কুরুভিল্লায় আটক জয়াসুরিয়া: না হওয়া রেকর্ড!

যেখানে প্রেমদাসার ইনিংস শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু করে ভারতীয় বোলারদের বেদম প্রহার করে তিনি আবার পৌঁছে যান ডাবল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। কিন্তু এই সময়ে আবে কুরুভিল্লা জয়সুরিয়ার ফেভারিট শট লেগসাইডে পিক আপ ফ্লিকে ছয় মারতে প্রলুব্ধ করেন জয়সুরিয়াকে এবং লেগ স্টাম্পে ফেলা ফুল লেংথের বলে জয়সুরিয়ার স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন, যখন জয়সুরিয়া ১৯৯ রানে!

১৯৯৭ সালে ভারতী দল শ্রীলঙ্কার সাথে পরপর পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলে। দু’টি শ্রীলংকার কলম্বোতে (আলাদা স্টেডিয়াম) আর তারপরে তিনটি দেশের মাঠে। এর মধ্যে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টটি ছিল রান ফেস্ট; ভারতের তিনজন সেঞ্চুরি করেন, শচীন টেন্ডুলকার, নভজ্যোত সিং সিধু ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ( সৌরভ গাঙ্গুলি শূন্য রানে আউট হন)।

জবাবে শ্রীলঙ্কা ৯৫২ রানের বিশাল ইনিংস গড়ে, সনাথ জয়সুরিয়ার ৩৪০, রোশান মহানামার ২২৫ এবং অরবিন্দ ডি সিলভার ১২৬ রানের সৌজন্যে। নীলেশ কুলকার্নি এই টেস্টে নিজের জীবনের প্রথম টেস্টের প্রথম বলেই মারভান আতাপাত্তু কে আউট করেন, এবং তারপরে ৭০ ওভারে ১/১৯৫ নিয়ে শেষ করেন!

রাজেশ চৌহান ৩৪০ রানে জয়সুরিয়াকে আউট না করলে কপালে আরো কত দু:খ ছিল কে জানে! হয়তো লারার বিশ্বরেকর্ড সেদিনই ভাঙতো। ভারতের স্পিনার ত্রয়ীর মধ্যে কুলকার্নি বাদে বাকি দু’জন, অনিল কুম্বলে ও রাজেশ চৌহানের পরিসংখ্যান ছিল যথাক্রমে ১/২২৩ ও ১/২৭৬। অবিশ্বাস্য!

প্রসঙ্গত, কদিন আগেই একাধিক ব্যাটসম্যানকে ডাবল সেঞ্চুরি থেকে আটকানো নিয়ে লিখেছিলাম, যে সৌরভ কোনোভাবে জড়িত ছিলেন; এখানেও জয়সুরিয়ার ক্যাচ ধরেন সৌরভ।

এই ম্যাচের পরের চারটি টেস্টে সৌরভ একটি ৯৯ ও তিনটি সেঞ্চুরি করেন। গ্রেগ ব্লিউয়েট ও সৌরভ একই দিনে ৯৯ রানে আউট না হলে সৌরভের পরপর চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি থাকতো। ভারতের হয়ে গম্ভীর ( পরপর পাঁচ টি টেস্টে সেঞ্চুরি), দ্রাবিড়, গাভাস্কার ও শচীনের ( পরপর চারটি টেস্টে সেঞ্চুরি) এই কৃতিত্ব আছে। দ্রাবিড় এর মধ্যে পরপর ৪ টি ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন, যা এভারটন উইকস এর বিশ্বরেকর্ড (৫ টি ইনিংসে সেঞ্চুরি) এর ঠিক পরেই।

এর মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি, অর্থাৎ সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের টেস্টে ভারতের এক অখ্যাত বোলার এক কাণ্ড করেন। ডি সিলভার সেঞ্চুরিতে ভর করে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রান করার পরে ভারত শচীন ও সৌরভের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩৭৫ রান করে। অল্প রানের লিড নেবার পরে ভারত হয়তো আশা করেছিল অল্প রানে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করতে পারলে জেতার চান্স থাকবে, কিন্তু আগের ম্যাচের ত্রিশতরানকারি জয়সুরিয়া অন্য কিছু ভেবেছিলেন।

যেখানে প্রেমদাসার ইনিংস শেষ হয়, সেখান থেকেই শুরু করে ভারতীয় বোলারদের বেদম প্রহার করে তিনি আবার পৌঁছে যান ডাবল সেঞ্চুরির দোরগোড়ায়। কিন্তু এই সময়ে আবে কুরুভিল্লা জয়সুরিয়ার ফেভারিট শট লেগসাইডে পিক আপ ফ্লিকে ছয় মারতে প্রলুব্ধ করেন জয়সুরিয়াকে এবং লেগ স্টাম্পে ফেলা ফুল লেংথের বলে জয়সুরিয়ার স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন, যখন জয়সুরিয়া ১৯৯ রানে!

বীরেন্দ্র শেবাগ ১৯৫ রানে আউট হয়ে বলেছিলেন, তিনি আবার ওরকম বল পেলে আবার ছয় মারার চেষ্টা করবেন। জানি না জয়সুরিয়া সেরকম কিছু ভেবেছিলেন কি না! ভারতের হয়ে মাত্র ১০ টি টেস্ট খেলেছিলেন আবে কুরুভিল্লা এবং ২৫ টি উইকেট পেয়েছিলেন (একটি ইনিংসে ৫ উইকেট সহ); তাঁকে অধিকাংশ ক্রিকেট ফ্যান তাঁর নামের জন্যে কিছুটা হয়তো হাস্যকর ভাবেই মনে রেখেছেন।

জয়সুরিয়া ১৯৯ রানে আউট করার বলটি হয়তো তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় ডেলিভারি হিসেবে তিনি মনে রেখেছেন কিনা আমার জানা নেই, তবে নি:সন্দেহে আমার মনে থাকা কুরুভিল্লার একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বল হিসেবে এটাই থাকবে। যদিও জয়সুরিয়া ভারতের জেতার সম্ভাবনায় জল ঢেলে দেন, চতুর্থ ইনিংসে আজহার সেঞ্চুরি করলেও, টার্গেট ৩৭৩ এর অনেক আগেই ৪/২৮১ তে ইনিংস শেষ করে ভারত!

ওই টেস্টে ২০০ করতে পারলে সম্ভবত ওয়ালি হ্যামন্ড ও ডন ব্র্যাডম্যানের পরে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পরপর দুটি টেস্টে ট্রিপল ও ডাবল সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করতেন জয়সুরিয়া। যা হতে দেননি আবে কুরুভিল্লা!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...