সাকিব দ্য ‘ক্যাপ্টেন কুল’

১৫ জন ক্রিকেটার। এদের সবাইকে আগলে রাখার দায়িত্ব এখন একজনের। তিনি সাকিব আল হাসান। দলের অধিনায়ক তিনি। নিজের কাজটা বেশ ভালভাবেই করছেন সাকিব। তাকে যেন কোন কিছুই ছুঁয়ে যেতে পারে না। তিনি যেন ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামলে নিতে জানেন,  ঠিক যেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।

অথচ বিশ্বকাপের আগে ঘটে গেছে নানা কাণ্ড। বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকেই খুঁজে পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপের শরীর ঘেষা সময়ে নানা ঝুঁকি মাথায় রেখেও অধিনায়কের দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছেন সাকিব। দ্বিধায় ছিলেন বটে। তবে দলের প্রশ্নে সকল দ্বিধা ছুঁড়ে ফেলে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড তুলে নিতে সমস্যা হয়নি তার।

সাকিব জানেন এই বিশ্বকাপে খানিক খারাপ হলেই সব দায় এসে তার উপরই বর্তাবে। এর পেছনের কারণ বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তের বিতর্ক। তামিম ইকবাল নিজেকে বিশ্বকাপ দল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। সেই দায়ভার পুরোপুরি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাকিবের উপর।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপের প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুতর এক অভিযোগ। তবে তিনি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে নিজেকে দায়মুক্ত করে যাওয়ার চেষ্টা করে গেছেন। তবুও একটা মানসিক অস্বস্তি থাকার কথা সাকিবের। তবে সে সবের ছাপ নেই বিন্দুমাত্র। তার ধ্যান-ধারণা যেন এবার কেবলই বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে অধিনায়কদের মিলনমেলায় নিজের প্রত্যাশার কথাই ব্যক্ত করেছেন দ্ব্যর্থ কণ্ঠে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেশ ভাল করেছে। সেই অনুযায়ী সমর্থকদের প্রত্যাশাও বেশি, সেটাই যেন আরও একবার মনে করিয়ে দেন সাকিব আল হাসান।

তাতেই প্রমাণ হয়ে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে সাকিবকে ক্রিকেট ব্যতীত আর কোনকিছুই প্রভাবিত করতে পারে না। ওই জার্সি গায়ে চাপালেই অন্য এক চরিত্রে পরিণত হন তিনি। এর আগেও বহুবার বিতর্ক এসে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। তবে মাঠের সাকিবের তাতে খুব একটা হেলদোল হয়নি।

মাঠে সাকিব স্থির। ঠিক চীনের প্রাচীর। তিনি জানেন তার কাজটা কি। তিনি জানেন পারফরমেন্সই দিয়ে দেবে সকল সমালোচনা আর বিতর্কের উত্তর। শীতল মস্তিষ্কে তিনি স্রেফ ম্যাচের পরিস্থিতিই পর্যালোচনা করে চলেন। সেই মোতাবেক দলকে পরিচালনায় থাকে তার পূর্ণ মনোযোগ।

এবারের দলটায় অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে দুর্দান্ত। এমন একটা দলের অধিনায়ক হিসেবে সাকিবই সম্ভবত সুযোগ্য। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। সেখানেই আসলে অধিনায়ক হিসেবে তার কর্মতৎপরতার একটা ধারণা পাওয়া যায়।

সর্বদা মাঠে তার সরব উপস্থিতি থাকে। তিনি প্রতিটা বলেই বোলারকে নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে সাহায্য করবার চেষ্টা করেন তিনি। তাছাড়া এশিয়া কাপে শেখ মেহেদীর কলার উঁচু করে দেওয়ার ঘটনাও নিশ্চয়ই মনে আছে। ছক্কা হজম করে মেহেদীর আত্মবিশ্বাসে খানিক ধাক্কা লেগেছিল। সাকিব দৌড়ে কাছে গিয়ে নিজ হাতে কলারটা উঁচু করে দেন। যেন আশ্বাস দেন, ‘ব্যাটা আমি আছি’।

এই বিষয়গুলোই আসলে সাকিবকে একজন অধিনায়ক হিসেবে যোগ্য বলে প্রমাণ দেয়। অভিজ্ঞতার কমতি নেই। দলের তরুণদের প্রতিটা মুহূর্ত ভরসা জুগিয়ে যান। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকি নেন, ‘ক্যালকুলেটিভ রিস্ক’। দলের প্রয়োজনে সবচেয়ে রুঢ় সিদ্ধান্ত নিতেও তিনি পিছপা হন না। এসবই তো সাকিবকে সামনে নিয়ে আসে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হিসেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link