আগে কখনোই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ, জেতা তো দূরে থাক কিউইদের মাটিতে কখনো ড্রয়ের স্বাদও পায়নি টাইগাররা। তাই ২০২২ সালের প্রথম দিন যখন তাসমান সাগর পাড়ে মুখোমুখি হয়েছিল দুইদল, তখন কেউই বাজি ধরার সাহস পায়নি বাংলাদেশকে নিয়ে।
কিন্তু সব কাগজ-কলমের হিসেব উল্টে দিয়ে, পুরনো পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাঁচই জানুয়ারি অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। যাদের বিপক্ষে এতদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটাও দুঃসাধ্য ছিল বাংলাদেশের জন্য, তাঁদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে বে ওভালে সেদিন মহাকাব্য রচনা করেছিল মুমিনুল হকের দল।
জয়টা পাঁচ তারিখে এলেও, খুশির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়েছিল আগের দিন। ইবাদত হোসেনের অতিমানবীয় এক স্পেলে তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিল ব্ল্যাক্যাপসদের ব্যাটিং লাইনআপ। সবমিলিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট তুলে স্বাগতিকদের মাত্র ১৬৯ রানেই আটকে দেন এই পেসার।
এর আগে অবশ্য দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল, লিটন দাস প্রত্যেকেই খেলেছেন পপঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস। তাঁদের এমন পারফরম্যান্সেই ১৩০ রানের লিড পায় টাইগাররা, ফলে জয়ের পথটা একেবারে সহজ হয়ে গিয়েছিল।
অথচ ঘরের মাঠে ১৭ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ছিল টম লাথাম, রস টেইলররা। তখনকার টেস্ট চ্যাম্পিয়নও ছিল দলটি, সেজন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই ব্যাট বলের লড়াইয়ে নেমেছিল তাঁরা – তবে সবার মিলিত অবদানে শেষ হাসি হাসে এশিয়ান প্রতিনিধিরা, এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের রেকর্ডও তৈরি হয়।
বাংলাদেশের জন্য টেস্টে জেতাটাই বিরল ঘটনা। আর খেলা যদি বিদেশে তাহলে তো কথাই নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জয়টা ছিল সর্বশেষ তিন বছরে টাইগারদের তিন নম্বর জয়! আর পুরো ইতিহাসে ষষ্ঠ অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতার ঘটনা – সবমিলিয়ে তাই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের দ্বৈরথ লাল-সবুজের ক্রিকেট উপন্যাসের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়গুলোর একটি হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
এরই মধ্য দিয়ে টাইগাররা শুনিয়েছিলো বাঘের গর্জন, যেকোনো মাঠে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও বাংলাদেশ জিততে জানে সেই বার্তা দেয়া হয়েছিল সেদিন। তাই তো বিশ্বের সব ক্রিকেটপ্রেমীর কণ্ঠে ছিল প্রশংসার সুর আর বিস্ময় ছিল তাঁদের একজোড়া চোখে।