রান বন্যা হবে। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর আগে সবার মুখেই ঘুরেছে সেই কথা। বাস্তবতায়ও হচ্ছে তাই। রানের স্রোত যেন থামবার নয়। ব্যাটাররা যেন অদম্য এক গতিতে ছুটছেন। যেন শতক হাঁকানোর একটা নেশা ছড়িয়ে গেছে পুরো বিশ্বের ব্যাটারদের মাঝে।
প্রথম সপ্তাহে শেষে এবারের বিশ্বকাপটা অন্যরকম এক রেকর্ডে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। শুরুটা অবশ্য করেছিলেন ডেভন কনওয়ে। পাঁচ ভাগের প্রথম ভাগের শেষের সেঞ্চুরিটা এসেছে স্বাগতিক ব্যাটার রোহিত শর্মা ব্যাট থেকে। মাঝে আরও ৯ খানা সেঞ্চুরি দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। সাত দলের ১১ জন ক্রিকেটার প্রথম নয় ম্যাচেই ছুঁয়ে দেখেছেন শতকের মাইলফলক।
স্রেফ এই তথ্যই প্রমাণ করে ব্যাট হাতে কি দারুণ সময় কাটাচ্ছেন ব্যাটাররা! প্রত্যেক ব্যাটার রীতিমত উপভোগ করছেন ব্যাট হাতে নিজেদের দূর্দান্ত সময়। এমনকি প্রথম নয় ম্যাচে এত বেশি সেঞ্চুরি এর আগে কখনো হয়নি। এর আগে সর্বোচ্চ ৭টি সেঞ্চুরি হয়েছিল ২০০৩ বিশ্বকাপে।
এরপর কেটে গেছে অনেকটা সময়। প্রায় দুই দশক পরে এসে ব্যাটারদের সেঞ্চুরি করার প্রবণতা বেড়েছে দেড়গুণ। অবিশ্বাস্য ঠেকছে নিশ্চয়ই! তবে এখানেই থমকে গেলে হবে না। এবারের ভারত বিশ্বকাপ যেন রেকর্ডের বইকে তছনছ করে দেওয়ার ব্রতই নিয়েছে।
বিশ্বকাপের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ চার সেঞ্চুরিরও দেখা মিলেছে এবারের বিশ্বকাপে। প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই একটি করে সেঞ্চুরির দেখা মিলছে এবারের আসরে। তাইতো সবচেয়ে কম সময়ে দশটি সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও হয়ে গেছে। স্রেফ বিশ্বকাপ নয়। এর আগে এত অল্প ম্যাচের দৈর্ঘ্যে দশটি সেঞ্চুরির দেখা পায়নি বিশ্ব ক্রিকেট। এবারের বিশ্বকাপকে মাত দিচ্ছে কেবল ২০১৬ সালের ভারত-অস্ট্রেলিয়া দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। সেবার ৫ ম্যাচে ১০ খানা সেঞ্চুরি হয়েছিল।
অন্যদিকে বিশ্বকাপে স্রেফ ৮টি ম্যাচ লেগেছে ১০টি সেঞ্চুরি হতে। একটা সুস্থ প্রতিযোগিতাই যেন চলমান। প্রতিটা ব্যাটারই যেন নিজেকে এবং প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এক দৌড়ে নেমেছেন। তাতে করে দর্শকদের প্রাপ্তি নিখাদ বিনোদন বৈ আর কিছুই নয়।
এমনকি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত এক ইনিংসে তিনটি সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও নিজের দখলে করে ফেলেছে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছিল। কুইন্টন ডি কক, রসি ভ্যান ডার ডুসেন ও এইডেন মার্করাম এই তিনজন একই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার মত বিরল ঘটনার জন্ম দেন।
অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান ম্যাচে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কেবল তৃতীয়বার চারজন ভিন্ন ব্যাটারের রান তিন অংকের ঘর ছুঁয়েছে। আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান পাকিস্তানের পক্ষে বিশ্বকাপের এক ইনিংসে দুইটি সেঞ্চুরি পেয়েছে। একই চিত্র নিউজিল্যান্ড শিবিরে। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেই ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্র সেই রেকর্ডটি নিজেদের করে নেন।
যেন উন্মত্ত এক প্রতিযোগিতা। সেঞ্চুরি তো হচ্ছেই, তবে দ্রুততম সেঞ্চুরির মিশনেও নেমেছেন যেন ব্যাটাররা। এইডেন মার্করাম ৪৩ বলে সেঞ্চুরি করেছেন। রোহিত শর্মার লেগেছে ৬৩ বল। কুশল মেন্ডিস তিন অংকে পৌঁছেছেন ৬৫ বলে।
তাদের করা এই দ্রুত গতির সেঞ্চুরি জায়গা করে নিয়েছেন সর্বকালের দ্রুততম সেঞ্চুরির সেরা দশে। এছাড়া ১১টি সেঞ্চুরির মধ্যে ১০টিই এসেছে দ্রুতগতিতে। ১০০ বলেরও কম খরচ করেছেন ব্যাটাররা। নিতান্তই এক বিস্ময় জাগানিয়া বিশ্বকাপ।
এই সেঞ্চুরির মহোৎসব ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে, সেটা অজানা। তবে বিনোদনের কমতি হচ্ছে না এক ছটাক। ব্যাটাররা তৃপ্তি খুঁজে নিচ্ছেন বড় বড় সব ইনিংসে। আর দর্শকদের চাহিদাও যেন বেড়েই চলছে। রেকর্ডের পাতা যুক্ত হবে নয়ত কাটাকুটি হবে শ’খানেক। এখনও তো সফর বাকি অনেকটা।