তাওহীদ হৃদয়, সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন

শিরোপাজয়ী মানে শুধু একটা ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট জেতা নয়; শিরোপাজয়ী মানে শরীরের শিরা উপশিরায় সেরা হওয়ার প্রতিজ্ঞা। তাই তো একটা ট্রফি দিয়ে চ্যাম্পিয়নদের বিবেচনা করলে ভুল হবে; চ্যাম্পিয়নরা অনন্য, চ্যাম্পিয়নদের মানসিকতা হয় উন্নত। ওরাও হারে, কিন্তু হারকে ভয় পায় না; সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে ওরা জয়ের জন্য ছুটতে জানে।

চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার ধারণকারী এই ক্রিকেটাররা কেমন হন সেটা জানতে তাওহীদ হৃদয়ের দিকে তাকানোই বোধহয় যথেষ্ট। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা এই তরুণের শরীরী ভাষাতেই রয়েছে রাজসিক ভাব। তাঁর গেম অ্যাওয়ারনেস কিংবা আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় তিনি গড়পড়তা কেউ নন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দল যখন দিগভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল, তখন তাওহীদ হৃদয়-ই এগিয়ে এসেছেন কাণ্ডারি হতে। শক্ত হাতে হাল ধরেছেন, পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। তাঁর ৪৭ রানের অপরাজিত ম্যাচজয়ী ইনিংসে ছিল না অনভিজ্ঞতার ছাপ, এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়নি লাল-সবুজ জার্সিটা তাঁর জন্য এখনো নতুন।

পুরো ম্যাচজুড়ে নির্ভার থাকা তাওহীদ হৃদয় সংবাদসম্মলনেও বলেছেন দলের উপর বিশ্বাস রাখার কথা। তিনি বলেন, ‘আমার কনফিডেন্স ছিল সবার উপরেই। কারণ তাসকিন ভাই, নাসুম ভাই, শরিফুল এরা সবাই ভাল ব্যাটিং করে। তাসকিন ভাই ইংল্যান্ডের সাথে এরকম সিচুয়েশনে দুই বলে ব্যাক টু ব্যাক চার মেরে জিতিয়েছে। আর শরিফুলের উপর আমার কনফিডেন্স ছিল আগে থেকেই কারণ আমি জানি সে বড় বড় ছয়ও মারতে পারে।’

ম্যাচের সময় পরিকল্পনা কেমন ছিল সেটা নিয়ে তাওহীদ হৃদয় বলেন, ‘আমরা পজিটিভ থাকার ট্রাই করেছি। সবসময় আমাদের একটা মাথায় ছিল, সিচুয়েশন যেটা ডিমান্ড করবে সেভাবই আমরা এক্সিকিউট করার ট্রাই করবো।’

শামীম হোসেনের সঙ্গে ম্যাচ নির্ধারণী জুটির ক্ষেত্রে দু’জনের বোঝাপড়া ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করেন হৃদয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথ চলা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে, প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিলেন শক্তিশালী ইংলিশদের বিপক্ষে।

কিন্তু, দলে জায়গা পাকা করার জন্য রয়ে সয়ে ব্যাটিং করেননি তাওহীদ হৃদয়, খেলেছেন ১৭ বলে ২৪ রানের ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংস। তাঁর ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ছিল কিছু করে দেখানোর দৃঢ়তা।

ওয়ানডে অভিষেকে ৮৫ বলে ৯২, কিংবা বিদেশের মাটিতে ৫৮ বলে ৬৮; প্রতিটা ইনিংসেই তাওহীদ হৃদয় খেলেছিলেন সময়োপযোগী এপ্রোচ আর ইন্টেন্ট নিয়ে। মাত্র চার মাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে চার-পাঁচটি ‘ইম্প্যাক্টফুল নক’ উপহার দিয়েছেন এই ডানহাতি। অনেকদিন থেকেই বাংলাদেশ দল যে ধাঁচের মিডল অর্ডার ব্যাটার খুঁজে বেড়িয়েছে, হৃদয় ঠিক তেমনি একজন।

বাংলাদেশের মতো অনুন্নত ঘরোয়া কাঠামো থেকে উঠে আসা তাওহীদ হৃদয় যে অন্য অনেক ব্যাটারের চেয়ে একধাপ উপরে সেটা বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। রান হয়তো সবদিন করবেন না তিনি, তবে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলা আর জয়ের প্রতি তাড়না তাঁকে নিয়ে আলাদা করে ভাবতে বাধ্য করবে। অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে টানা তিন সেঞ্চুরি কিংবা লিস্ট এ ক্রিকেটে ৪৫ এর উপর ব্যাটিং গড়, এই তরুণকে নিয়ে আপনার ভাবাটাই তো স্বাভাবিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link