আইপিএল ফাইনাল নতুন তারার জন্ম দেয়

হেভিওয়েট দেশি বিদেশি প্লেয়ারে ঠাসা দল নিয়ে ফাইনাল খেলতে নামলেও, দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে থেকে কিছু আনকোরা, স্বল্প খ্যাত নাম নামীদামিদের মধ্যেও ফাইনালে পারফর্ম করে গেছেন বরাবর।

শেন ওয়াটসন ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে আইপিএল ফাইনালের সর্বোচ্চ রান করেছিলেন। একমাত্র ব্যাটার যিনি দুবার ফাইনালের টপ স্কোরার হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ১১৭* আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে এখনও অবধি সর্বোচ্চ স্কোর। অন্যদিকে আছেন পোড়খাওয়া সুরেশ রায়না। ক্রিস গেইল, ফাফ ডু প্লেসিস।

২০১২, ২০১৬ ও ২০২১ সালের টপ স্কোরার। এরা প্রত্যেকেই ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত নাম। কিন্তু, এদের পাশাপাশি কীকরে ভুলি মনবিন্দার সিং বিসলাকে? কেকেআরের প্রথম আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করার নায়ক? মুরালি বিজয়ের ৯৫ কে ছাপিয়ে বিসলার ৮৯ আজও বহুল চর্চিত।

২০১৪ সালে পাঞ্জাব আর কেকেআর এর পক্ষে দু দুলেই দুজন অপ্রত্যাশিত পারফর্মার উঠে আসেন। ঋদ্ধিমান সাহা আজ অবধি মাত্র দুজন আইপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরিয়ানের একজন এবং আইপিএল ইতিহাসের প্রথম ফাইনালে শতরানকারী। জবাবে মানিশ পান্ডের ৯৪ কেকেআরকে দ্বিতীয় ট্রফি দিয়েছিল। ফাইনাল শুরুর আগে যদি কেউ বলতেন দুদলের টপ স্কোরার হবেন ঋদ্ধি আর পান্ডে, লোকে হাসতো।

আর এবার সাই সুদর্শন! ইনিংস শুরুর সময় কমেন্ট্রি বক্সে আলোচনা হচ্ছিল, একাই তিনি তাঁর মন্থর স্ট্রাইক রেট দিয়ে ম্যাচ হারিয়ে দেবেন কিনা! এই আইপিএলে কিছু ভালো ইনিংস খেললেও স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২০ র আশেপাশে ছিল। দক্ষিণ ভারতীয়রা শুধু ঋ কে Ru লেখে তাই নয়, দ কে dh আর ড কে d লেখে, উচ্চারণের তফাৎ বোঝার জন্যে।

তাই নিয়ে অনেক বাঙালি আবার নামটিকে বিকৃত করেও মজা করেছেন। ইনিংসের শুরুতে অনেকটা সময় মনে হচ্ছিল যে তিনি নিজের উইকেট বাঁচিয়ে খেলছেন, উঁচু শট মারছেন না, ছয় মারার এটেম্পট করছেন না, কিন্তু যতো ইনিংস এগিয়েছে তাঁর খেলা খুলেছে।

গিলের দ্রুত ফিরে যাওয়ার পরে যখন একটা সময় গুজরাট ১৮০ পেরোবে কিনা সন্দেহ হচ্ছিল, সাহার সাথে দুর্দান্ত একটা পার্টনারশিপ করে গুজরাটকে ম্যাচে ফেরালেন, এবং শেষে হার্দিকের সাথে তুলকালাম স্ট্রোক প্লের মাধ্যমে স্কোরটা পৌঁছে দিলেন চেন্নাইয়ের প্রায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্কোর গুজরাটের ২১৪! তবেও, অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি।

সুদর্শনের ৪৭ বলে ৯৬ আইপিএল ফাইনালের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান হয়ে থাকলো আপাতত। কে ভেবেছিলেন গিল, হার্দিক, মিলার কে ছাপিয়ে তিনি হবেন গুজরাটের হিরো? এবং ঋদ্ধিমান সাহা! প্রথম আইপিএল ফাইনালের শতরানের মালিক এই নিয়ে তিনটে ফাইনাল খেললেন।

গতবারের ব্যর্থতা বাদ দিলে, একটি সেঞ্চুরি, একটি হাফ সেঞ্চুরি, দুটোই ভালো স্ট্রাইক রেটে! ফাইনালের পক্ষে খুব একটা মন্দ নয় কি বলেন? গোটা আইপিএল সেভাবে নজর কাড়তে না পারলেও, ফাইনালে কিন্তু গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে গেলেন। আউট হবার পরে নেহেরার পিঠ চাপড়ে দেওয়া বুঝিয়ে দেয় ইনিংসটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আইপিএল ফাইনাল কখনো নতুন তারার জন্ম দেয়, কখনো বা নিভে যাওয়া তারাকে নক্ষত্র করে তোলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link