প্রতিভার ছড়াছড়ি ভারতীয় ক্রিকেটে। প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দেশে প্রতিভার অভাব হয়নি কখনোই। উল্টো ভুল সময়ে জন্মানো অনেক ক্রিকেটারই সুযোগের অভাবে হারিয়ে গেছেন ভারতের ক্রিকেট থেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে অভাববীয় সব পারফরম্যান্স করার পরেও আকাশী-নীল জার্সি গায়ে তোলার সৌভাগ্য হয়নি অনেক ক্রিকেটারেরই।
সম্প্রতি সরফরাজ খান আছেন এমন অভাগা ক্রিকেটারের মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায়। গত তিন মৌসুম ধরে ভারতের লাল বলের ক্রিকেটে সবচেয়ে জৌলুসপূর্ণ ঘরোয়া টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফিতে অতিমানবীয় পারফর্ম করেও এখনো ভারতীয় দলের ডাকটাই পাননি সরফরাজ। সরফরাজ বয়সে তরুণ। এখনো অনেকটা সময় পড়ে আছে ভারতের হয়ে খেলার।
কিন্তু এমন অনেক ক্রিকেটারই আছেন যাদের পুরো ঘরোয়া ক্যারিয়ারটাই কেটে যায় অপেক্ষায়। কিন্তু ক্যারিয়ারে শেষ অবদি হাল ছাড়েননা অনেকেই। অপেক্ষাটা করে যান শেষ পর্যন্ত। তেমনই একজন সৌরাষ্ট্রের ক্রিকেটার শেলডন জ্যাকসন। ৩৭ বছর বয়সেও যিনি স্বপ্নটা জিইয়ে রেখেছেন ভারতের জার্সি গায়ে জড়ানোর।
রঞ্জিট্রফিতে সৌরাষ্ট্রের হয়ে খেলা জ্যাকসন গত বছর খেলেছেন আইপিএলেও। ৯০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা জ্যাকসন খেলেছেন ৭৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করলেও কখনোই জাতীয় দলে আসার আলোচনাতেই সেভাবে ছিলেন না জ্যাকসন।
গতবছর আগস্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করেছিলেন জ্যাকসন, ‘আমার বিশ্বাস করার এবং স্বপ্ন দেখার সেই অধিকার আছে যে, যদি আমি টানা তিন মৌসুম পারফর্ম করতে পারি তাহলে হয়তো আমি দলে ডাক পাব আমার পারফরম্যান্সের জন্য আমার বয়সের জন্য নয়। আমি এটা শুনতে শুনতে ক্লান্ত যে আমি আমি ভালো খেলোয়াড়, ভালো পারফর্মার কিন্তু আমার বয়স হয়ে গেছে৷ আমার বয়স ৩৫, ৭৫ নয়।’
ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে এলেও এখনো জাতীয় দলে খেলার জন্য ঠিক আগের মতই তাড়না অনুভব করেন জ্যাকসন। জানান, এই অনুপ্রেরণাটা তিনি পান ভারতের সাবেক দুই উইকেটরক্ষক ব্যাটার দীনেশ কার্তিক ও মাহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে।
ভারতের একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে জ্যাকসন বলেছিলেন, ‘আমি অনুপ্রেরণা পাই যখন আমি ধোনি ও কার্তিককে দেখি। আমি কার্তিকের সাথে কেকেআরে খেলেছি এবং তাঁর পুরো বদলে যাওয়াটা আমি দেখেছি। সে আমার জন্য সত্যিকারের অনুপ্রেরণা এবং এই ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে সে আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা।’
জ্যাকসন মনে করেন তিনি যদি ভালো খেলোয়াড় না হতেন তাহলে তিনি প্রায় একশর কাছাকাছি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে পারতেন না।
তিনি বলেন, ‘যদি সুযোগটাই আপনি না পান তাহলে ইমপ্যাক্টটা বোঝাবেন কি করে? আমি কারো দলে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে পারি না। আমি শুধু আমার কথা জানতে চাইতে পারি যে কেন আমাকে দলে নেয়া হয়নি? আমি কখনোই কোনো নির্বাচককে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করব না কেন আমাকে নেয়া হয়নি।’
জ্যাকসন আরো বলেন, ‘যদি আমি যথেষ্ট ভালো ক্রিকেটার না হতাম তাহলে আমি ৯০ এর বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ প্রায় পঞ্চাশ গড় নিয়ে খেলতে পারতাম না। আমার সাদা বলের পরিসংখ্যান ও লাল বলের পরিসংখ্যান সম্পূর্ণ আলাদা দুটো জিনিস।’