ইনজুরি থেকে ফিরে এসে শাহীন শাহ আফ্রিদির বিশ্বকাপ যাত্রার শুরুটা মোটেও ভাল কাটেনি। ভারত আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, দুই ম্যাচেই ছিলেন উইকেটশূণ্য। একই সাথে বল হাতে তেমন আগ্রাসনের আভাসও দিতে পারছিলেন না। কিন্তু এর পরেই যেন ছন্দে ফিরে এলেন।
ডাচদের বিপক্ষে এক উইকেট নিয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন। আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসে নিজের জাত চেনালেন। ৩ ওভারে ১৪ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও দুর্দান্ত রূপে আবির্ভূত হলেন শাহীন আফ্রিদি। এবার তিনি নিলেন চারটি উইকেট। একই সাথে পেলেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও।
সেমিফাইনাল ম্যাচেও কিউই ব্যাটিং লাইন আপের উপর প্রথম আঘাতটা হেনেছিলেন শাহীন। ফিন অ্যালেনের পর বোল্ড করেছিলেন কেন উইলিয়ামসনকেও। সব মিলিয়ে এ দুই উইকেটের মাধ্যমে এবারের আসরে নিজের ১০ উইকেট তুলে নেন তিনি। টুর্নামেন্ট শুরুর তিন ম্যাচে যার ঝুলিতে একটি মাত্র উইকেট ছিল, সেই শাহিন আফ্রিদিই পরের তিন ম্যাচে নিলেন ৯ উইকেট।
শাহীন আফ্রিদির এমন দুর্দান্ত রূপে ফিরে আসার ব্যাপারে কথা বলেছেন পাকিস্তান নারী ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক উরুজ মুমতাজ। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত সেমির এই ম্যাচেই আমরা তাঁর সেরাটা দেখলাম। সে মারাত্বক একটি ইনজুরি থেকে ফিরে এসেছে। এসেই পারফর্ম করাটা কঠিন ছিল তাঁর জন্য। তবে সে প্রথম দুই ম্যাচের হতাশা কাটিয়ে দুর্দান্তভাব কামব্যাক করেছে।’
ইএসপিএন, ক্রিকইনফোর এ অনুষ্ঠানে মুমতাজ আরও বলেন, ‘সে আগের মত সুইং আদায় করে নিতে পারছিল না। কিন্তু এ ম্যাচের শুরু থেকেই ও বলে সুইং করাতে পারছিল। ফিন অ্যালেন পরাস্ত হয়েছে এ কারণেই। আর শাহিন পুরো ম্যাচেই স্ট্যাম্পকে টার্গেট করে বোলিং করে গিয়েছে। ব্যাটারের জন্য কোনো সুযোগই সে অবশিষ্ট রাখেনি। কারণ ব্যাটাররা বোলারদের কাছে থেকে স্ট্যাম্পের বাইরের বল প্রত্যাশা করে। এতে তারা শট খেলতে পারে। শাহীন ম্যাচের শেষ পর্যন্ত এমন টাইট বোলিং করেছেন যে, ব্যাটার হিট করার সুযোগই পাননি। তবে শাহিন আফ্রিদি ছাড়াও এ ম্যাচে পাকিস্তানের সব পেসারই দারুণ বোলিং করেছেন।’
পাকিস্তানের বোলিংয়ে প্রথম ১১ ওভারে ২ ওভার বল করেছিলেন শাহীন আফ্রিদি। এরপর ইনিংসের ১৫ এবং ১৭তম ওভারে আবার বোলিং করতে আসেন তিনি। আর এই স্পেলেই তিনি কেন উইলিয়ামসনকে ফেরান। ৪৬ রান করে উইকেটে প্রায় দাঁড়িয়েই গিয়েছিলেন কিউই কাপ্তান।
কিন্তু শাহীনের হঠাৎ স্লোয়ারে স্ট্যাম্প উপড়ে যায় তাঁর। এ নিয়ে মুমতাজ বলেন, ‘শাহীন যখন স্লোয়ার দিল তখন কেন উইলিয়ামসনের স্কোয়ার বাউন্ডারিতে শট খেলা উচিত ছিল। ফাইন লেগে খেলতে গিয়ে তিনি স্ট্যাম্প থেকে বেশ দূরে সরে গিয়েছিলেন। আর শাহীনের করা অফ কাটারে বলটা স্ট্যাম্পমুখীই যাচ্ছিল। এটা দুর্দান্ত স্লোয়ার ছিল।’
উরুজ মুমতাজের সাথে সুর মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার টম মুডি বলেন, ‘এটা আসলেই দারুণ স্লোয়ার ছিল। আর পাকিস্তানের জন্যও এই উইকেটটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কারণ কেন উইলিয়ামসন প্রায় থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। পরের ওভারগুলোতে সে ভয়ংকর হতে পারত।’
কেন উইলিয়ামসনের উইকেট নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের মধ্যে যুগ্মভাবে শাদাবের সাথে শীর্ষে উঠে এসেছেন শাহীন আফ্রিদি। শাদাব খানের মত তাঁর উইকেট সংখ্যাও এখন ১০। মেলবোর্নের ফাইনালে এখন দেখার পালা, কে কাকে ছাড়িয়ে যান। দুজনের এই ছাড়িয়ে যাওয়ার সুস্থ প্রতিযোগিতায় অবশ্য দিনশেষে লাভটা হবে পাকিস্তানেরই।