সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না সৌম্য সরকারের। তিনি যেন নিজের হারিয়ে যাওয়ার সত্ত্বার খোঁজে অবিরত ছুটে চলেছেন। তবে সেই ছুটে চলা সবার চোখে পড়ে না। পড়লেও তা ভীষণ দৃষ্টিকটু লাগে। তবে সব অন্ধকার ঠেলে যেন সৌম্য আবারও ফিরে আসার একটা আভাস দিলেন। একেবারেই ফুরিয়ে যাওয়া জলাধারে যেন এক পশলা বৃষ্টির দেখা।
বাজে সময় কিংবা ভাল সময়, এসব কিছুই ক্ষণস্থায়ী। এই সময়গুলো হাওয়া মিলিয়ে যাওয়া অবধারিত। তবে কেন যেন সৌম্য সরকারের সেই খারাপ সময়টা বেশ লম্বাই হল। এখনও বলা মুশকিল যে তিনি আদৌ সে সময় কাটিয়ে উঠতে পারলেন কি না। তবুও একটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস নিশ্চয়ই প্রবাহিত হয়েছে। কেননা দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে হেসেছে সৌম্যের ব্যাট। তিনি পেয়েছেন অর্ধশতকের দেখা।
১২৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে খেলা ইনিংসটা হয়ত সৌম্যের সবটুকু সক্ষমতার কথা বলে না। তবুও এই ৫৭ রানের ইনিংসটি বিশাল এক বোঝামুক্ত হতে নিশ্চিতভাবেই সহয়তা করবে সৌম্য সরকারকে। নেট অনুশীলন থেকে ম্যাচে কোথাও ব্যাটে বলে সংযোগটা ঠিক ঘটাতে পারছিলেন না সৌম্য। সেই সৌম্য অবশেষে দারুণ এক ব্যাটিং প্রদর্শনী করলেন মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে।
এদিন অবশ্য তাঁর দল ঢাকা ডমিনেটর্স ভুগেছে দারুণভাবে। প্রতিপক্ষ বোলার নাহিদুলের স্পিন বিষে নীল রাঙা হয়েছে ঢাকার ব্যাটিং অর্ডার। আট ওভারেই ৩৮ রানে নেই চার উইকেট। এমন এক ধ্বংসস্তুপের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেও সৌম্য লড়াইটা চালিয়ে গেছেন। তিনি লড়াইটা করে গেছেন দলের জন্যে। তিনি লড়াইটা করে গেছেন নিজের জন্যে।
এমন বৈরি পরিস্থতিতে ঢাকার ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অন্তত কাওকে প্রয়োজন ছিল। সেই মুহূর্তেই সৌম্য বাড়িয়ে দিলেন সাহায্যের হাত। তিনি বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সফলতাও পেয়েছেন। যেখানে ১০০ রানের নিচেই অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা, সেখানে দল কোনরকম ১০০ এর গণ্ডি পেরিয়েছে। অবশ্য এর থেকেও বাজে চিত্র হতে পারত।
সৌম্যের ৫৭ রানের সুবাদে ১০৮ রানের মামুলি পুঁজি পায়। সৌম্য দলের পক্ষে একাই লড়াইটা করে যান। বাকিরা স্রেফ আস-যাওয়ার মাঝেই ছিলেন ব্যস্ত। তাইতো লজ্জাজনক আরও এক হারের সাক্ষী হওয়া যেন ছিল অবধারিত। কিন্তু তাতে অবশ্য সৌম্যর এই ফিরে আসার গল্পটা মিথ্যে হয়ে যায় না। একটু একটু করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টাটা অবশ্য এখনই থামিয়ে দিতে চিয়াবেন না সৌম্য।
এবারের বিপিএলে বাকি সাত ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৫ রান। আর খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে তিনি করে ফেলেন ৫৭ রান। যেই ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও দুইটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কার মার। আত্মবিশ্বাসী অবশ্য তিনি ছিলেন না শুরুর দিকে। তবে ক্রমশ সৌম্য নিজের উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেন। চারিদিকে প্রচণ্ডরকম নেতিবাচকতা টপকে তিনি ছুঁয়ে ফেলেন অর্ধশতকের মাইলফলক।
বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে নান্দনিক ব্যাটারদের উদাহরণ খুব একটা নেই। ছোট্ট সেই তালিকায় সৌম্য সরকার নিজেকে খুঁজে পান নিশ্চয়ই। তাইতো তাঁর ফিরে আসা জরুরি। ভীষণ জরুরি।