নিশামের অভিধানে নেই কোন ‘নিস্তার’

চার, নো-বলে চার, টানা দুইটি বিশাল ছক্কা, পঞ্চম বলে আরও একটি ছক্কা। মুশফিক হাসানকে রীতিমত তুলোধুনো করলেন জেমি নিশাম। তরুণ এই পেসারের এক ওভারেই তুলে নিলেন ২৮ রান! তবুও খানিকটা আফসোস নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন ব্ল্যাকক্যাপস অলরাউন্ডার। মিরপুরের হাজার খানেক রঙের মাঝেও এক চিলতে ধূসর বিষাদ।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ। কোয়ালিফায়ারে মুখোমুখি রংপুর রাইডার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। প্রায় ২৬ হাজার দর্শক দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হোম অব ক্রিকেট। সবার প্রত্যাশা এক জম্পেশ ক্রিকেটীয় লড়াইয়ের। তবে শুরুর দিকে নিরাশ হতে হয়েছে। টসে হেরে ব্যাটিং করতে নামা রংপুর খানিকটা বিপাকেই পড়েছিল। দ্রুতই তিন উইকেটের পতন ঘটে।

আরও একটি লো স্কোরিং ম্যাচের দিকেই যেন ধাবিত হচ্ছিল। তবে সেটা আর শেষ অবধি হতে দেননি জিমি নিশাম। ব্যাট হাতে একটা তাণ্ডব তুললেন মিরপুরের বুকে। প্রায় ১৯৮ স্ট্রাইকরেটের একটা টনের্ডো বয়ে যায় শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। যার শুরুটা হয়েছিল নিস্তব্ধ এক গুমোট আবহাওয়া দিয়ে।

নিজের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুর দিকটায় একটু রয়েসয়েই খেলেছেন জিমি নিশাম। সেটা তাকে করতেই হতো। ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসানও যে তার আগমনের আগেই ফিরেছিল প্যাভিলিয়নে, তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে। তাইতো ইনিংস বিল্ডআপ করবার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নিশাম।

ধীরলয়ে উইকেটে নিজের ঘাটি গাড়তে শুরু করেন নিশাম। দুই ওভার টিকে হাতখুলতে শুরু করেন নিশাম। এদিন ১৫টি বাউন্ডারি আদায় করে নেন নিশাম। বাউন্ডারির খাতা খোলেন তিনি ছক্কা হাঁকিয়ে। মুশফিক হাসানের বলেই শুরুটা করেন।

মিড উইকেটের সেই ছক্কাতে নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের গোড়ার দুর্যোগ দারুণভাবে কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। শেষ অবধি করেছেনও তাই। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ব্যাট করতে নেমে খেলেছেন একেবারে শেষ অবধি। থেকেছেন ৯৭ রান অপরাজিত।

শেষের ওভারে সেই মুশফিক হাসানকেই চিনিয়েছেন নিজের জাত। ধুন্ধুমার ব্যাটিং নৈপুণ্যে গোটা স্টেডিয়ামকে মাতিয়েছেন জিমি নিশাম। সাতটি সুবিশাল ছক্কা এসেছে তার ব্যাট থেকে। পাশাপাশি ৮টি চার মেরেছে ব্ল্যাকক্যাপস অলরাউন্ডার। তাতে করেই লড়াই করবার মত বিশাল এক পুঁজি পেয়ে যায় রংপুর রাইডার্স।

দারুণভাবে দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে দলকে নিয়ে গেছেন ১৮৫ অবধি। দক্ষতা আর অভিজ্ঞতার যথাযথ প্রমাণই তিনি রেখেছেন মিরপুরের বাইশ গজে। তবুও থেকে গেছে আফসোস। সেঞ্চুরি না করতে পারার আফসোস। মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল। শেষ বলে নিদেনপক্ষে একটি চার আদায় করতে পারলেও সেঞ্চুরি পেয়ে যেতে পারতেন নিশাম।

কিন্তু সবকিছুই তো আর ভাগ্যে থাকে না। কিছু অপ্রাপ্তি জীবন রেখে দেয়। তাতে করেই তো সাফল্য পাওয়ার তাড়না তীব্র হয়। নিজেকে ছাপিয়ে নতুন মাইলফলক তৈরি করবার অনুপ্রেরণা মেলে। নিশামরা তাইতো আক্ষেপকে নয়, জেদকে পুঁজি করেই হয়েছেন বিশ্বক্রিকেটের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। সবকিছু করেও শেষ অবধি অপ্রাপ্তি থেকে যায় ক্রিকেটে। তাইতো নিশামই বাচ্চাদের উপদেশ দিয়েছিলেন খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে বেছে না নিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link