বেসবলের দেশে ক্রিকেট! কে বলে ক্রিকেটের বিশ্বায়ন নেই? ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আদলে এবার যে যুক্তরাষ্ট্রেও হচ্ছে বাইশ গজের মহারণের মহার্ঘ্য আয়োজন।
এর আগে বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার ক্রিকেট লিগ চালুর উদ্যোগ বারবার ধাক্কা খেয়েছে। অবশেষে তা পূর্ণতা পাচ্ছে এবার। পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর বাইরে এ বছরের শুরুতে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি চালু করে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
দ্বিতীয় দল হিসেবে ২০ ওভার ক্রিকেটে একই ধারার টুর্নামেন্ট চালু করল যুক্তরাষ্ট্র। তবে আইসিসির পূর্ণ সদস্য না হওয়ায় টুর্নামেন্ট দুটি অফিশিয়াল টি-টোয়েন্টির মর্যাদা পাচ্ছে না।
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির মর্যাদা না পেলেও অবশ্য আকর্ষণের কোনো কমতি নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বর্তমান ফেরিওয়ালাদেরই দেখা যাচ্ছে নতুন এ টুর্নামেন্টে।
ইংল্যান্ডের জেসন রয় এ টুর্নামেন্টে খেলতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। লিয়াম প্লাঙ্কেটের বসতিই তো এখন যুক্তরাষ্ট্রে।
এ ছাড়া আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক, ফাফ ডু প্লেসি, কাগিসো রাবাদা, ডেভিড মিলার, আফগানিস্তানের রশিদ খান, পাকিস্তানের শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিম, হারিস রউফ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, নিউজিল্যান্ডের ডেভন কনওয়ে, মার্টিন গাপটিল, লকি ফার্গুসন, অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ, অ্যাডাম জাম্পা, টিম ডেভিড ও মার্কাস স্টোয়িনিসের মতো ক্রিকেটাররা।
টি-টোয়েন্টির মর্যাদা নেই। ক্রিকেট মানচিত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো প্রতাপও নেই। এত কিছু না থাকার পরও কিভাবে এত জমকালো আয়োজন সম্ভব হচ্ছে?
কিংবা কোন আকর্ষণেই বর্তমান ক্রিকেটাররা এমএলসিতে যোগ দিচ্ছেন? অবশ্যই এর পিছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থযোগের সুযোগ।
তাছাড়া এমএলসির দলগুলোর মালিকানায় আছে ভারতীয় সব প্রতিষ্ঠিত ফ্রাঞ্চাইজি। ছয় দলের মধ্যে চারটির মালিকানায় আছে আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি— কলকাতা নাইট রাইডার্স, মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, চেন্নাই সুপার কিংস ও দিল্লী ক্যাপিটালস।
অন্য দুটির মালিকানা অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট নিউ সাউথ ওয়েলস ও ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া।এখানেই শেষ নয়। এমএলসির সাথে যুক্ত রয়েছেন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ব্যবসায়িক গোষ্ঠী দ্য টাইমস গ্রুপ এবং মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
ছয় দলের চারটির মালিকানায় আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকায় মূলত এ টুর্নামেন্টের গ্রহনযোগ্যতাও ছড়িয়েছে দারুণভাবে।আইপিএলের দলগুলোর উপস্থিতি থাকায় এখানে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের লোকদের আস্থা তৈরি হয়েছে।
তবে, এমএলসিকে আইপিএলের মিনি সংস্করণ বানাতে চান না আয়োজকেরা। এমএলসির টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর জাস্টিন জায়েলই যেমন বলেছেন।
তাঁর মতে, ‘বাণিজ্যিকভাবে ভারত ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বাজার। তবে এমএলসিকে আমরা মিনি আইপিএল বানাতে চাই না। নিজেদের একটা ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে চাই। এমএলসিকে যতটা সম্ভব আমেরিকান পণ্য হয়ে উঠতে হবে।’
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এমএলসির ভবিষ্যৎ কী? সহযোগী দেশের আয়োজন হয়ে কি দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে এ টুর্নামেন্ট? জায়েল অবশ্য বেশ আত্মবিশ্বাসী। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের বড় বাজার আছে। ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে চাইলে এখনই তার জন্য কাজ করে যেতে হবে।
পাকিস্তান বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের পেসার আলী খান তো আরেকটু বাড়িয়েই বলেছেন। তাঁর মতে, আইপিএলের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লিগ হবে এমএলসি। অবশ্য এমন ভবিষ্যদ্বাণীর পক্ষে যুক্তিও দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘বাজার, স্পন্সর, অর্থ— সব আছে এখানে। এটা বড় দেশ। অনেক সুযোগ। এই দেশ যেমন অনেকের জীবন বদলে দেয়, তেমনি এখানকার ক্রিকেটও বদলে যাবে, আশা করি।’
টেক্সাসের গ্র্যান্ড পিয়েরে স্টেডিয়াম। ২০২০ সালেও যেটি ছিল মাইনর লিগ বেসবলের মাঠ। ৩ বছর বাদে সেই মাঠটিই হয়ে উঠল ইতিহাসের অংশ। বেসবলের মাঠে হলো মেজর লিগ ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচ।
মূলত করোনা মহামারিতে বেসবল মৌসুম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একপর্যায়ে মাঠটি ইজারা নেয় মেজর লিগ কর্তৃপক্ষ। দুই কোটি মার্কিন ডলারের বেশি খরচে সংস্কার করা হয় মাঠটি।
আর এরপর তো ইতিহাস। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নাসার আইকনিক হিউস্টন স্পেস সেন্টারে প্লেয়ার্স ড্রাফট। এরপর জমকালো আয়োজনে বেসবলের দেশে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সূচনা।
শুরুর এই ধারাটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জই এখন আমেরিকার সামনে। কিছু পথ এগিয়ে গেলে, এগিয়ে যাবে ক্রিকেট, উঠে দাঁড়াবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট।