তাঁকে ডাকা হয় টি-টোয়েন্টির ডন ব্র্যাডম্যান নামে। কিন্তু এবারের আইপিএলের শুরুতেই হুট করেই যেন সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটে ঘোর অমানিশা। তবে মৌসুম পেরোনোর আগে ঠিকই পুরনো ছন্দে ফিরে এসেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের এই তারকা।
ভারতের বাকি দশটা তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটারের সাথে মেলানো যাবে না সুরিয়াকে। জাতীয় দলে সুরিয়াকুমারের আগমণই বয়স ত্রিশের কোটা পেড়িয়ে। যে বয়সে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানরা হারিয়ে ফেলেন ব্যাটের ধার, সেই বয়সে বাইশ গজে নিজের রাজত্ব শুরু এই তারকার। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটকে রীতিমতো নিজের করে নিয়েছেন এই তারকা।
২০২২ সালে স্বপ্নের মতো এক বছর কাটিয়েছেন সুরিয়াকুমার। বছরজুড়েই অবিশ্বাস্য ছন্দটা ধরে রেখেছে। গড় কিংবা স্ট্রাইকরেট সব দিকেই ছিলেন অনন্য, তাঁর আশেপাশেই আসতে পারেননি কোনো ব্যাটার। চারদিকে তখন জোর গুঞ্জন সুরিয়াই কি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সেরা ব্যাটার?
জাতীয় দলে আবির্ভাবটা রাজকীয় হলেও আইপিএলের মঞ্চে জায়গা করে নিতে বেশ কাঠখড়ই পোড়াতে হয়েছে এই তারকাকে। ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। তারকাবহুল কলকাতার টপ অর্ডারে কখনো জায়গা মেলেনি, কখনো কখনো নামতে হয়েছে সুনীল নারাইনেরও পরে। তবে সুরিয়া হাল ছাড়েননি, চেষ্টা চালিয়ে গেছেন নিজের সেরাটা দেবার।
দল বদলে তাই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে নাম লেখানোর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টপ অর্ডারে জায়গা করে নিয়েছেন, বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ করেছেন গোটা বিশ্ববাসীকে। আইপিএলের প্রতি মৌসুমেই রান করে গেছেন ধারাবাহিকভাবে, সেটাও স্ট্রাইকরেটের সাথে আপোষ না করেই।
উইকেটের চারপাশে শট খেলতে সিদ্ধহস্ত এই তারকা। ফিল্ডারের অবস্থান বুঝে শিল্পীর ছোঁয়ায় বলকে পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে। খেলার ধরণে মিল থাকায় সুরিয়াকে তুলনা করা হয় প্রোটিয়া কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সের সাথে।
এবারের আইপিএলের শুরুতে তাই সুরিয়ার ছন্দহীনতা হতবাক করে ফেলেছিল সবাইকে। নিন্দুকেরা অবশ্য এতে খানিকটা হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন, সুরিয়া যে তাঁদেরকে মুখ খোলার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু সেই দু:সময় বেশিদিন রইলো না সুরিয়ার।
সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই তিনটিতেই পেয়েছেন ফিফটির দেখা। মৌসুমের শুরু থেকেই মুম্বাইয়ের টপ অর্ডার খানিকটা নড়বড়ে, প্রতিপক্ষও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ভালোভাবেই। কিন্তু সুরিয়া ফর্মে ফিরতেই মুম্বাইয়ের ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা যেন মিলিয়ে গেছে মূহুর্তের মাঝে।
রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে যেন সেই পুরনো সুরিয়াকুমার যাদব ফিরে এলেন আরো একবার। ২০০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাওয়ারপ্লেতেই সাজঘরে ফেরেন মুম্বাইয়ের দুই ওপেনার। সুরিয়ার সেরাটা বেরিয়ে আসতে যেন এমন মূহুর্তেরই দরকার ছিল, ক্রিজে এসেই শুরু করলেন মারমুখী ব্যাটিং।
তাঁর অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের কোনো জবাব ছিল না ব্যাঙ্গালুরুর বোলারদের কাছে। কখনো ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে স্লগ সুইপ মেরেছেন, আবার কখনো মোহাম্মদ সিরাজের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়েছেন গ্যালারীতে।
৩৫ বলে সাত চার এবং ছয় ছক্কায় সাজানো ৮৩ রানের অতিমানবীয় ইনিংস খেলে যখন সাজঘরে ফিরছেন ততক্ষণে ম্যাচের ফলাফলটা নির্ধারণ হয়েই গিয়েছে।
বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতের মিডল অর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। আইপিএলের ফর্মটা তাই জাতীয় দলের জার্সিতেও টেনে আনতে চাইবেন এই তারকা।