আগেরবার বিশ্বকাপ জয় করা পাকিস্তান তখন এগিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পথে। চ্যাম্পিয়ন টিম এগিয় যাচ্ছিল চ্যাম্পিয়নদের মতই। বলা হচ্ছে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপের কোয়াটার ফাইনাল ম্যাচের কথা। ভারতের বিপক্ষে ২৮৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল পাকিস্তান।
প্রথমত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ তারপর আবার মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান। ফলে ম্যাচের উত্তেজনা তখন তুঙ্গে। সেই উত্তেজনার বহি:প্রকাশ ঘটেছিল দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেও।
পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে তখন ১ উইকেটে ১১৩। ১৫তম ওভারের খেলা চলছে। ফলে ম্যাচে তখন ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে পাকিস্তান। সেই সময় ব্যাট করতে থাকা আমির সোহেল একটি চার মারলেন ভেঙ্কটেশ প্রসাদের বলে। সেই সময়েই কথা চালাচালি হয় আমির সোহেল ও প্রসাদের মধ্যে। চার মারার পর প্রসাদকে হাত দিয়ে বারবার বাউন্ডারির দেখাচ্ছিলেন আমির সোহেল।
যেন বুঝাচ্ছিলেন তাঁর বলকে সোহেল কোথায় পাঠিয়েছেন। তবে ঠিক এরপরের বলেই সোহেলকে বোল্ড করে এর জবাব দেন প্রসাদ। প্রসাদের দাবি ছিল আমির তাঁকে বলেছেন, ‘তোকে আবারো ওখানেই পাঠাবো।’
কোয়াটার ফাইনালের সেই উত্তেজনাপূর্ণ মূহুর্ত নিয়ে সেই সময় জল ঘোলা হয়েছিল বেশ। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলেই হয়তো তা পেয়েছিল ভিন্ন মাত্রা। তবে এতদিন বাদে একটি ইউটিউব শো তে এই নিয়ে মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের সাবেক ওপেনার আমির সোহেল।
তিনি দাবি করেছেন দুজনের মধ্যে কোনো কথা চালাচালি হয়নি সেই সময়। তিনি শুধু বোলারকে বিভ্রান্ত করতে চাইছিলেন। এটা দলের প্ল্যানেরই একটি অংশ ছিল। এই ছোট বিষয়কে নিয়ে নাকি বিনা কারণে আলোচনা হয়েছিল অনেক।
আমির সোহেল সেই শো তে বলেন, ‘সেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি। মানুষ সেটাকে ভিন্ন ভাবে নিয়েছে। একটা শব্দও কেউ কাউকে বলিনি। আমরা শুধু বোলারদের একটু অস্বস্তিতে ফেলতে চাচ্ছিলাম। একটু নড়বড়ে করে দিতে চাচ্ছিলাম কিংবা ওদের মনোযোগে একটু চিড় ধরাতে চাইছিলাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘সাইদ আনোয়ার ও আমি ভালো ভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে আউট হয়ে যাওয়ার পর আমাদের একটু অসুবিধা হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছি ভারত আবার ম্যাচে ফিরে আসতে চাইছে। এছাড়া আরো নানা বিষয় ছিল। ওদের তিনজন ভালো স্পিনার ছিল। আর আমরাও ২৮৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করছিলাম। সবকিছু মিলিয়ে ঘটনাটা ঘটেছিল।’
আমির সোহেলের সেই অঙ্গভঙ্গি নিয়ে মানুষ অনেক আলোচনা করলেও এটিকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই দেখছেন এই ব্যাটসম্যান। পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক আরো বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছিলাম বোলাররা ম্যাচে ফিরে আসছিল। প্রসাদ ভালো লেন্থে বল করছিল। আমি তাই তাঁকে বিব্রত করার চেষ্টা করছিলাম যাতে সে তাঁর লেন্থ পরিবর্তন করে। কিন্তু মানুষ ভেবেছিল আমি রাগের বসে এসব করেছি। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আসলে এসব কিছুই না। একটা সহজ ঘটনাকে বাড়িয়ে এত বড় করা হয়েছিল।’
দুজন মুখে কিছু না বললেও পরের বলেই আমির সোহেলকে বল হাতে জবাব দিয়েছিলেন প্রসাদ। অসাধারণ বলে বোল্ড করেন পাকিস্তানের এই ওপেনারকে। তারপর আসলেই ম্যাচ ভারতের দিকে আসতে থাকে। ভালো শুরুর পরেও পাকিস্তানের ইনিংস থেমে যায় ২৪৮ রানেই। ফলে ৩৯ রানের জয় নিয়ে সেমিফাইনালে যায় ভারত।