নাজমুল হোসেন শান্ত, করে ফেললেন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি। তিনি যখন এই কীর্তি গড়েন, তখন বাইশ গজের অপরপ্রান্তে ছিলেন মুমিনুল হক। একটা সময় যিনি ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট দলের মেরুদণ্ড। ব্যাটিং ইউনিটের শিরদাঁড়া ছিলেন তিনি। তিনিই প্রথম দুই ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন বাংলাদেশিদের মধ্য়ে।
শান্তর সেঞ্চুরি নিশ্চয়ই তাকে স্পৃহা জাগিয়েছে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই তৃষ্ণা তিনি মিটিয়েছেন সেঞ্চুরি করে। প্রায় বছর দুই বাদে মুমিনুলের ব্যাট থেকে এলো তিন অংকের রান। তিনি নিজেও যেন খানিকটা স্বস্তি ফিরে পেলেন। তিনি নিজেও যেন খানিকটা নির্ভার হলেন।
মুমিনুল হকের নামের পাশে একটা তকমা যুক্ত করেই দেওয়া। তিনি নাকি ‘টেস্ট খেলোয়াড়’। সেই তকমাই তাকে খানিকটা সীমাবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের বাকি দুই ফরম্যাটের জন্যে তাই কখনোই প্রাধান্য পাননি মুমিনুল হক। তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় থেকেছেন টেস্ট ক্রিকেটের।
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে পরাশক্তি নয়। র্যাংকিংয়েও অবস্থান বেশ নড়বড়ে। সেই দোহাই দিয়ে টেস্ট খেলার সুযোগও মেলে কম টাইগারদের। আর চেইন রিয়েকশন হিসেবে মুমিনুল হক সৌরভেরও নিজেকে প্রমাণ করবার সুযোগ কম। তিনি চাইলেই নিজেকে ফিরে পেতে লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে যেতে পারেন না।
তাইতো ফিরে আসার লড়াইটা হয় সুদীর্ঘ। বড় রান পেতে অপেক্ষা করতে হয় বহু সময়। এবারের অপেক্ষাটা ১৩ ম্যাচের। ইনিংসের হিসেবে তা ২৭ ইনিংস। ২৭ ইনিংস পর তার ব্যাট মুমিনুল আরও একবার ছুঁয়ে দেখলেন সেই মাইলফলক। সাদা পোশাকে এই বড় ইনিংসগুলোই তো বহুল আকাঙ্ক্ষিত।
ইয়ামিন আহমেদজাইয়ের বলে পেরিস্কুপ করেন সৌরভ। ঠিক কতটা আত্মবিশ্বাস তিনি ফিরে পেয়েছেন এই ইনিংসে সেটারই যেন এক প্রতিচ্ছবি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২ তম সেঞ্চুরির দেখাটা পেয়েছেন মুমিনুল হক।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশি ব্যাটাররা দারুণ একটা সময় কাটাচ্ছে। মুমিনুলও সেই সময়টায় বিষাদ নিয়ে ফিরতে চাননি বাড়ি। উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল দৌড়ে যায় বাউন্ডারির দিকে। আর মুমিনুল পৌঁছে যান ১০১ এ।
বাংলাদেশ তখন রীতিমত স্পোর্টস কার। মুমিনুলের শতকের উপর ভর করেই যেন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। শান্তর শতকের পর মুমিনুলের শতকও ক্রমশ আফগানিস্তানের মনোবল চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়। আফগান বোলাররা যেন হতাশা আর ক্লান্তির সাগরে ডুব দেওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। যদিও উইকেট থেকে কোন ধরণের ফায়দাই তুলতে পারেনি আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণ।
আগামী পঞ্জিকা বর্ষে বেশ কিছু টেস্ট ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশের। এই সময়ে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটারের ফর্মে ফেরাটা ছিল ভীষণ প্রয়োজন। বেশ আগেভাগেই নিজেকে যেন ফিরে পেলেন। মাটিতে মিশে যাওয়া আত্মবিশ্বাসটা একটু যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
এখান থেকে মুমিনুল নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার মিশন শুরু চাইলেই করতে পারেন। হয়ত তিনি তেমনটি করবার প্রচেষ্টাই করবেন।