শান্তকে দেখেই শান্ত ছিলেন ‍মুমিনুল

প্রায় ২৭ ইনিংস পর সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মুমিনুল হক। লম্বা সময়ই বটে। বেশ কঠিনই কেটেছে তার সময়টা নিশ্চয়ই। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটারের এমন দীর্ঘ সময় ধরে বড় ইনিংস গড়তে না পারাটা নিশ্চয়ই খানিকটা উদ্বেগের কারণ। যদিও ১২৬ রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুল মনে করেন, একেবারেই রান খরায় ছিলেন না তিনি।

মুমিনুল বলেন, ‘চার ইনিংস দেখেন, আমার রান কিন্তু অত খারাপ না। আপনারা হয়ত প্রতি ম্যাচে ২০০ আশা করেন তো আমার কাছে, সে কারণে হয়ত আপনাদের মনে হয় আমি রানে নাই। আমার আক্ষেপ ছিল যে আমি লম্বা ইনিংস ব্যাটিং করতে পারি নাই। আমার যেটা অভ্যাস যে দুই,তিন, চার সেশন ব্যাটিং করা। ওটার আক্ষেপ ছিল।’

তার উপর প্রত্যাশার মাত্রাটা বেড়ে গেছে সবার, সেটি বুঝতে আর বাকি নেই মুমিনুলের। তিনি বোঝেন বিষয়টা। তারও আক্ষেপ হয়, নিজের ইনিংসগুলো বড় করতে না পারলে। তাকেও খানিকটা মানসিক বিষাদ ঝেঁকে ধরে। সেই সময়টা কাটিয়ে ওঠানোর পন্থা হিসেবে তিনি মনস্থির করার পথটাই বেছে নিয়েছেন।

নিজের মানসিকতা অনেকটাই বদলে ফেলেছেন মুমিনুল হক। মানসিক সেই পরিবর্তন সম্পর্কে মুমিনুল বলেন, ‘আপনি যদি চিন্তা করেন আমার একবছর পর টেস্ট হোক, সেটা আমার জন্য ভাল। আমার জন্যে এক মাস পরে হোক, পাঁচ মাস পরে হোক, এক বছর পরে হোক যেটা হবে সেটাই আমার জন্যে ভাল। ওভাবে চিন্তা করলে আমার মনে হয় সহজ। একেক জনের চিন্তা হয়ত একেক রকম থাকে। আমার এই চিন্তাভাবনা হয়ত আরেকজনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।’

তবে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার একটা তাড়না তো নিশ্চয়ই থাকে। সেই ইচ্ছে থেকেই নিজেকে পরিণত করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জেমি সিডন্সের সাথেও কাজ করেছেন। তবে সময়ের ব্যপ্তিটা বড্ড ছোট। মুমিনুল মনে করেন অল্প সময়ে নিজের টেকনিকে পরিবর্তন আনা যায় না কিংবা সেসব ম্যাচেও কাজে লাগানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘দুই দিন বা এক মাসে টেস্টে টেকনিক পরিবর্তন করাটা খুব কঠিন। আমি যেভাবে টেস্ট খেলি সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছি। আমার শক্তির জায়গায় থাকার চেষ্টা করেছি।’ তবে অধিনায়কত্বের চাপ থেকে মুক্তি লাভ তার জন্যে বেশ ভালই প্রভাব ফেলেছি বলে তিনি মনে করেন।

মুমিনুল বলেন, ‘অধিনায়কত্ব না থাকলে একটু সুবিধা থাকে, এতকিছু চিন্তা করতে হয় ন, খালি ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে হয়।’ তিনি এখন নিজের ব্যাটিংটা নিয়ে আরও বেশি মনযোগী। অধিনায়ত্বের চাপটা এখন আর নেই তার। সেই ফলটাও যেন পেতে শুরু করেছেন তিনি।

তবে এদিন মুমিনুলের সেঞ্চুরি ছাপিয়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি সম্ভবত নাজমুল হোসেন শান্তর টানা দুইটি সেঞ্চুরি। এর আগে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে মুমিনুল হকেরই ছিল এই রেকর্ড। এক টেস্টের দুই ইনিংসে শতকের সেই রেকর্ডের যুক্ত হয়েছেন শান্তও। পুরো দলই চাইছিলো শান্তর আরও একটি শতক।

মুমিনুল বলেন, ‘আমরা দলের সবাই চাচ্ছিলাম ওর দুইটা একশ হোক। আমার কাছে মনে হয় প্রথম ইনিংসের একশোটা অনেক বেশি মূল্যবান। কারণ প্রথম ইনিংসে খেলার মোমেন্টাম পুরো পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা চাচ্ছিলাম ওর একশোটা হোক।’

দ্বিতীয় ইনিংসে হয়ত উইকেট থেকে সাহায্যটা পেয়েছেন শান্ত। তবে প্রথম ইনিংসে শান্তর বিপরীতেই কাজ করেছে উইকেট। বাড়তি পীড়ার কারণ ছিল অতিরিক্ত মাত্রায় গরম। দ্বিতীয় বারের মত জুন মাসে টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। আর এবারের তাপমাত্রাও রেকর্ড ভেঙ্গেছে বিগত কয়েক দশকের। এমন বৈরি পরিস্থিতেও শান্ত বেশ অবলীলায় ব্যাট করে গেছেন। তা বিমোহিত করেছে সবাইকে। সে তালিকায় মুমিনুলও রয়েছেন।

বিমোহিত মুমিনুল বলেন, ‘আসলে শান্তর ইনিংস দেখলে মনে হয় যে খেলাটা অনেক সহজ। সবদিক দিয়েই খেলে। নিজেরও মনে হয় যে আমিও ওভাবে খেলি। কিন্তু আমি যেই ধরণের ব্যাটার আমার জন্যে তা জটিল। দেখতে খুব ভাল লাগে, সুন্দর লাগে। একটা জিনিস ভাল শান্ত খারাপ বল ছাড়ে না। খারাপ বল বাউন্ডারি করে। যে গরম, এই কন্ডিশনে দুই ইনিংসে একশো করা অনেক বড় অর্জন বলে মনে হয় আমার কাছে।’

এক সময় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বর স্থান মুমিনুলের জন্যে ছিল বরাদ্দ। সময়ের ঘেরাটোপে সেই স্থান এখন শান্তর দখলে। তবে তাতে বরং খুশি মুমিনুল। তিনি প্রফুল্ল শান্তর এই সাফল্যে। এমনকি তার এই অসাধারণ ফর্ম ধরে রাখার টোটকাও দিয়েছে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।

তিনি বলেন, ‘সে তখনই বড় খেলোয়াড় হয় যখন তার পারফরমেন্স ভাল হয়ে থাকে, তখন তা চলতে থাকবে, চলতে থাকবে। আমার মনে হয় ও পারফরমেন্সের উপর ফোকাস রেখে, নিয়মিত পারফরম করে যাওয়াটাই ওর জন্যে যথেষ্ট। ও যে প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল, সেটাই বজায় রাখা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link