বাংলাদেশের হেড কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে বলেছিলেন যে কারও চেহারা দেখে অন্তত তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয় না। এই রুঢ় বাক্য তিনি নিজের দ্বিতীয় মেয়াদের একেবারে শুরুতেই বলেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল আফিফ হোসেন ধ্রুব। আফিফের সময়টা ভাল যাচ্ছিল না একদমই।
তাইতো দীর্ঘদিন জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকা আফিফ বাদ গেলেন জাতীয় দল থেকে। মূলত তার পারফরমেন্সের ঘাটতিই তাকে ছিটকে দিয়েছিল দল থেকে। তবে আফিফ আবার ফিরলেন। স্বদর্পেই ফিরলেন তিনি। নিজেকে প্রমাণ করলেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। তাইতো সেই হাতুরুর মুখেই শোনা গেল আশার বাণী।
আফিফ নিজের সর্বোচ্চটুকুই যেন উজাড় করে দিলেন ডিপিএলে। রানের বন্যা বইলো তার ব্যাট থেকে। আবাহনীকে শিরোপা জেতানোর ক্ষেত্রে রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তার দলে থাকা টপ অর্ডার দুই ব্যাটার নাইম শেখ আর এনামুল হক বিজয়ের রানের মিছিলে তিনিও সামিল হয়েছিলেন। যখনই সুযোগ পেয়েছেন ব্যাট চালিয়েছেন।
নিজের নামের পাশে রানের অংকটা বড় করেছেন। ৫৫০ রানে টুর্নামেন্ট শেষ করেন, চার ফিফটি আর এক সেঞ্চুরি নিয়ে। সেই দুরন্ত আফিফকে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ঘরের মাঠে হওয়া আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ডাক পেয়ে গেলেন। হেডকোচের কথার বাণ নিশ্চয়ই আহত করেছে তার অহমে। তাইতো নিজেকে প্রমাণের সুযোগ হাতছাড়া করেননি তিনি।
তবে এখনই হয়ত আফিফের খুশি হওয়ার মত তেমন কিছু ঘটে যায়নি। যদিও কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে বলেছেন এই সিরিজেই সুযোগ পেলে আফিফকে তিনি খেলাবেন। সিরিজ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে কোচ বলেন, ‘সে মিডল অর্ডারেই খেলবে।’ অতএব কোচের রোষানলে পড়া আফিফ এবার তবে জায়গা করে নিয়েছেন কোচের ‘গুডবুকে’।
তাইতো চট্টগ্রামে অনুশীলনে সবার প্রথমেই ব্যাট হাতে হাজির আফিফ হোসেন। প্রায় ঘন্টা খানেক তিনি ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। কখনো সাইড নেট তো কখনো আবার সেন্টার উইকেটে। ক্ল্যাসিক্যাল কাভার ড্রাইভ খেলেছেন, আবার সজোরে ব্যাট চালিয়ে বল মাঠ ছাড়াও করেছেন। সব রকম পরিস্থিতির জন্য চান্দিকা হাতুরুসিংহে নিজের শিষ্যদের তৈরি করে নিচ্ছেন।
আফিফ সেদিক থেকে খানিকটা প্রধান্যও পাচ্ছেন বলা চলে। সাবলীল ব্যাট চালানোর অনুশীলন শেষে, পাওয়ার হিটিংও রপ্ত করতে হয়েছে তাকে। নেট বোলারদের বাউন্ডারি লাইনে দাঁড় করিয়ে আফিফকে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমত ব্যাট চালানোর লাইসেন্স। অনুশীলন বলেই হয়ত সব রকম ভুল করবার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে আফিফকে।
ম্যাচের পরিস্থিতি থাকবে নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইনিংস বিল্ডআপ করবার গুণ তার মধ্যে রয়েছে। সেই উদাহরণ তো তিনি গেল বছর ফেব্রুয়ারিতেই রেখেছিলেন, এই আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ধূর্ত আফিফ দ্রুত রান তুলতেও বেশ পটু। ফিল্ডিং পজিশনের ফায়দাটা তনি তুলতে জানেন। তবে পেশি শক্তির ব্যবহারটা তিনি খুব একটা করেন না বললেই চলে।
সেই খোলস থেকে বেড়িয়ে আসার অনুশীল আফিফ করেছেন, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটে। অবশ্য এদিন বাংলাদেশের ব্যাটিং ইউনিটের প্রায় প্রতিটা ব্যাটারই পাওয়ার হিটিংয়ের চর্চা করেছেন। আফগান বোলারদের বিপক্ষে বেশ চাপে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। বিশেষ করে আফগান স্পিনারদের সামলানোই আফিফদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সেই চাপটা সুযোগ পেলেই যেন বাংলাদেশি ব্যাটাররা উৎরে যেতে পারেন, সে জন্যই প্রয়োজন পাওয়ার হিটিং। হাতুরুসিংহে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তাই তদারকি করেছেন পাওয়ার হিটিং অনুশীলনের। সাথে সহকারী কোচ নিক পোথাস ও ফিল্ডিং কোচ শেন ম্যাকডরমট থ্রোয়ার দিয়ে বল ছুঁড়ে আফিফ, নাইম, শান্তদের প্রস্তুত করে নিয়েছেন।
বাকিদের চাইতে সকল টোটকা আমলে নেওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আফিফের। আফিফ বাধ্য ছাত্রের মতই সব নির্দেশ মেনে নিজেকে শাণিত করেছেন। বিশ্বকাপ খেলবার ধোঁয়াশা ঘেরা সুযোগটা একেবারেই মিলিয়ে যেতে দিতে চান না আফিফ হোসেন।