বিশ্বকাপের একটা ম্যাচ। ঠিক কতটা ক্লান্তি উৎপাদক সেটা আর বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। দর্শকরাই তো ম্যাচ উপভোগ করে ক্লান্ত বদনে বাড়ি ফেরেন। তবে একজন খেলোয়াড়ের অবস্থাটা নিশ্চয়ই আরও খানিকটা বেগতিক হবার কথা। তিনি ম্যাচটি খেলেছেন। শারীরিক অবসাদের সাথে মানসিক অবসাদও তাঁকে ঘিরে ধরার কথা। তেমনটাই হয়। রাজ্যের চাপ সামলে পারফর্ম করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।
সেই খেলোয়াড়টা নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেন, দিনশেষে তিনি নিজের হোটেল রুমে ফিরবেন। সেখানে একটু একান্ত সময় কাটাবেন। পরিবারের মানুষদের সাথে কথা বলবেন। সর্বোপরি বিশ্রাম নেবেন। তাঁকে অপ্রয়োজনে কেউ বিরক্ত করবে না। তিনি আপন মনে নিজের রিকোভারি করবার কাজটুকু করে যাবেন। একজন সাধারণ মানুষও দিনশেষে গিয়ে এই প্রত্যাশাটুকুই করে।
বিরাট কোহলিও ব্যতিক্রম নন। তিনিও তো দিনশেষে মানুষ। হ্যাঁ, গোটা ক্রিকেট বিশ্বে তিনি পরিচিত মুখ। তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের সংখ্যাটা অগণিত। সবাই হয়ত মুখিয়ে থাকেন বিরাট কোহলি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে, তাঁর জীবনযাপনের প্রতিটা মুহূর্ত সম্পর্কে অবহিত হতে। এমন পাগলাটে ভক্তদের অভাবও নেই নিশ্চয়ই। কোহলি নিজেই স্বীকার করেছেন এই সব কিছু।
তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টা বুঝি যে সমর্থকরা তাদের পছন্দের খেলোয়াড়দের দেখতে পেলে, তাদের সাথে আলাপ করতে পারলে প্রচণ্ড খুশি এবং উচ্ছ্বসিত হয়। আমি এই বিষয়টা বুঝতে পারি এবং সম্মতিও রয়েছে আমার।’
কিন্তু, এই বিরাট নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করেন না যে তাঁর অগোচরে তাঁর শোবার ঘরে কেউ ঢুকে পড়ুক। ভিডিও ধারণ করুক। এমনটাই ঘটেছে বিরাটের সাথে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের সময় ভারত দল উঠেছিল পার্থ শহরের ক্রাউন পার্থ নামক এক হোটেলে। সেখানে বিরাট কোহলির অবর্তমানে তাঁর রুমে ঢুকে ভিডিও ধারণ করেছেন হোটেল সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি। শুধু যে ধারণ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন সেই ব্যক্তি, বিষয়টি তেমনও নয়। তিনি সেটা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও আপলোড করেছেন। এতে করে বেজায় মনক্ষুন্ন হয়েছে বিরাটের। তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও সন্দিহান।
তিনি বলেন, ‘এই ভিডিওটা বেশ ভয়ংকর এবং আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শঙ্কিত। যদি আমি আমার হোটেল রুমেই নিজের মত করে থাকার সুযোগ না পাই তবে কোথায় পাব? আমি এমন ধরণের কর্মকাণ্ডের সাথে অভ্যস্ত না। দয়া করে মানুষের একান্ত গণ্ডিকে সম্মান করা শিখুন আর কাউকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবেন না।’
নিজের ভয়ের কথা প্রকাশ করবার পাশাপাশি তিনি তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের আকুতি জানিয়েছেন এমন কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটাতে। যদিও ক্রাউন পার্থ হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন। তবুও এই ধরণের কর্মকাণ্ড নিশ্চয়ই ভাল কোন বার্তা দেয় না। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে ভারত দলের সাথে ঘটে যাওয়া অব্যবস্থাপনাও নিশ্চয়ই অগ্রাহ্য করা যায় না।
এই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডই নানা অজুহাতে বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তানে সিরিজ বাতিল করে। তবে তাঁরা বাকি দলগুলোর নিরাপত্তায় গাফিলতি করে যাচ্ছেন দেদারছে। অব্যবস্থাপনারও তো কমতি নেই। সেই সাথে বৃষ্টির আশঙ্কা মাথায় নিয়েও বিকল্প কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়নও দেখা যায়নি দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে। এমন দায়সারা ব্যবস্থাপনা নিশ্চয়ই আইসিসির কঠোর হাতে দমন করা উচিৎ। অথবা ক্রিকেট মোড়ল বলেই কিনা পার পেয়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া।