গত কয়েক মৌসুম ধরেই আইপিএল দলগুলোর নেট বোলার হিসেবে পরিচিত মুখ তিনি। কিন্তু তবুও যেন নিজের প্রতিভার পরিস্ফুটন দেখিয়ে স্কোয়াডে জায়গা করে নিতে পারছিলেন না। তবে এবারের মৌসুমে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের একাদশে জায়গা পেয়ে নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন ইয়াশ ঠাকুর।
বিদর্ভের পেসার ইয়াশ বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার। বিশেষ করে ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট হিসেবে সুনাম আছে তাঁর। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন ব্যাটসম্যান হিসেবেই।
১৩ বছর বয়সে একাডেমীতে যাবার সময়ে জানতেনই না ব্যাটিং, বোলিং নাকি উইকেটকিপিং কোনটা বেছে নিবেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে শুরু করলেও বছর খানেক বাদেই বুঝতে পারেন বল গ্যালারীতে পাঠানো নয়, বরং দুরন্ত পেসে স্ট্যাম্প উড়াতেই তাঁর যত আনন্দ।
ইয়াশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে বল করতে জানেন। ইনিংসের শুরুতে যেমন উইকেটের দুদিক থেকেই সুইং আদায় করতে নিতে জানেন, তেমনই মাঝের ওভারেও বেকথ্রু এনে দিতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। তাছাড়া ডেথ ওভারে টানা ইয়র্কার দেবার ক্ষমতা আছে এই তরুণ পেসারের। যেকোনো অধিনায়কই ইয়াশকে তাঁর দলে পেতে চাইবেন।
তবে ইয়াশ সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন গত মৌসুমে সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে । সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বিদর্ভের বিপক্ষে জিততে শেষ ওভারে দিল্লীর সেদিন দরকার ছিল নয় রানের।
আগের ওভারেই জাতীয় দলের পেসার উমেশ যাদব হজম করেছিলেন ১৬ রান, সবাই ভেবেছিলেন ম্যাচটা সহজেই জিতে যাবে দিল্লী। কিন্তু দুর্দান্ত বল করে দলকে স্মরণীয় এক জয় এনে দেন ইয়াশ। এরপরই মূলত ভারতীয় ক্রিকেট পাড়ায় আলোচনা শুরু হয় তাঁকে ঘিরে।
আইপিএলে মাঠে নামার সুযোগ না পেলেও দলগুলোর পরিচিত মুখ ইয়াশ। গত কয়েক মৌসুম ধরেই কাজ করছেন নেট বোলার হিসেবে। গত মৌসুমের পুরোটা সময় ছিলেন পাঞ্জাব কিংসের সাথে। কিন্তু এবারের মৌসুমের শুরুতে মহসিন খান ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়ায় একজন ভারতীয় পেসার প্রয়োজন ছিল লখনৌ সুপার জায়ান্টসের।
দলটির অধিনায়ক লোকেশ রাহুল পাঞ্জাবে থাকাকালীন সময় থেকেই ইয়াশকে জানতেন। মূলত তাঁর পরামর্শেই এবারের নিলাম থেকে ৪৫ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় লখনৌ।
আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে আলো ছড়াতে না পারলেও সময় যত গড়িয়েছে তত উজ্জ্বল হয়েছে ইয়াশের পারফরম্যান্স। নিজের পুরনো দল পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষেই দুরন্ত বল করে জানান দেন নিজের সামর্থ্যের। ফলে টুর্নামেন্টের শেষদিকে মহসিন ইনজুরি থেকে ফিরলেও দলের নিজের জায়গা নিয়ে ভাবতে হয়নি ইয়াশকে।
এলিমিনেটরে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচেও তাই ইয়াশের দিকেই তাকিয়ে ছিল লখনৌ। তরুণ এই পেসারও হতাশ করেননি। ইনিংসের শুরুতে যেমন উইকেট এনে দিয়েছেন, তেমনই ডেথ ওভারেও বাঁধা দিয়েছেন মুম্বাইয়ের রানস্রোতে।
দুরন্ত গতির পাশাপাশি বলে ভ্যারিয়েশন এনে চমকে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের। শেষপর্যন্ত চার ওভারে ৩৪ রান দিয়ে শিকার করেছেন তিন উইকেট।
যদিও এলিমিনেটর থেকে লখনৌ বিদায় নেয়ায় এবারের মৌসুমের সমাপ্তি ইয়াশের জন্য। তরুণ এই পেসার চাইবেন আইপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেও ফর্মটা ধরে রাখতে।