তিনি চঞ্চল। তিনি ধূর্ত। তিনি সর্বদাই ক্ষুধার্ত। এই ক্ষুধা পারফরমেন্সের। এই ক্ষুধা দেশের জন্যে কিছু করবার। সাকিব আল হাসানের সেই ক্ষুধা মেটেনি বহু অর্জনেও। তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট হওয়ার নয়। তাইতো এবার বাংলাদেশ দলকে এনে দিতে চাইছেন সর্বোচ্চ সাফল্য।
গোটা দলটার মধ্যে এক প্রাণ সঞ্চার করেছেন তিনি। মাঠে করেছেন খুনশুটি। সতীর্থদের প্রতিটা মুহূর্তে রেখেছেন চনমনে। বটগাছের মত করেই ছায়া দিয়েছেন ছোটদের। নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের চাইতেও মুখ্য বিষয় হয়েছে তার অনুজদের আত্মবিশ্বাস ফেরানো।
সমূহ সুযোগ ছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে ফাইফার পাওয়ার। বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট শিকারের আরও একটু কাছে চলে যাওয়ার। তবে মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়েই তিনি চালিয়ে গেছেন বোলিং। যাতে করে অন্তত ব্যাট হাতে দারুণ করতে থাকা মিরাজ অন্তত বল হাতে খেই হারিয়ে না ফেলেন। ফলাফল মিরাজের হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।
বল হাতে সাকিব নিজেও শিকার করেছেন তিনি। তবে ব্যাট হাতে এই প্রথম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া হলো না তার। ডিপ স্কোয়ারের ক্যাচ দিয়ে ফিরতে ফিরতে তবুও একগাল হেসেছেন সাকিব। ভাবখানা এমন, তিনি শুধুই ‘কুল নাথিং এলস’।
কেননা তিনি বলেছেন এবার তার দলকে দেওয়ার পালা। তিনি অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে সবটুকু নিঙড়ে দিচ্ছেন গোটা দলের মাঝে। তরুণ, অনভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের আগলে রাখছেন পরম মমতায়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের জন্ম দিচ্ছেন তিনি মাঠ ও মাঠের বাইরে। যাতে করে আত্মবিশ্বাসের এক শীতল হাওয়া বয়ে যায় সমগ্র শিবিরে।
‘ক্যাপ্টেন কুল’ একেবারের গ্লেসিয়ার গলা পানিই যেন প্রবাহিত হচ্ছে তার ধমনীতে। কোন কিছুরই তোয়াক্কা তিনি করছেন না। নিজের দৃষ্টি রাখছেন স্থির। একেবারে শিকারি বাঘের মত। তিনি জানেন এদফা খারাপ কিছু হলেই সব আঙুল উঠবে তার দিকে। নিন্দুক আর সমালোচকরা যেন সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। একটুখানি পা হড়কে গেলেই নিন্দার ঝড়ে উড়ে যাবে যা কিছু ভাল।
তবুও সাকিব একেবারেই নির্ভার। তিনি দলের প্রতি রাখছেন পূর্ণ আস্থা। একটা দারুণ জয় এলো বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে। একটা মোমেন্টামের লক্ষ্যেই ধর্মশালায় মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। সাকিব সেই মোমেন্টামের পথে দলকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে দেননি।
সময়ে সময়ে দূর্দান্ত বোলিং পরিবর্তন। নিজ কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন। ভয় তিনি কখনোই পাননি। ঘাড়ের উপরে থাকা দেড় কেজির মস্তিষ্কটা তার চলে দূর্দান্ত। পরিস্থিতি বুঝে তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একেবারে ঠিকঠাক। অকুতোভয় এক নেতা হয়ে বারংবার সামনে এসেছেন তিনি। ব্যতিক্রম হয়নি আফগানদের বিপক্ষে, বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে।
যখনই দলের প্রয়োজন হয়েছে হাজির হয়েছেন। ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে পারেননি। সে কথা দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। তবে বল হাতে ব্রেকথ্রুগুলো এনে দিয়েছেন। দলের বাকিদের যেন বিনা শব্দ খরচে জানিয়ে দিয়েছেন, ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই।
তাইতো দলের প্রতিটা খেলোয়াড় তার নেতৃত্বে থাকছেন নির্ভার। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিতে নেই কোন কার্পণ্য। পরিশেষে নিজের একটা বিকল্প তৈরি করেই যাচ্ছেন তিনি। নিজে হাতে, দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করছেন সবটা। তিনি এদফা দলের জন্যে সত্যিকার অর্থেই নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন।