ঠিক যেমনটা অনুমিত ছিল। হয়েছে তেমনই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনজন স্পিনার নিয়েই খেলতে নেমেছিল ভারত। আর সেই কৌশলের ফলাফল ষোল আনাই পেয়েছে রোহিত শর্মার দল। ভারতের স্পিনারদের ঘূর্ণিতে ঘুরপাক খেয়েছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
একেবারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানানো হলো বিশ্বকাপে অধিকাংশ উইকেটই হবে ব্যাটিং সহায়ক। তবে নিজের চিরচেনা রুপ এক ছটাক বদালয়নি চেন্নাইয়ের উইকেট। চিপকের উইকেটে ছিল না গতি। প্রথমত উপমহাদেশের বাইরের দল খানিকটা দূর্বল স্পিনের বিপক্ষে। যদিও চেষ্টার কমতি নেই। তবে প্রস্তুতির সময় নিশ্চয়ই এমন স্লথ গতির উইকেটে অনুশীলন করা হয় না।
ঠিক সেখানটায় ভারত মাত দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। একাদশে রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়াও অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তাছাড়া ফর্মের তুঙ্গে থাকা কুলদ্বীপ যাদবকে বাদে দেওয়া তো প্রশ্নই ওঠে না। ব্যাস! ভারতকে আর ঠেকায় কে।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের টুঁটি চেপে ধরলেন ভারতীয় তিন স্পিনার। অবশ্য আঘাতের শুরুটা করেছিলেন লম্বা বিরতির পর দলের ফেরা জাসপ্রিত বুমরাহ। মিচেল মার্শকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন বুমরাহ। এরপর অস্ট্রেলিয়ার শিবিরে জলোচ্ছ্বাসের মত করে আছড়ে পড়তে শুরু করেন জাদেজা, অশ্বিন ও কুলদ্বীপ। তাতে ব্যাটিংয়ের বাঁধ ভাঙে অজিদের।
কুলদ্বীপের বলে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া ডেভিড ওয়ার্নার ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। এরপর আর বলার মত কেউই অস্ট্রেলিয়ার ত্রাতা হতে পারেননি। দারুণ টার্নিং একটা বলে জাদেজা উপড়ে ফেলেন স্টিভেন স্মিথের উইকেট। ব্যাস, সকল প্রতিরোধের সমাপ্তি যেন সেখানেই।
এরপর আসা-যাওয়ার অসম মিছিলে এক এক করে সামিল হতে থাকেন মার্নাস লাবুশেন, অ্যালেক্স ক্যারি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, ক্যামেরুন গ্রিনরা। নিজেদের মধ্যে উইকেট ভাগাভাগি করে নেওয়ার উৎসবে অংশ নেন ভারতীয় তিন স্পিনার।
তিন স্পিনারের বিপক্ষেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের বেশ ইতস্তত বোধ করতে দেখা গেছে চেন্নাইয়ের বাইশ গজে। একটু থেমে আসা বল। সেই সাথে স্পিনারদের খর্ব গতি। তাছাড়া দারুণ সব টার্ন। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নাভিশ্বাস উঠে যাওয়ার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে ভারতীয় ত্রিফলা স্পিন আক্রমণ।
অন্তত স্পিনারদের ইকনোমি রেট দেখলেই আন্দাজ হয়ে যাওয়ার কথা, যে ঠিক কতটা বিপাকেই অস্ট্রেলিয়াকে রেখেছিল অশ্বিনরা। তিন স্পিনারের মধ্যে সবচেয়ে কম ইকোনমি রেট রবীন্দ্র জাদেজার। এই অলরাউন্ডার ২.৮০ ইকোনমি রেটে রান দিয়ে নিয়েছেন ৩টি উইকেট।
অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি ইকনোমি রেট ছিল কুলদ্বীপের। তবে সেটাও চারের ঘরে। ৪.২০ ইকোনমিতে তিনি রান দিয়েছন। নিয়েছেন ২টি উইকেট। এছাড়া অশ্বিনের কপালে জুটেছে কেবল একটি উইকেট। তবে তার ইকোনমি রেট ছিল আবার তিনের ঘরে।
অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডার একেবারে তছনছ করে দেন জাদেজারা। তাতে খুব বেশি সংগ্রহ আর গড়া হয়ে ওঠেনি অজিদের। তবে আরও খানিকটা দুর্ভাগ্যের বিষয় এমন স্লথ গতির উইকেটে ভারতকে থামিয়ে দেওয়ার অস্ত্র বলতে স্রেফ অ্যাডাম জাম্পাই রয়েছে অজিদের। তাতে অবশ্য পরাজয় আটকে রাখা কঠিন।