মাত্র সাত বছর আগেই গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতেছিল লিস্টার সিটি। কিন্তু এরপর থেকেই যেন উল্টোপথে হাঁটছে দলটি।
সাফল্যের পুনরাবৃত্তি তো দূর, এবারের মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকেই অবনমিত হয়ে গেছে দলটি। আসুন দেখে নেয়া যাক লিস্টার সিটির ব্যর্থতার কারণগুলো।
- বাজে সাইনিং
লিস্টার সিটির সাফল্যই এসেছিল তাঁদের দূরদর্শী স্কাউট দলের দারুণ সব সাইনিংয়ের কারণে। তাঁদের শিরোপা জয়ী সেই দলটা গড়তে খরচ হয়েছিল মাত্র ৩০ মিলিয়ন। এনগোলো কান্তে, রিয়াদ মাহরেজ, জেমি ভার্ডিদের দলে ভেড়াতে তেমন আহামরি খরচ করতে হয়নি তাঁদের।
কিন্তু এরপরেই যেন ছন্দপতন! হ্যারি ম্যাগুয়ারকে বড় অংকের ট্রান্সফার ফিতে বিক্রি করলেও সেই অর্থ ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। বিশেষ করে গত মৌসুমে দলে আসা তারকারা কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি।
প্যাটসন ডাকা, বুবাকার সমারে, ইয়ান ভেস্তেগার্ড, রায়ান বার্টান্ড প্রত্যেকেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। দলবদলের এই ব্যর্থতাই তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে পয়েন্ট তালিকার শেষের দিকে।
- আর্থিক সমস্যা
করোনা মহামারির পর থেকেই আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছিল দলটি। গত মার্চেই প্রায় ৯২.৫ মিলিয়ন ইউরোর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল দলটি।
যদিও ওয়েসলি ফোফানাকে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চেলসির কাছে বিক্রি করে সাময়িকভাবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর জায়গায় কাউকে আনতে না পারায় ডিফেন্স দুর্বল হয়ে পড়ে লেস্টারের। গোটা মৌসুমজুড়ে আর্থিক দৈন্যতা তাই ভালোই ভুগিয়েছে দলটিকে।
- অতিরিক্ত আনুগত্য প্রকাশ
বেশ কয়েকজন ফুটবলারই তাদের সেরাটা পেছনে ফেলে আসলেও তাদের ধরে রাখার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। এছাড়া তাদের কোচ ব্রেন্ডন রজার্সও যেন ছন্দটা হারিয়ে ফেলেছেন।
জনি ইভান্স ২০২০ সালের ডিসেম্বরে নতুন চুক্তি করার পর মাঠের বাইরেই বেশি সময় কাটিয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ বেতন পাওয়াদের একজন বাট্রান্ড দুই মৌসুমে মাত্র ১২ ম্যাচে মাঠে নেমেছেন।
অন্যদিকে আরেক ব্যর্থ তারকা ভেস্তেগার্ডের চুক্তির আরও এক বছর বাকি। এছাড়া ইউরি তিয়েলেমান্সকে সেরা সময়ে বিক্রি না করে বড় ভুল করেছে দলটি। এবারের মৌসুম শেষে হয়তো ফ্রিতেই দল ছাড়বেন এই বেলজিয়ান মিডফিল্ডার।
- নতুন গোলকিপারের অভাব
মৌসুমের শুরুতে দীর্ঘদিনের পুরনো সেনানী গোলরক্ষর ক্যাসপার স্মাইকেল ক্লাব ছাড়লেও তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে দলে ভেড়ায়নি দলটি। পুরনো ড্যানি ওয়ার্ড কিংবা ড্যানিয়েল ইভারসেন কেউই গোলবারের নিচে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি।
ড্যানি ওয়ার্ড তো প্রায় প্রতি ম্যাচেই গোল হজম করেছেন। তাঁর চাইতে বাজে শট স্টপিং রেকর্ড আর আছে মাত্র চারজনের।
অন্যদিকে ইভারসেনও প্রিমিয়ার লিগের দলে প্রথম পছন্দের গোলকিপার হবার যোগ্যতা রাখেন না এখনো। ফুলহ্যামের বিপক্ষে তাঁর হাস্যকর ভুলেই পয়েন্ট হারাতে হয়েছে লেস্টারকে।
- দুর্বল রক্ষণভাগ
গোটা মৌসুমজুড়ে লেস্টারকে ভুগিয়েছে তাদের দুর্বল রক্ষণভাগ। গত মৌসুমে সেট পিস থেকে ২০ গোল হজম করলেও সে থেকে শিক্ষা নেয়নি দলটি।
এবারের মৌসুমেও সেট পিসে তাদের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে গোল আদায় করে নিয়েছে দলগুলো। এছাড়া উইলফ্রেড এনদিদির অফ ফর্মের সুবাদে কাউন্টার অ্যাটাক সামাল দেবার মতো কাউকে পায়নি দলটি।
- ইনজুরি সমস্যা
এবারের মৌসুমে লিস্টার সিটি কোচ ব্রেন্ডন রজার্সের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার কারণ ছিল দলের মূল তারকাদের ইনজুরি।
দলের সেরা রাইটব্যাক রিকার্ডো পেরেইরা এসিএল ইনজুরিতে পড়ে প্রায় পুরো মৌসুম মাঠের বাইরে ছিলেন। তাঁর বদলে একাদশে জায়গা করে নেয়া জেমস জাস্টিনও ছিটকে যান এসিএল ইনজুরিতে পড়ে। এছাড়া মৌসুমের শুরুতে কেলেচি ইহিয়ানাচো দারুণ ফর্মে থাকলেও ইনজুরির শিকার হয়ে ছন্দটা হারিয়ে ফেলেন।
- খেলোয়াড়রা কি ভাবছেন?
লেস্টারের অবনমনে নিশ্চিতভাবেই সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন দলটির সমর্থকরা। কিন্তু যাদের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দলের এই দশা তারা মোটেই দলের দুরবস্থা নিয়ে চিন্তিত নন।
মৌসুমের মাঝপথেই দলের মূল তারকা জেমস ম্যাডিসন দাবি করেছিলেন লিস্টারের ফুটবলাররা জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত নন। গোটা মৌসুমজুড়েই মাঠে খেলোয়াড়দের মাঝে ভালো করার তাগিদ দেখা যায়নি।
বরং কোন মতে নব্বই মিনিট শেষ করতে পারলেই যেন বাঁচেন তারা। তাছাড়া বেশিরভাগ তারকাই দল ছাড়ার দ্বারপ্রান্তে থাকায় লেস্টারকে নিয়ে ভাবেননি কেউই।
ম্যাডিসন নিজে হয়তো নিউক্যাসলে যাবেন। ক্যাগলার সয়ঞ্চু ইতোমধ্যেই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন। হার্ভে বার্নস, সমারে, আমার্টিদেরও ক্লাব ছাড়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।