উইকেটের পেছনে ক্ষিপ্রতার কারণে বেশ প্রসিদ্ধ মহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্ষিপ্র কিপারদের একটা তালিকা করতে গেলে সেখানে সারাহ টেইলর। ইংল্যান্ড নারী দলের সাবেক ক্রিকেটার। ক্ষিপ্রতার তিনিও এক অনন্য উদাহরণ। নারী ক্রিকেট তো বটেই ক্রিকেটের সর্বস্তরের জন্যে তিনি রোল মডেল।
বিচিত্র এক ক্যারিয়াই পার করেছেন সারাহ টেইলর। ২০ মে ১৯৮৯ সালে তিনি জন্মেছিলেন ইংল্যান্ডের রাজধানীতে। ধারণা করা হয় তিনি ঐশ্বরিকভাবেই ক্রিকেট আঙ্গিনায় আলো ছড়ানোর রসদ উপহার পেয়েছিলেন। যার ঝলক দেখাতে তিনি শুরু করেছিলেন ১৭ বছর বয়সেই।
২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় সারাহর। সেখান থেকে তিনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি। ক্রমশ এগিয়ে গেছেন, আলো ছড়িয়েছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ব্যাট হাতে সাবলীল সারাহ উইকেটের পেছনে সারা রীতিমত বিদ্যুৎ।
ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের নাভিশ্বাস তুলেছেন বহুবার। আবার উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের স্বস্তি দেননি এক মুহূর্ত। ক্যারিয়ারে বহুবার তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের পুরুষ উইকেটরক্ষকদের জন্যেও হয়েছিলে হুমকির কারণ। এমনকি বার্মিংহাম প্রিমিয়ার লিগে তিনি ওয়ালমলির হয়ে খেলেছেনও তিনি।
তবে তার ক্যারিয়ারের হাইলাইট সম্ভবত হয়ে থাকবে ২০০৯ সাল। সেবার ইংল্যান্ডের নারী দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি ওয়ানডে বিশ্বকাপও জিতেছিল। সেই অজেয় দলটার গুরুত্বপূরর্ণ সঙ্গী ছিলেন সারাহ টেইলর। এছাড়াও তার ক্যারিয়ার জুড়ে অর্জনের কমতি নেই।
নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে, সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১০০০ রানের মাইলফলকও ছুঁয়ে দেখেছেন সারাহ। ২০০৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সেই রেকর্ড গড়ে ফেলেন তিনি। এরপরও আপন ধারায় রান করে গেছেন তিনি প্রতিটি ফরম্যাটেই।
সব ফরম্যাট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৬০০০ রান করেছেন ইংলিশ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। যার অধিকাংশ রানই তিনি করেছেন ওয়ানডে ফরম্যাটে। ৩৮.২৬ গড়ে ৪০৫৬ রান আছে তার একদিনের ক্রিকেটে। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে সাতটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ২০টি অর্ধশতকও করেছেন এই ফরম্যাটে।
এছাড়া টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও ১৬টি অর্ধশতক আছে তার নামের পাশে। টেস্ট ক্রিকেট অবশ্য খুব একটা আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি। ১৭ ইনিংসে মাত্র ৩০০ রান রয়েছে তার নামের পাশে। লাল বলের ক্রিকেটে খুব একটা নিয়মিতও ছিলেন না।
তবে সাদা বলের ক্রিকেটে বেশ প্রতাপশালী একজন ব্যাটার তিনি ছিলেন। ক্যারিয়ারটা হয়ত তার আরও খানিকটা সমৃদ্ধ হতে পারত। কিন্তু মাঝপথে বাঁধ সেধেছে মানসিক অস্থিরতা। নানান সময়ে মানসিক উদ্বেগ তাকে ক্রিকেতট থেকে দূরে রেখেছে।
২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারে ইংল্যান্ড। এরপরই মানসিক অবসাদের কারণে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বিরতিতে চলে যান সারাহ টেইলার। তবে এই সময়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তদারকি করেছে সারাহর মানসিক পরিস্থিতি। পরবর্তীতে আবার দলে ফিরেছেন সারাহ। খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন সব ইনিংস।
তাছাড়া উইকেটের পেছনে সারাহর ক্ষিপ্রতার প্রমাণ মেলে তার ডিসমিসালের পরিসংখ্যান থেকে। ওয়ানডেতে ১৩৮ বার প্রতিপক্ষ ব্যাটারকে আউট করতে সহয়তা করেছেন সারাহ। টি-টোয়েন্টিতে সে সংখ্যাটা ৭৪। এই পরিসংখ্যানই তার সক্ষমতা প্রমাণের অন্যতম নিয়ামক।
তবে হুট করে ২০১৯ সালে অবসরের ঘোষণা দিয়ে ফেলেন সারাহ টেইলর। তাতে খানিকটা বিস্ময় জাগে পুরো ক্রিকেট দুনিয়ায়। অবশ্য তার মানসিক উদ্বেগের বলি হয়েই তিনি এমনটা করেছিলেন। যদিও আবার ২০২১ সালে ব্যাট-প্যাড নিয়ে ফিরে এসেছিলেন।
সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর ২০২১ সালে দ্য হান্ড্রেড টূর্নামেন্টের উদ্বোধনী আসরে তিনি মাঠে ফেরেন। এরপর অবশ্য আবার ক্রিকেটার জীবন গুটিয়ে নেন সারাহ। বনে যান পথ প্রদর্শক। ২০২১ সালে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার কোন পুরুষ দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান সারাহ।
ইংল্যান্ডের কাউন্টি দল সাসেক্সের উইকেটকিপিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর তো আবুধাবী টি-টেন লিগে রীতিমত সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন সারাহ টেইলর। এক কথায় বলতে গেলে বিচিত্র এক ক্যারিয়ারই কাটিয়েছেন সারাহ।
ঐশ্বরিক প্রতিভার ঝলক দেখিয়ে তিনি ইংল্যান্ডকে বহু অর্জনের সাক্ষী করেছেন। মানসিক অবসাদকে পেছনে ফেলেও তিনি ক্রিকেট মাঠে ক্ষিপ্রতার পরিচয় দিয়েছেন। অনন্য সব রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারটা আরও খানিকটা রঙিনই হয়ত করতে চাইবেন সারাহ টেইলর।