ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে পেশাদার দল কোনটা?
ইয়ান চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়া, ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা স্টিভ ওয়াহর অস্ট্রেলিয়া। তর্কের আর শেষ নেই। সব পক্ষের হাতে যুক্তি আছে। এই দল বেশি স্লেজিং করতো, ওই দল ওয়াক করতো, সেই দল উইকেটে রক্ত দেখতে পছন্দ করতো। পেশাদারিত্বের পক্ষে কতো যুক্তি!
অথচ ভেবে দেখেছেন যে, এরা কেউ আসলে সেই অর্থে ‘পেশাজীবি’ ছিলেন না। অন্তত তাদের নাম দিয়ে কী বিশেষ কোনো পেশাজীবি বলে চেনা যেতো? না, মোটেও না।
কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসে আপনি এরকম কয়েক’শ ক্রিকেটার পাবেন, যারা কাজে না হলেও নামে অন্তত পেশাজীবি। কেউ করনিক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ পাইলট। হ্যা, বাহারি সব পেশার নামের কথা বলছিলাম আমরা।
পাইলট সত্যি সত্যি কখনো বিমান চালাননি। কিন্তু নাম তো ওরকম একটা বটে। আমরা বরং নামে এমন পেশাদার যারা, তাদের নিয়ে একটা দল বানিয়ে ফেলি। দেখা যাক, কেমন হয় আমাদের পেশাদার দল।
- বিজয় মার্চেন্ট (ভারত)
বিশ্বাস করুন, ভারতের এই জগদ্বিখ্যাত ওপেনার সত্যিই ব্যবসা করতেন। ‘হিন্দুস্তান স্পিনিং অ্যান্ড ওয়েভিং মিলস’-এর সাথে জড়িত ছিলেন। তবে সে জন্য তার নাম মার্চেন্ট বা ব্যবসায়ী হয়নি।
মার্চেন্ট মূলত একটা অ্যাংলো-স্যাক্সন পদবী। ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড তো বটেই; উপনিবেশ কাল থেকে ভারতেও এই পদবীর লোকজন একেবারে কম নয়। বিশেষ করে গুজরাটে মার্চেন্টদের আধিপত্য একেবারে কম নয়। এই পদবীধারীদের আদি পেশা যে, ব্যবসা ছিলো, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই।
বম্বের মানুষ বিজয় মার্চেন্ট ভারতের প্রথম দিকের কিংবদন্তি। ১০টি টেস্ট খেলে ৪৭.২ গড়ে ৮৫৯ রান করেছেন। ফলে পেশাদার দলের ওপেনিং তিনি করতেই পারেন।
- অ্যালিস্টেয়ার কুক (ইংল্যান্ড) – সহ অধিনায়ক
বিজয় মার্চেন্ট এক সময় ব্যবসা করলেও তার সঙ্গী হিসেবে আমরা যাকে বেছে নিয়েছি, তিনি কোনো কালে বাবুর্চি ছিলেন বলে শোনা যায়নি। বাসায় একটু ভর্তা-ভাজি হয়তো করেছেন। কিন্তু কুকের চোদ্দ গুষ্টিতে কেউ পেশাদার রাধুনি ছিলেন বলেও জানা যায়নি।
তবে আমি নিশ্চিত যে, কুককে তার জীবনে বহুবার রান্না করার প্রস্তাব পেতে হয়েছে। টিম মেটরা নিশ্চয়ই এই নামের কারণে প্রায়ই তাকে হেঁশেলে দেখতে চাইতেন!
তবে হেঁশেলের বদলে যেখানে জীবন কাটিয়েছেন, সেখানে সময়টা অনেকের চেয়ে ভালোই কাটিয়েছেন। ১৬১টি টেস্ট ও ৯২টি ওয়ানডে খেলেছেন। ১২ হাজার ৪৭২ টেস্ট রানের মালিক তিনি।
- গ্রায়েম স্মিথ (দক্ষিণ আফ্রিকা) – অধিনায়ক
মিস্ত্রী হিসেবে গ্রায়েম স্মিথের কোনো সুনাম না থাকলেও অধিনায়ক, ব্যাটসম্যান হিসেবে কিন্তু দুর্দান্ত ছিলেন। এই পজিশনে তার আরেক জন প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন স্টিভ স্মিথ। তবে অধিনায়কত্ব বিবেচনায় আমরা গ্রায়েম স্মিথকেই রেখে দিলাম।
গ্রায়েম ১১৭টি টেস্ট ও ১৯৭টি ওয়ানডে খেলেছেন। এক সময়ের অল্প বয়সী অধিনায়ক একসময় দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসের সফলতমদের একজন হয়ে ওঠেন।
- কিথ মিলার (অস্ট্রেলিয়া)
মিল চালানো ছাড়া প্রায় সবকিছু করেছেন কিথ মিলার। অস্ট্রেলিয়ার ‘ইনভিন্সিবেল’ দলের সদস্য ছিলেন। রাগবি খেলেছেন, রুলস ফুটবল খেলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা অস্ট্রেলিয়ান রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পাইলট ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমারু বিমান চালিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৫টি টেস্ট খেলা এবং বর্নময় জীবনের অধিকারী এই মানুষটার একটা কথা বলে নেওয়া যাক। ক্রিকেটের চাপ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলছিলেন, ‘চাপ? ক্রিকেটে কোনো চাপ নেই। আপনি যখন পশ্চাদেশের নিচে বোমা নিয়ে মস্কিউটোতে (বোমারু বিমানের নাম) সেটা হলো চাপ।’
- খালেদ মাসুদ পাইলট (বাংলাদেশ)
মিলার বিমান চালাতেন। ওদিকে পাইলট কখনো বাসও চালাননি!
