ফ্রান্স জাতীয় দলে অভিবাসী ফুটবলার থাকার ইতিহাসটা বেশ পুরনো। ডেনিস স্ট্যানলি, রাউল ডায়াগন, লার্বি বেনবারেক থেকে শুরু করে তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিনেদিন জিদানও পুরোপুরি ফরাসি নন।
তাঁদের শিকড় লুকিয়ে আছে আফ্রিকার নানা দেশে। এবারের বিশ্বকাপে উঠা ফ্রান্স স্কোয়াডেও তাই অভিবাসী ফুটবলারের ছড়াছড়ি। বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশনে কাতার আসা ২৬ জনের স্কোয়াডের ১৫ জনেরই পূর্বপুরুষেরা আবাসস্থল আফ্রিকাতে।
- করিম বেনজেমা – আলজেরিয়া
কাতার বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে মাঠে না নামলেও এখনো স্কোয়াডে আছেন করিম বেনজেমা। ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকাকে সামনে রেখেই বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করেছিলেন দেশ্যম।
কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরির কারণে ছিটকে যান রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা। গুঞ্জন আছে ইনজুরি সারিয়ে উঠায় ফাইনালে ফ্রান্সের একাদশে দেখা যেতে পারে এই তারকাকে।
- উসমান দেম্বেলে, ইব্রাহিমা কোনাটে – মালি
যুদ্ধবিধবস্ত দেশ মালি থেকে ছোটবেলাতেই ফ্রান্সে এসে আশ্রয় নেয় উসমান দেম্বেলে এবং ইব্রাহিমা কোনাটের পরিবার। এরপর ফ্রান্স সযতনে লালন করেছে তাঁদের ফুটবলার হবার স্বপ্ন। দেম্বেলেকে তো বিশ্বফুটবলের অন্যতম সেরা প্রতিভা হিসেবে ধরা হয়, উইংয়ে তাঁর মতো গতি তুলতে পারার ক্ষমতা গোটা বিশ্বে বিরল।
অন্যদিকে কোনাটে সেন্টারব্যাক। লিভারপুলে খেলা এই ডিফেন্ডার আগলে রাখেন ফ্রান্সের রক্ষণ। সেমিতে মরক্কোর বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেছিলেন এই ডিফেন্ডার।
- উইলিয়াম সালিবা, কিলিয়ান এমবাপ্পে, অরেলিয়ের চুয়ামেনি – ক্যামেরুন
রজার মিলা, স্যামুয়েল ইতোদের মতো অসাধারণ সব ফুটবলার খেলে গেছেন ক্যামেরুনের হয়ে। সেই ক্যামেরুনের ছেলে কিলিয়ান এমবাপ্পে মাঠ মাতাচ্ছেন ফ্রান্সের। বয়স ২৪ ছাড়ানোর আগেই বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি ফাইনালে গোল করেছেন। কাতার বিশ্বকাপ তাই এমবাপের জন্য মহাতারকা হবার সুযোগ।
অন্যদিকে পল পগবা এবং এনগোলো কান্তের অনুপস্থিতিতে ফ্রান্সের মিডফিল্ডকে নেতৃত্ব দেয়া অরিলিয়ের চুয়ামেনিও এসেছেন ক্যামেরুন থেকে। তরুণ এই মিডফিল্ডারে ভর করে ফ্রান্স স্বপ্ন দেখছে টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের। অন্যদিকে বেঞ্চে থাকা ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবার জন্মও ক্যামেরুনে।
- র্যান্ডাল কোলো মুয়ানি, স্টিভ মানদান্দা, অ্যাক্সেল ডিসাসি – কঙ্গো
সেমিফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে জয়সূচক গোলটা এসেছে তরুণ র্যান্ডাল কোলো মুয়ানির পা থেকে। অথচ তাঁর জন্মই ফ্রান্সের বাইরে, কঙ্গোর যুদ্ধ থেকে বাচতেই ফ্রান্সে এসে আশ্রয় নিয়েছিল তাঁর পরিবার। ফ্রান্স এরপর তাঁকে আশ্রয় দিয়েছে, ফুটবলার হবার স্বপ্নটা পূরণ করতে সাহায্য করেছে।
মুয়ানি যেন ফ্রান্সের আস্থারই প্রতিদান দিচ্ছেন এবারের বিশ্বকাপে। তিনি ছাড়াও দলের দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক স্টিভ মানদান্দা এবং অ্যাক্সেল ডিসাসির পূর্বপুরুষের নিবাস কঙ্গোতে।
- জুলস কুন্দে – বেনিন এবং দায়োত উপামেকানো – গিনি বিসাউ
এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের রক্ষণ আগলে রাখার দুই সেনানি জুলস কুন্দে এবং দায়োত উপামেকানোও পুরোপুরি ফরাসি নন।
লিভারপুলের ডিফেন্ডার উপামেকানো এসেছেন গিনি বিসাউ থেকে, অন্যদিকে কুন্দের নিবাস বেনিনে। অথচ জাতীয় দলের প্রশ্নে কি দারুণভাবেই না কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে লড়াই করছেন ফ্রান্সের হয়ে।
- এডুয়ার্ডে কামাভিঙ্গা – অ্যাঙ্গোলা এবং ইউসুফ ফোফানা – আইভরি কোস্ট
অ্যাঙ্গোলার শরণার্থী শিবিরে জন্ম নেয়া কামাভিঙ্গার তো বেঁচে থাকারই কথা ছিল না, সেখানে ফুটবল খেলা তো কোন ছাড়। তাঁর স্বপ্নটা বাঁচিয়ে তুলেছেন ফ্রান্স, বর্তমানে খেলছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। কামাভিঙ্গাও তাই নিজের সেরাটা ঢেলে দিচ্ছেন ফ্রান্সের হয়ে।
অন্যদিকে মরক্কোর বিপক্ষে ফ্রান্সের মাঝমাঠের কান্ডারি তরুণ ইউসুফ ফোফানার জন্মও আইভরি কোস্টে।
- কিংসলে কোমান – গিনি এবং মাতেও গুয়েন্ডৌজি – মরক্কো
বায়ার্ন মিউনিখের উইংগার কিংসলে কোমান জাতীয় দলে খেলেন বদলি ফুটবলার হিসেবে। উইং ধরে দারুণ গতি তোলার পাশাপাশি গোলের রাস্তাও ভালোই জানা আছে তাঁর। অথচ তাঁর জন্মটাই ফ্রান্সে নয়, গিনিতে জন্ম নেয়া কোমান জাতীয় দলের প্রশ্নে বেছে নিয়েছেন ফ্রান্সকেই।
অন্যদিকে সেমিতে ফ্রান্সের প্রতিপক্ষে মরক্কোর একজনও ফুটবলারও ছিলেন তাঁদের স্কোয়াডে। তিনি মিডফিল্ডার মাতেও গুয়েন্দৌজি, একাদশের নিয়মিত মুখ না হলেও তিনি সামর্থ্য রাখেন ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেবার।