নেটে ব্যাটিং অনুশীলন শেষে হাসান মাহমুদ তখন ক্লান্ত। তাকে নিয়ে খানিকটা মজায় মেতে উঠলেন, মুশফিকুর রহিম, এবাদত হোসেন ও খালেদ হাসানরা। পাশে বসে শিষ্যদের ফুরফুরে মেজাজটা উপভোগ করছেন স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ।
বেশ চনমনে মুশফিক। তাইতো তরুণ হাসান মাহমুদকে হাসির ছলেই বুঝিয়ে দিলেন, তাকে আরও বেশি দৃঢ় হতে হবে। অল্পতেই হাপিয়ে গেলে চলবে না। উদাহরণ হিসেবে তিনি টেনে আনেন লাল বলের ক্রিকেটের। এবাদত, খালেদদের দেখিয়ে তাদের করা পরিশ্রমের একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন। লাল আর সাদা বলের পার্থক্য বিশাল।
সেই মানসিক প্রস্তুতিটাই যেন নিতে উদ্বুদ্ধ করলেন হাসান মাহমুদকে। এরপর তিনি আবার খোশগল্পে মেতে ওঠেন দীর্ঘদিনের সতীর্থ তামিম ইকবালের সাথে। তাকেও যেন খানিকটা উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালান মুশফিকুর রহিম। তাইতো আলাপ শেষে, তামিম আর মুশফিক দু’জনে একসাথে করেছেন নেট অনুশীলন।
পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি এই প্রবাদের সাথে পরিচয় নেই এমন কাওকে খুঁজে পাওয়া দায়। তবে এই প্রবাদের বাস্তব দৃষ্টান্ত মুশফিকুর রহিম নিজে। বেশ আগে থেকেই একটা বিষয় প্রচলিত। বাংলাদেশ ক্রিকেটে মুশফিকের চাইতে পরিশ্রমী নেই আর কেউ।
বেশ লম্বা সময় ধরেই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল তার। পেছনের কারণ অবশ্য বাজে ফর্ম। সেই সময়টাও তিনি পেছনে ফেলেছেন। কেবলমাত্র পরিশ্রম দিয়ে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির দেখা যেমন পেয়েছেন। তেমনি টেস্টেও সেঞ্চুরি পেয়েছেন।
ফর্মে ফিরেছেন তিনি, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও প্রতিদিনই মাঠে তার সরব উপস্থিতি। নিজেকে ঝালিয়ে একেবারে ঝাঁ চকচকে করে গড়ে তোলায় কোন কমতি রাখছেন না। অন্যদিকে তামিমকেও মাঝে মধ্যে টোটকা দিয়েছেন।
নদীর একপাশ যখন গড়ে, তখন নাকি আরেক পাশ তলিয়ে যায় নদীর গর্ভে। তেমনই দশা বাংলাদেশ ক্রিকেটে। মুশফিক নিজেকে যখন খুঁজে পাচ্ছেন, তখন তামিম আবার আত্মবিশ্বাসের অভাবটা অনুভব করছেন। ধারাবাহিকতার অভাবটা স্পষ্ট।
শেষ টেস্টের উদাহরণই টেনে নিয়ে আসা যায়। মিরপুরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে মুশফিক প্রথম ইনিংসে শতকের পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন অর্ধশতক। অন্যদিকে দুই ইনিংস মিলিয়ে তামিমের রান সর্বসাকুল্যে ছিল ৫১ রান। অথচ অভিজ্ঞ তামিমের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা থাকে অনেক বেশি। অন্তত টেস্ট ক্রিকেটে তো আর স্ট্রাইকরেট নামক প্রতিবন্ধকতা নেই।
ধারাবাহিকতার এই অভাবটা নিশ্চয়ই কাটিয়ে উঠতে চাইছেন তামিম ইকবাল। তবে ফর্মহীনতায় আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগা বিষয়টি নতুন নয়। এক্ষেত্রে সতীর্থদের এগিয়ে আসারই কথা। তাইতো মুশফিক বাড়িয়েছেন নিজের ভরসার হাত।
মুশফিক নিজের উজ্জীবিত মানসিকতা যেন গোটা শিবিরেই ছড়িয়ে দিতে চান। তেমনটা চাইলে অবশ্য দলের জন্যেই উপকারি। গোটা দল উজ্জীবিত থাকা মানেই তো একসাথে সকল বাঁধা ডিঙিয়ে যাওয়া।