হ্যা, আমাদের খালেদ মাসুদ পাইলট। তারা যখন ক্রিকেট খেলতেন, তখনও ডাক নামটা তুলে দেওয়া হয়নি। তাই পাইলট নামেই লোকেরা চিনতো তাকে। কিন্তু আসলেই পাইলট কখনো বিমান চালানোর ধারেকাছেও যাননি। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুবাদে প্রায়শ বিমানে চাপতে হতো এবং এখনও বিমানে চড়েন।
বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক বিমান না হলেও জাতীয় দলকে চালিয়েছেন। অবশ্য খুব ভালো অভিজ্ঞতা সেই চালক হিসেবে নেই।
- ফারুক ইঞ্জিনিয়ার (ভারত)
ফারুকের বাবা ছিলেন ডাক্তার, নিজে হতে চেয়েছিলেন পাইলট। কিন্তু নাম হলো ইঞ্জিনিয়ার।
ইঞ্জিনিয়ার ফারুকদের পার্সি পরিবারের পদবী। ভারতের কিংবদন্তী এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের প্রথম ভালোবাসা ছিলো টেনিস। তবে স্কুল জীবন থেকে তার প্রধাণ লক্ষ্য ছিলো পাইলট হওয়া। সে জন্য বম্বে ফ্লাইং ক্লাব থেকে পাশও করেছিলেন। এমনকি ছোটখাটো প্লেন চালিয়েছেনও কিছুদিন। কিন্তু মায়ের আপত্তিতে এই শখ বিসর্জন দিতে হয়েছে।
পরে ক্রিকেটার হয়ে তো ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। ৪৬টি টেস্ট ও ৫টি ওয়ানডে খেলেছেন।
- জশ বাটলার (ইংল্যান্ড)
জীবনে কোথাও বাটলার হিসেবে কাজ করেননি। বরং তার বাড়িতেই সম্ভবত বাটলার থেকে থাকতে পারে। তারপরও বাটলার একজন বাটলার!
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী দলের সহঅধিনায়ক। আর এই সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ইংল্যান্ডের হয়ে ৪৭টি টেস্ট ও ১৪৫টি ওয়ানডে খেলেছেন। বিশ্বকাপ জেতার পর এমবিই উপাধি পেয়েছেন।
- ম্যালকম মার্শাল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
মার্শাল নিজে কখনো মার্শাল হতে পারেননি। তবে মাত্র এক বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন; বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার।
কে জানে, বাবা মারা যাওয়ার পর এই সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হয়তো পুলিশের মার্শালই হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দাদা তাকে ক্রিকেটার করে তোলেন। হয়ে ওঠেন এক কিংবদন্তী। ৮১ টেস্টে ৩৭৬ উইকেট নিয়ে সর্বকালের সেরাদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন এই ফাস্ট বোলার।
- ইয়ান বিশপ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বিশপ কাজে না হলেও ব্যক্তিজীবনে কিন্তু আসলেই খুব ধর্মপ্রাণ মানুষ। ফলে তার নামটা একেবারে বেমানান বলতে পারছেন না।
ইয়ান বিশপ ধর্মাচরণের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী এক ফাস্ট বোলার। ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোতে জন্ম নেওয়া এই ফাস্ট বোলার ৪৩ টেস্টে ১৬১ উইকেট নিয়েছেন। অবসরের পর ধারাভাষ্যেও ভালো সময় কাটিয়েছেন।
- গুলাম গার্ড (ভারত)
গুলাম গার্ডের ক্যারিয়ার হয়তো এই লিস্টে বাকিদের মতো উজ্জল নয়। মাত্র দুটি টেস্ট খেলেছেন ভারতীয় এই ফাস্ট বোলার। কিন্তু তাকে এই লিস্টে রাখার একটা মজার কারণ আছে।
নাম গার্ড হলেও তিনি ছিলেন আসলে পুলিশ অফিসার। গুজরাটের সুপারিটেন্ডেন্ট অব পুলিশ হিসেবে অবসরে গেছেন। নামকে এমন ছাড়িয়ে যেতে ক জন পারে!
- জোফরা আর্চার (ইংল্যান্ড)
তীরন্দাজ না হলেও লক্ষ্যবেধে কিন্তু তিনি অসাধারণ। এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ফাস্ট বোলারদের একজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে জন্ম হলেও খেলছেন ইংল্যান্ডের হয়ে।
ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের একমাত্র নায়ক হয়েছেন। বুঝিয়েছেন কিংবদন্তী তীরন্দাজ রবিন হুডের দেশে তিনি বেমানান নন।
রিজার্ভ
- মার্ক বাউচার
- অলি পোপ
- মাইকেল ক্লার্ক
- বব বারবার
আচ্ছা, এখানে আম্পায়ার কাকে রাখা যায়। কে আবার? ডেভিড শেফার্ড আর পিলু রিপোর্টার!