জার্মানি ২০১৪: ৭-১, মারিও গোৎজে ও পারফেকশন

যথাযথ, পরিমিত আর সঠিক - তিনটা শব্দের অর্থের তারতম্য আছে বটে কিন্তু তিনটাই দিনশেষে সরলরেখা হিসেবে এগোলে কোন না কোন বিন্দুতে মিলিত হয় একই প্রেক্ষাপটে। জার্মানির ২০১৪ সালের স্কোয়াডটা যেন তারই প্রতিফলন। আপনি ফ্লুকে ইউরো জিতে যেতে পারেন, খুব ভাল পারফর্ম না করেও। যেমন - গ্রিস ২০০৪, পর্তুগাল ২০১৬। কিন্তু, বিশ্বকাপে আপনি এমন কোন দল পাবেন না যারা মাঝারি পারফর্ম করে কাপ জিতে গিয়েছে।

যথাযথ, পরিমিত আর সঠিক – তিনটা শব্দের অর্থের তারতম্য আছে বটে কিন্তু তিনটাই দিন শেষে সরলরেখা হিসেবে এগোলে কোন না কোন বিন্দুতে মিলিত হয় একই প্রেক্ষাপটে।

জার্মানির ২০১৪ সালের স্কোয়াডটা যেন তারই প্রতিফলন। আপনি ফ্লুকে ইউরো জিতে যেতে পারেন, খুব ভাল পারফর্ম না করেও। যেমন – গ্রিস ২০০৪, পর্তুগাল ২০১৬। কিন্তু, বিশ্বকাপে আপনি এমন কোন দল পাবেন না যারা মাঝারি পারফর্ম করে কাপ জিতে গিয়েছে।

বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন দলগুলোর স্কোয়াডের গভীরতা আপনি বুঝতে পারবেন স্পেনের ২০১০ সালের খেলোয়াড়দের তালিকা আর জার্মানির ২০১৪ সালের স্কোয়াড দেখলে। কোচ জোয়াকিম লোয়ের সব জায়গায় একটা করে তালিসমান ছিল ক্ষেত্রবিশেষে দুই জন।

মধ্যমাঠে মেসুত ওজিল, স্যামি খেদিরা, টনি ক্রুস, বাস্টেইন শোয়েন্সটাইগার। সামনে থমাস মুলার আর অভিজ্ঞ মিরোস্লাভ ক্লোজা। ডিফেন্সে হামেলস, হাওয়েডেজ, বোয়াটেং লাম। এই দলটার মূল শক্তি ইমার্জ করে লাম থেকেই। ফিলিপ লাম ছিলেন নিউক্লিয়াসের মত। পর্তুগালের সাথে ৪-০ গোলে জয় থেকে শুরু করে ব্রাজিলের বিপক্ষে ৭-১ গোলের জয় এসবই স্টেটমেন্ট উইন।

জার্মানির এই বিশ্বকাপ জয়টা পাঠ্য বইয়ে পড়ানোর মত একটা সিস্টেমেটিক বিষয় আসলে। ২০০০ সালেই জার্মানি ইউরো থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিল গ্রুপ পর্বেও তলানীর দল হয়ে। ইমিডিয়েট বদলে জার্মানি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে দুই বছরের মধ্যে কিন্তু জিততে পারেনি।

এরপর তারা সিস্টেমের খুঁত দেখার চেষ্টা করে, ঘরোয়া কাঠামো দিন শেষে আয়নার মতো করে প্রতিচ্ছবি দেখায় আন্তর্জাতিক সেক্টরে। ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের অধীনে যখন জার্মানি খেলতো তখন ইওয়াখিম লো সহকারী কোচ, স্কিল, প্রেশার আর ফ্লুইড ফুটবল খেলেই চলছিল জার্মানি।

২০০২ সালে দ্বিতীয়, ২০০৬ সালে তৃতীয়, এরপর ২০১০ এও তৃতীয়! জার্মানির এই একগুচ্ছ ফুটবলারদের মধ্যে ক্লোজা ছিলেন নিয়মিত। টানা চারটা বিশ্বকাপ জার্মানি বিশ্বের সেরা তিনটা দলের একটা ছিল। এটাই হচ্ছে প্রসেস। সেই চক্রের সুতা কেটেছে ২০১৮ সালে এসে।

২০০০ সালের ইউরোতে গ্রুপ পর্বে বাদ থেকে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বাদ দিয়ে শেষ। এর মধ্যে ২০০৮ সালে ইউরোর ফাইনালেও খেলেছে জার্মানি। আবার ২০১২ সালে এক মারিও বালোত্তেলি ওরকম পশু হয়ে ওঠায় জার্মানি পারেনি।

একটা সরলরেখা যেন জার্মানির উত্থান, ২০০২ বিশ্বকাপ ফাইনালের প্রতিশোধ তো নিয়েছেই, ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য স্টেডিয়ামে জার্মানি করেছে উৎসব। জার্মানির এই বৃত্ত পূরণের অনেক ধাপের মধ্যে একটা ছিল বিশ্বকাপ জয়ের আগের বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, বায়ার্ন মিউনিখ বনাম বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

আর ছিল বিশ্বসেরাদের মিশেল, যারা হয়তো পুরষ্কারের স্বীকৃতিতে না, কিন্তু মাঠের কর্তৃত্বে বিশ্ব সেরা বাস্টেইন, নয়্যার, লাম ও মুলার! গোৎজে এই দলটার বৃত্তের শেষ বিন্দু!

আরেকটা ব্যাপার দেখবেন, জার্মানি যেবার বড় কিছু করে কাউকে ধুয়ে মুছে দিয়ে চলে যায়। ২০০২ সালে সৌদি আরবের সাথে ৮-০ গোলের জয়, ২০১৩ সালে বরুশিয়া মাদ্রিদকে এক ম্যাচে চারটা, আর বায়ার্ন বার্সেলোনাকে দুই লেগে ৭ টা গোল দিলো, ২০১৪ তে বেলো হরিজন্টেতে ব্রাজিলকে সাতটা, ২০২০ সালে বার্সেলোনাকে এক লেগেই ৮টা গোল দিল বায়ার্ন, ইউসিএল চ্যাম্পিয়ন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...