২০১৫ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এরপরই বিশ্ব মঞ্চে জিততে ভুলে গিয়েছিল তাঁরা; ২০১৯ সালে নয় ম্যাচ খেলেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি কোনবার। তবে দু:সময় কাটিয়ে আফগানরা ফিরেছে রূপকথার পতাকা উড়িয়ে; কাল্পনিক সেসব গল্পের মতই অবিশ্বাস্য সব ঘটনার জন্ম হচ্ছে তাঁদের হাত ধরে।
ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মত পরাশক্তিদের হারানোর পর এবার শ্রীলঙ্কাকেও উড়িয়ে দিয়েছে দলটি; আর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে থাকা রশিদ, মুজিবদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাসমতউল্লাহ শাহিদি। তিনটি ঐতিহাসিক জয়েই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি – আফগানিস্তানও যে বড় দলের সাথে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে পারে সেই বিশ্বাস তাঁর কাছ থেকেই পেয়েছে পুরো ড্রেসিংরুম।
এশিয়ার এই দলটি বরাবরই স্পিন নির্ভর; ব্যাটিং তাঁদের দুর্বলতার জায়গা ছিল। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে শহিদী যেভাবে ব্যাট করেছেন তাতে এই দুর্বলতার অনেকটা কেটে গিয়েছে এক লহমায়। হ্যাঁ, কখনো রহমানউল্লাহ গুরবাজ, আবার কখনো রহমত শাহরা লাইমলাইট পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু তিনি নিজের কাজটা করে গিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে।
লঙ্কানদের বিপক্ষে যখন বাইশ গজে এসেছিলেন এই বাঁ-হাতি, দলের রান তখন ৭৩। সেখান থেকে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে; অপরাজিত ছিলেন ৫৮ রানে। এর আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি; ওপেনারদের দারুণ ব্যাটিংয়ের দিনে ৪৫ বলে ৪৮ রানের ঝকঝকে একটা জয়সূচক ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।
এছাড়া টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৮০ রান করেছিলেন এই ব্যাটার। সেদিন দলকে জেতাতে না পারলেও প্রথমবারের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাই তো সেই ইনিংস ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স হতে না পারলেও নিশ্চিতভাবে নতুন ইতিহাসের দিশারী হয়েই থাকবে।
এই টুর্নামেন্টে আফগানিস্তান চমক দেখাবে সেটা অধিনায়ক আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বলেছিলেন, ‘এটা হয়তো আমাদের প্রথম জয় কিন্তু মোটেই শেষ জয় নয়।’ এরপর যা ঘটলো তাতে মানতেই হবে ‘বলে কয়ে’ নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন শাহিদি অ্যান্ড কোং।
ছয় ম্যাচ খেলে তিন জয় – যার দুটোই এসেছে পরে ব্যাট করতে নেমে। আর এই দুই ম্যাচেই দক্ষ নাবিকের মতন ঠাণ্ডা মাথায় দলের তরী তীরে ভিড়িয়েছেন আফগান দলপতি। তাঁকে তাই ‘ক্যাপ্টেন কুল’ বলা যায় নিশ্চয়ই, আফগানিস্তানের ‘ক্যাপ্টেন কুল’।