সম্ভাবনার অপমৃত্যু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে বিষয়টি নতুন নয়। কতশত সম্ভবনার যে অকাল প্রস্থান ঘটেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। সেই তালিকায় সম্ভবত নতুন করে যুক্ত হতে চলেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। কথা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের ধ্রুবতারা হবেন তিনি। তবে অন্ধকার আকাশে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছেন।
সম্ভাবনার মশাল হাতে নিয়েই তবে আফিফ হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের দৃশ্যপটে। তবে সেই মশাল যেন ক্রমশ নিভে যাচ্ছে। তার দায় অবশ্য উভয় পক্ষের। আফিফ নিজেকেও দায়ী করতে পারেন, আবার বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকেও করতে পারেন দায়ী।
তবে নিজের উপর থেকে একেবারেই দোষ তিনি সরিয়ে নেবেন কি করে! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দশম আসর ছিল তার জন্যে এক দারুণ মঞ্চ। সেখানে পারফরম করে দলে যুক্ত হওয়ার একটা সুবর্ণ সুযোগ অবশ্য ছিল তার সামনে। তিনি পারফরমও করেছেন। তবে সেটা ছিল না যথেষ্ট।
কেননা মাঝারি মানের ব্যাটিং প্রদর্শন মিলেছে তার কাছ থেকে। দলকে প্লে-অফে তোলার ক্ষেত্রেও বিশেষ কোন অবদান রাখতে পারেননি। ঠিক সে কারণেই এই মুহূর্তে অন্তত তিনি আলোচনাতে নেই। অন্যদিকে ওয়ানডে দলেও তিনি ফিরবেন কি-না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। কেননা জাতীয় দলে পাওয়া শেষ সুযোগগুলো যে একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
গেল বছরের শেষভাগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুই সিরিজের দলে ছিলেন আফিফ। ওয়ানডে যদিও একটা ম্যাচ খেলেছেন। সেই ম্যাচে ২৮ বলে ৩৮ রান করেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেননি। তবে টি-টোয়েন্টি-তে পাশ নম্বরও তুলতে পারেননি। দুই ইনিংস ব্যাট করে মোট রান নিয়েছিলেন ১৫। এরপর আর আস্থা রাখা বেজায় কঠিন।
তাছাড়া একটা মৃদু গুঞ্জনও তার জাতীয় দলে ফেরার রাস্তা অবরুদ্ধ করে দিতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান হেডকোচ, চান্ডিকা হাতুরুসিংহে। তার গুডবুকে নেই আফিফ। সে কারণেও অতিমানবীয় কিছু না করতে পারলে আফিফ সহসাই ফিরছেন না জাতীয় দলে।
কোচের সাথে সম্পর্কের হিসেব আলাদা। তবে আফিফের পারফরমেন্সের এমন অবনতির জন্যে অবশ্য বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও দায়ী। কেননা আফিফ কখনোই ছিলেন না স্লগার বা হার্ড-হিটার ব্যাটার। তিনি পুরোদস্তুর একজন মিডল অর্ডার ব্যাটার- যে দলের হাল ধরতে জানে, ইনিংসকে বড় করতে জানে, বাজে সময় কাটিয়ে উঠতে সহয়তা করতে পারে।
এমন উদাহরণ তো আফিফ রেখেছনই বেশ কিছু ইনিংসে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই অভবানীয় ম্যাচ জয় নিশ্চয়ই ভুল যাওয়ার নয়। আফিফ কখনোই তার ব্যাটিং ধরণ অনুযায়ী জাতীয় দলে ব্যাট করবার সুযোগ পাননি। তাতে করে পারফরমেন্সে গ্রাফ নিম্নগামী হয়েছে। আত্মবিশ্বাস ঠেকেছে তলানিতে।
সেখান থেকে ফেরার প্রচেষ্টা অবশ্য আফিফ করছেন। মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের জন্যেই হচ্ছেন প্রস্তুত। নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পেলে যেন তা নষ্ট না হয়, সে জন্য ঝালিয়ে নিচ্ছেন নিজের ব্যাটিং। বাকিটা সময়ই বলে দেবে ঠিক কোন পথে হাঁটবেন আফিফ হোসেন ধ্রুব।