টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দৈন্যদশা নতুন কিছু নয়। শেষ ২৫ ম্যাচে মাত্র ছয়টিতে জয় পাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে তাই আলোচনাটা প্রায়শই হয়। আলোচনার চেয়ে বরং সেটিকে সমালোচনা বলাটা বেশি উপযুক্ত হবে। এবার সেই সমালোচনায় যুক্ত হলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার, বর্তমান ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া।
আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শক্তিমত্তা, দুর্বলতা, সম্ভাবনা নিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে কথা বলেছেন তিনি। একই সাথে কোন কোন ক্রিকেটার পারফর্ম করতে পারেন, বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজি কেমন হবে সেসব বিষয় নিয়েও কথা বলেছেন আকাশ চোপড়া।
আকাশ চোপড়ার কন্ঠে সে ভিডিওতে বারবারই সাকিব, লিটন, আফিফ আর এবাদতের নাম ঘুরে ফিরে এসেছে। তিনি মনে করেন, লিটন কিংবা সাকিবই বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপে বেশি রান করবেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত লিটনের চেয়ে সাকিবেকেই একটু এগিয়ে রাখেন তিনি। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে এবাদত বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হতে পারে বলে মনে করেন আকাশ চোপড়া।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা আর প্রথম পর্ব থেকে উঠে আসা দুই দল। তবে এ গ্রুপে থেকে বাংলাদেশের মধ্যে খুব একটা সম্ভাবনা দেখছেন না আকাশ চোপড়া। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রা গ্রুপ পর্বেই শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
তাঁর ভাবনা কিংবা ধারণা অবশ্য ভুল নয়। কারণ ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৪ টি ম্যাচ খেললেও জয় এসেছে মাত্র তিনটিতে। তাই গ্রুপ পর্বের বাঁধা পার হতে হলে অভাবনীয় কিছুই করে দেখাতে হবে বাংলাদেশকে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুর্বলতাটা কোথায়? আকাশ চোপড়া এ ক্ষেত্রে দুটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। একটি, ব্যাটারদের ধারাবাহিকতা না থাকা, আরেকটি হল, দলে উইকেট টেকিং বোলারের স্বল্পতা।
তিনি এ বিষয় নিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম দুর্বলতা হচ্ছে, তাদের ব্যাটাররা কেউ কনসিসটেন্ট না। কারও গড়ই ত্রিশের উপরে নেই। একই সাথে টপ অর্ডার কোনো ব্যাটারের স্ট্রাইক রেট ১২০ ও নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ এখানেই পিছিয়ে পড়েছে। আর বোলিংয়ের দিক দিয়ে স্পিন বোলিংয়ে এবার কারও উপরই আস্থা করার মত স্পিনার স্কোয়াডে নেই। পেসারদের মধ্যেও তেমন উইকেট টেকিং অ্যাবিলিটির দেখা মেলে কম। আর এ জায়গা গুলোতেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আর এত সীমাবদ্ধতা নিয়ে সফল হওয়া দুরুহ ব্যাপার।
এত দুর্বলতার মাঝে শক্তি মত্তার জায়গা কি কিছুই নেই? আপাতত আশাবাদী হওয়ার মত তেমন কিছুই বলেননি আকাশ চোপড়া। তবে বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইন আপটা তাঁর কাছে খুব একটা দুর্বল মনে হয়নি। বিশেষ করে এবাদাতের ব্যাপারের বারবারই ইতিবাচক সুর তুলেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘দলে শক্তির জায়গা তেমন না থাকলেও পেসাররা যেকোনো দিন চমক দেখিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের উচিত এবাদতকে মাথা রেখে পরিকল্পনা সজানো। এমন কন্ডিশনে ও দুর্দান্ত কিছু হতে পারে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজি কেমন হতে পারে তা নিয়ে আকাশ চোপড়া বলেন, ‘বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধরনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। সাকিব আর লিটনকে তাদের জায়গায় একদম স্বাধীনভাবে ব্যাটিং করার সুযোগ দিতে হবে। তবে অবশ্যই তাদের দুইজনকে ব্যাক আপ দেওয়ার জন্য দলে টপ অর্ডার আর মিডল অর্ডার ব্যাটার প্রস্তুত করতে হবে। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলতে হবে। আর বোলিং লাইন আপকে আরও ডিসিপ্লিন হতে হবে। অর্থাৎ একটু ইকোনমি রেটের দিকে নজর দিতে হবে, ধারাবাহিকভাবে এক লাইনে বল করার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার কে হতে পারেন? এ ক্ষেত্রে আকাশ চোপড়া তিন ক্রিকেটারের নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, লিটন, সাকিব কিংবা এবাদতের মধ্যেই কেউ একজন সেরা পারফর্মার হতে পারেন এবারের বিশ্বকাপে।
আগামী ২৪ অক্টোবর এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা কিংবা নামিবিয়াই বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর ৬ টি বিশ্বকাপ খেলে ফেললেও এখনও চূড়ান্ত পর্বে একটি ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
২০০৭ এ সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোটাই চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের একমাত্র জয়। তবে এবার কি সেই আক্ষেপ ঘুচবে? নাকি ব্যর্থ সরলরেখায় সমান্তরাল গতিতে পতিত হবে বাংলাদেশ? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা।