যেখানে ফারুকির ভয়, সেখানেই তামিমের রাত হয়

চারে চার। রীতিমত তামিম ইকবালের ভীতিতেই পরিণত হয়েছেন আফগান পেসার ফজল হক ফারুকি। বাংলাদেশের অধিনায়ককে কাবু করবার সকল টেকনিকই যেন নখদর্পণে বাঁ-হাতি এই পেসারের। ২০২২ সালে অভিষেক হওয়ার পরই যেন তামিম ইকবালকে ভীষণ পীড়ার মধ্যে রেখেছেন ফারুকি।

পীড়া অবশ্য তামিমের প্রথম ওয়ানডের বেশ আগে থেকেই ছিল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে চলমান সিরিজের একমাত্র টেস্ট খেলতে পারেননি তিনি, ইনজুরির কারণে। সেই ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠার আগেই অবশ্য তিনি খেলতে নেমেছেন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।

প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়ানোর আগে, তামিমকে ঘিরে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। চারিদিকে জোর গুঞ্জন, প্রধান কোচ চান্ডিকা হাতুরুসিংহে প্রচণ্ড চটে আছে তার অধিনায়কের উপর। এমনকি খোদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতিও নাখোশ তার উপর। ইনজুরি, আর দলের আশেপাশের সবার বিপক্ষে গিয়েই খেলতে নামলেন তামিম। বহুকিছু প্রমাণ করতে হতো তাকে।

তবে সেটা আর হতে দেননি ফজল হক ফারুকি। চতুর্থবারের মত তামিমের উইকেটটি নিজের পকেটে পুরেছেন বাঁ-হাতি এই পেসার। অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বল খেলার এক বাজে প্রবণতা রয়েছে তামিম ইকবালের। সেটা বেশ ভাল করেই জানা ফজল হক ফারুকির। তাছাড়া বেশ চাপ নিয়েই যে তামিম খেলছেন সেটাও জেনেই রেখেছেন ফারুকি।

তাইতো পঞ্চম স্ট্যাম্প বরাবর ফারুকির ছোড়া বলটা পেলো তামিমের ব্যাটের খোঁচা। বল গিয়ে এরপর জমা পড়লো রহমানুল্লাহ গুরবাজের দস্তানায়। ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে নিস্তেজ এক বদনে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক। আরও একবার তামিম-ফারুকি দ্বৈরথে বিজয়ী ফারুকি।

২০২২ সালে তিন ম্যাচের সিরিজে, তিন ম্যাচের ফারুকির শিকারে পরিণত হয়েছেন তামিম। এই চার দেখায় কেবলমাত্র ২০টি রানই সংগ্রহ করতে পেরেছেন তামিম ইকবাল খান। ৪৬টি বল খেলেছেন তিনি। একটিও ছক্কা হাঁকাতে পারেননি, দেশসেরা ওপেনার।

তবে এদিক থেকে বাহবা দিতেই হয় ফজল হক ফারুকিকে। কেননা তিনি অন্তত বেশ পড়াশুনাই করেছেন তামিমকে নিয়ে। এর আগের তিন দেখায় স্ট্যাম্প বরাবর বল করেছিলেন ফারুকি। তিন বারের দুই বারই তামিম ফিরেছিলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে পা দিয়ে। তৃতীয় ওয়ানডেতে ফারুকির ‘বুলস আই’। বল গিয়ে সোজা আঘাত করে স্ট্যাম্পে।

অস্থিতিশীল তামিমের মস্তিষ্ক সম্ভবত বারবার পুরনো স্মৃতিই সামনে নিয়ে আসছিল। তিনি হয়ত স্ট্যাম্পের দিকে অগ্রসর হওয়া যেকোন বলের জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু এবার আর তেমনটি হয়নি। দিনের শুরু থেকেই আফগান পেসারদের লাইন অফ স্ট্যাম্প ও তার বাইরের অঞ্চলে। যেমনটা তারা চর্চা করেছিলেন অনুশীলনে।

আফগানিস্তানের অনুশীলনে গত দু’দিনে একটা চিত্র বেশ নিয়মিতই ছিল। অফস্ট্যাম্পের উপরে মার্কার দিয়ে লাইন আর লেন্থের পরিচর্যা। সেই অনুশীলনটা অন্ততপক্ষে ফারুকির জন্যে ফলপ্রসূ হয়েছে বলাই যায়। তামিম বধের দারুণ এক অস্ত্রই পেয়ে গেছে আফগানিস্তান। অন্তত আসন্ন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে ফারুকিকে সামলানোই হবে তামিমের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

তাছাড়া এই সিরিজেও বারবার বিপাকে পড়তে হবে অধিনায়ককে। সে সবের আগে অবশ্য তামিমকে হতে হবে শতভাগ ফিট। তারপর ফজল হক ফারুকির চিন্তাধারায় নিজেকে একটু বসিয়ে দেখা প্রয়োজন। নতুবা দ্বৈরথের অপরপ্রান্তে বারংবার পরাজিত হতে হবে তামিম ইকবালকে। তেমনটা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link