বিপক্ষে সিরিজে তাসকিন নেই। ফলত, পেস আক্রমণের নেতৃত্বের ভারটা মুস্তাফিজের কাঁধেই ওঠার কথা। কারণ বাংলাদেশের পেস আক্রমণে তাসকিন-মুস্তাফিজই তো ধ্রুব এক জুটি হয়ে উঠেছেন। সময়ের ব্যবধানে তাসকিন এগিয়েছেন, মুস্তাফিজ পিছিয়েছেন। তাই বলে, তাসকিনের অনুপস্থিতিতে মুস্তাফিজেরও ঠাঁই হবে সাইডবেঞ্চে!
চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ঠিক এমনটাই দেখা গেল। এবাদত, হাসান আর শরিফুল— তিন পেসারকে নিয়ে পেস আক্রমণ সাজিয়েছে বাংলাদেশ। আর একাদশের বাইরে ঠাঁই হয়েছে মুস্তাফিজের। ফলত, আইপিএল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চ, মুস্তাফিজের জায়গাটা ঐ সাইডবেঞ্চেই।
অবশ্য একদিনের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের এমন বাদ পড়ায় টিম ম্যানেজমেন্টের প্রতি আঙ্গুল তোলার সুযোগ নেই বললেই চলে। গত ১ বছর ধরেই, মুস্তাফিজকে বাংলাদেশ বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে সেই ‘পুরনো’ মুস্তাফিজের আপন ছন্দে ফেরার অপেক্ষায়। মুস্তাফিজ আপন ছন্দে ফিরতে পারেননি। বরং বোলিংয়ের পুরনো ধার ফুরিয়ে নিজের অবনমন ঘটিয়ে সমর্থকদের কাছ থেকে রীতিমত আক্ষেপের এক নাম হয়ে উঠেছেন।
মুস্তাফিজ একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন শেষ ওয়ানডেতেই। ঘরের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে অবশ্য তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল নাকি বাদই দেওয়া হয়েছিল, তা অজানা। তবে শেষ তিন সিরিজে মাত্র ৩ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ ক্রমেই যে বিরক্তির পাত্র হয়ে উঠছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।
ভারত, ইংল্যান্ড এরপর আয়ারল্যান্ড। টানা তিন সিরিজে সব মিলিয়ে ৭ টা ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু সেই ৭ ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই মুস্তাফিজ হতাশায় ভাসিয়েছেন। যেখানে তাঁর সতীর্থ তাসকিন, এবাদতরা রীতিমত পেস বিপ্লব ঘটিয়েছেন, সেখানে মুস্তাফিজ ছিলেন নিরব ভূমিকায়।
ব্যাপারটা এমনও নয় যে, শুধু উইকেট প্রাপ্তিতে পিছিয়েছেন। দেদারসে রান দিয়েছেন। ম্যাচ বাঁচানো বোলার থেকে হয়ে উঠেছিলেন খরুচে এক বোলার। কিন্তু মুস্তাফিজের অতীত তো সুমসৃণ।
কাটার রহস্য নিয়ে উঠে আসা এ পেসারের খারাপ সময়টাকে তাই ফেরার সময় হিসেবেই দিয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু মুস্তাফিজ আগের রূপে আর ফিরতে পারেননি। আইপিএল মঞ্চে গিয়েও দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে হয়েছেন ম্যাচ হারানোর খলনায়ক। এমন অফফর্মের বৃত্তে ঘুরতে থাকা মুস্তাফিজকে তাই এবার ‘না’ বলল বাংলাদেশও।
মূলত অফফর্মের মুস্তাফিজকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর সময়কালেই বাংলাদেশের অন্যান্য পেসাররা নিজেদের সেরা সময় পার করছিল। টেস্ট ক্রিকেটের পর ওয়ানডেতেও জ্বলে উঠতে শুরু করেছেন এবাদত। এর পাশাপাশি হাসান মাহমুদ, শরিফুলরাও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করতে শুরু করেছেন। আর এই পেস আক্রমণের মাঝে খেই হারানো বোলার হিসেবে ছিলেন একমাত্র মুস্তাফিজ। তাই চমক নয়, প্রত্যাশিতভাবেই একাদশ থেকে অবশেষে বাদ পড়লেন মুস্তাফিজুর রহমান।
মুস্তাফিজের এ বাদ পড়ায় একটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করা যেতে পারে। তাসকিন না থাকা স্বত্বেও একাদশে তিন পেসারের মাঝে নিজের জায়গা করতে পারলেন না মুস্তাফিজ। তাহলে তাসকিন ফিরলে কি তবে ৫ পেসারের স্কোয়াডে মুস্তাফিজকে পঞ্চম পেসার হিসেবে গণ্য করা হবে?
এমন অস্বস্তিদায়ক সময় থেকে ফিরতে হলে মুস্তাফিজকে এখন সেই পুরনো রূপেই ফিরতে হবে। পুরনো কাটার, স্লোয়ার, ব্যাটারের মাইন্ড রিড করে বোলিং— সব কিছুই ফিরিয়ে আনতে হবে নিজের বোলিং অস্ত্রে। তবেই মুস্তাফিজ সত্যিকারের ‘মুস্তাফিজ’ হয়ে আবারো ফিরতে পারবেন।