একটা সময় শেন ওয়ার্ন ঘূর্ণির জাদুতে মুগ্ধ করেছিল একটা গোটা প্রজন্ম। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যাদের জন্ম তারা খানিকটা আফসোসই হয়ত করত। ক্রিকেটের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠতে উঠতে, সেই কিংবদন্তি ছেড়ে গেলেন ক্রিকেটাঙ্গন। এমনকি ছেড়ে গেলেন মোহনীয় এই পৃথিবী।
ওয়ার্নের বোলিং দেখতে না পারার আক্ষেপটা সম্ভবত খানিকটা ঘুচিয়ে দিচ্ছেন রশিদ খান। এই যেমন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাওহীদ হৃদয়ের আউটটাই হতে পারে রশিদের সামর্থ্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তবে সামর্থ্যের চাইতেও তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়টাই পাওয়া যায়। একই স্পটে পরপর দু’টো বল স্পট করলো। প্রায় একই রকম ডেলিভারি।
লেগস্পিনটা হৃদয় ধরতে পেরেছিলেন ঠিক। কোনমতে কাভারের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। গুগলি যে রশিদের ধূর্ততার পরিচয়। সেখানেই মাত খেয়ে গেলেন হৃদয়। বল টার্ন করে বেড়িয়ে যাওয়ার বদলে, ঢুকে গেল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে। ব্যাস, বোল্ড হৃদয়।
সাদা বলের ক্রিকেটে বর্তমানে রশিদ খান মূর্তিমান আতংক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তো তিনি বিশ্ব সেরা। ব্যাটারদের রান তোলার তাড়ায়, তিনি নিজের পকেট ভারি করেন। অন্যদিকে ওয়ানডে ক্রিকেটেও তিনি রয়েছেন সেরা দশ বোলারদের একজন হয়ে। কিন্তু তাতে তুষ্টি নেই রশিদ খানের। তিনি নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চান। বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে যেতে চান।
অপেক্ষাকৃত দূর্বল একটি দেশের হয়ে, বিশ্ব দরবারে একটা বার্তা রেখে যেতে চান। ছোট দলের খেলোয়াড়রাও তো চাইলেই চোখে চোখ রেখে ছড়িয়ে দিতে পারে বড় হওয়ার তীব্র বাসনা। তাইতো রশিদ এবার নিজের ব্যাটিং নিয়ে বেশ মনোযগী। তিনি বেশ কার্য্যকরও বটে।
মূলত একজন বোলার হয়ে শুরু করা ক্যারিয়ারটাকে তিনি ক্রমশ টেনে নিয়ে যাচ্ছেন অন্য পথে। যেখানে অবশ্য রশিদ আর আফগানিস্তানের লাভের পাল্লাটাই ভারি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান তো এখনও বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন। একা সাকিব চাইলেই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
রশিদও সেটা পারেন বল হাতে। তবে তিনি ব্যাট হাতেও দলের জন্যে সমান অবদান রাখতে বেশ উদগ্রীব। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসে তার সেই স্পৃহার চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন সাগরিকার বুকে। প্রায় প্রতিটি অনুশীলন সেশনে রশিদকে দেখা গেছে ব্যাটিংটাকে ঝালিয়ে নিতে। ব্যতিক্রম ছিল না তৃতীয় ওয়ানডের আগের দিনও।
যখন ২-০ তে সিরিজ জিতে আছে তার দল, তখনও রশিদ খান নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে, বোলিং অনুশীলন যেমন করেছেন, ঠিক তেমনি ব্যাটিং অনুশীলনও করেছেন তিনি। প্রথমে খানিকক্ষণ নকিং শেষে নেটে বিভিন্ন বোলারদের মোকাবেলা করেছেন রশিদ।
এই যে নিজেকে নতুন এক চরিত্রে দেখার আগ্রহ, তার ফল কিন্তু একটু একটু করে পেতে শুরু করেছেন তিনি। লোয়ার মিডল অর্ডারে এখন তার উপর ভরসা করে তার দল। হোক সেটা জাতীয় দল কিংবা কোন ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক দল।
এই তো কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে খেলেন অবিস্মরনীয় এক ইনিংস। মাত্র ৩২ বলের ইনিংসে ১০টি ছক্কা হাকান, রান করেন ৭৯। তার কাছ থেকে দলের চাহিদা ব্যাট হাতে অন্তত এত বেশি থাকে না। তবুও তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে রাখছেন। ব্যাটে শাণ দিয়ে রাখছেন। টুক করে সেরা অলরাউন্ডারের দশ জনের একজন রশিদ হয়েই যেতে পারেন।
সাম্প্রতিক সময়ে নিজের স্ট্রাইকরেটের উন্নতির পাশাপাশি, নিজের ব্যাটিং গড়ের দিকেও নজর দিয়েছেন রশিদ। তবে দলের জন্যেই যেন নিজেকে নতুন করে গড়ে তোলার স্পৃহা জেগেছে রশিদ খানের মাঝে। তাইতো কোন প্রকার ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা নেই তার। একদিন তবে বনেই যাবেন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার।