হৃদয়ের চোখে বাংলাদেশের ঘাটতি যেখানে

একেবারেই বাজে একটি দিন বাংলাদেশের জন্য। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য। ব্যাটিং ধ্বসের চিত্রটা আরও একবার প্রকট হয়ে সামনে এল। মাত্র ১৬৯ রানেই থমকে গেছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। উইকেট পড়েছে নয়টি। ব্যাটারদের এমন দুর্দিনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, উইকেটে কোন সমস্যা ছিল কিনা।

যদিও ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে নিজের ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধ-শতক পাওয়া তাওহীদ হৃদয় বলেছেন ভিন্ন কথা। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে হৃদয় জানা তার কাছে খুব বেশি কঠিন মনে হয়নি উইকেট। তবে উইকেটের অসম বাউন্স বেশ ভুগিয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।

তিনি বলেন, ‘না আমার কাছে আসলে এরকম মনে হয়নি। উইকেট অতটা কঠিনও ছিল না। একটা জিনিস সমস্যা হইতেছিল উইকেটটা একটু নিচু ছিল। সকালে বাউন্সটা দুই রকম ছিল। আমি মনে করি যে, আমরা যদি আরেকটু ভাল ব্যাটিং করতাম, তাহলে হয়তবা খেলার চিত্রটা ভিন্ন হতো। সব মিলিয়ে আমাদের ব্যাটিংটা আজকে ভাল হয়নি।’

তবে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং বিপর্যয়ে এবারই প্রথম পড়েছে বাংলাদেশ, তেমনটা নয়। এর আগে ২০২২ সালেও একই চিত্রের অবতারণা হয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কিন্তু সেবার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন মিলে ইনিংস মেরামত করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেছেন। কিন্তু এবার আর তেমনটা করা হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের। অকপটে তাই হৃদয়ের সরল স্বীকারোক্তি।

তিনি বলেন, ‘এর আগেও তো এরকম আমরা ফেস করেছি। আমার মনে হয়, সেদিনটাতে কেউ না কেউ খেলে দিয়েছিল। যেমন শেষ সিরিজে মিরাজ ভাই আর আফিফ দুইজনে মিলে খেলাটা শেষ করেছিল। তো আমাদের বিশ্বাস ছিল যে আজকেও লোয়ার অর্ডার থেকে একটা ভাল পার্টনারশিপ হবে। তো ওই জায়গাটাই আজকে হয়নি। আশা করি, পরের বার এমন পরিস্থিতি আসলে, সেখান থেকে ভাল কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।’

বাংলাদেশের নয় উইকেটের পাঁচটি শিকার করেছে আফগান স্পিনাররা। যেই স্পিন আক্রমণকে ঘিরেই ছিল বাংলাদেশের যত ভয়। প্রতিবার রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান ও মোহাম্মদ নবীরা খাবি খাওয়ান তামিম, সাকিবদের। তবে তাতে অবশ্য হৃদয় আফগান স্পিন অ্যাটাকের প্রশংসা করতে পিছুপা হননি।

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, তারা তো বিশ্বের সেরা স্পিন সাইড বলে আমি মনে করি। এই স্পিন অ্যাটাকের সাথে যদি ভাল করা যায়, তাহলে প্রত্যেকটা স্পিনারকে খেলা সহজ হয়ে যায়। সাকিব ভাইয়ের সাথেও এই কথাই হচ্ছিল আমাদের খেলা শুরু হওয়ার আগে। আমি মনে করি একটু চ্যালেঞ্জিং হবে, তবে দিন শেষে এখান থেকে উৎরে গিয়েই আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে।’

খোদ সাকিব আল হাসান যখন আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণকে সমীহ করে চলেন, সেখানে সত্যিকার অর্থেই তেমন করার কিছু থাকে না। তবে বাংলাদেশের সাজঘরে কোন ধরণের নেতিবাচক আলাপের সূত্রপাত ঘটেনা। হৃদয় বলেন, ‘নেতিবাচক কোন আলাপ আমাদের হয় না।’ খারাপ সময়টাতেও তাই হৃদয়রা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই ব্যাটিং করে গেছেন।

একটা পর্যায়ে হৃদয় কেবল একাই ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে। স্বাভাবিক নিয়মে সেই সময়টায় ব্যাটাররাই নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নেন পুরোদমে। তবে সে সময়েও তাওহীদ হৃদয় স্ট্রাইক ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেননি। অপর প্রান্তে থাকা বোলারকে খেলতে দিয়েছেন অন্যতম ভয়ংকর বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে হৃদয় বলেন, ‘হয়ত হতো, ওভাবে চিন্তা করা হয় নাই। আমাদের স্বাভাবিক পরিকল্পনাই ছিল, দল থেকেই বলা হয়েছিল স্বাভাবিক পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা চলতে থাকবে। যা হবে শেষের দিকে হবে, শেষের তিন ওভারে দেখা যাবে।’ ১-০ তে পিছিয়ে পড়েও সিরিজ জয়ের আশা এখনই ছেড়ে দিতে নারাজ তাওহীদ হৃদয়।

‘অবশ্যই আমরা এখান থেকে খুব ভালভাবে কামব্যাক করবো। আমি মনে করি, এখান যে ছোট ছোট ভুল করেছি, তা যতটুকু সম্ভব কমানো যায়। তাহলে সেখান থেকে আমি মনে করি সিরিজ জেতা এখনও সম্ভব। আমরা অনেকেই আজকে আমাদের সেরাটা দিতে পারিনি। আমাদের মধ্যে দুই-তিনজন যদি আমরা কন্ট্রিবিউট করতে পারি, তাহলে আশা করি আমরা এখান থেকে ভাল কামব্যাক করবো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link