প্রেম ধীরে মুছে যায়; নক্ষত্রেরা একদিন মরে যায়, মরে যেতে হয় – আলিম দার নক্ষত্র ছিলেন কি না সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে, তবে আম্পায়ার হিসেবে তিনি যে কিংবদন্তির চেয়ে কম নন। কিংবদন্তি আম্পায়ারদের তালিকা আলিম দার ছাড়া অপূর্ণ। এবার অবশ্য তাঁর পথ চলার ইতি ঘটতে যাচ্ছে, পাকিস্তানের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ওয়ানডে চ্যাম্পিয়ন্স কাপ শেষে তাঁকে আর আম্পায়ারিংয়ে দেখা যাবে না।
যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে অবসর আরও আগেই নিয়েছিলেন এই পাকিস্তানি, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে তিনি কেবল পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন সেই অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটলো, নিজেই আঙুল উঁচিয়ে নিজেকে আউটের সংকেত দেখালেন।
মিডল অর্ডার ব্যাটার এবং লেগ স্পিনার হিসেবেই ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন এই তারকা। কিন্তু ক্রিকেটার হিসেবে কখনোই সাফল্যের দেখা পাননি তিনি, এমনকি জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্যও হয়নি। তবে আম্পায়ারের পোশাক গায়ে জড়াতেই দু-হাত ভর্তি করে তাঁকে আশীর্বাদ করেছিল ক্রিকেট বিধাতা – তাই তো ২০০০ সালে অভিষেক হওয়ার পর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বিশ্বকাপে ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ পান।
দ্রুততম সময়ে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পরের বছরই আইসিসির এলিট প্যানেলে চলে আসেন আলিম দার। এরপর থেকে প্রায় দুই দশক সেবা দিয়ে গিয়েছেন তিনি, হয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বের সম্মানিত এক ব্যক্তিত্ব – সবমিলিয়ে ১৪৫টি টেস্ট, ২৩১টি ওয়ানডে ও ৭২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ পরিচালনার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর।
চাপের মধ্যে শান্ত থাকা এবং প্রায় নিখুঁত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পুরষ্কার হিসেবে পাঁচটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সাতটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই আম্পায়ার। এছাড়া ২০০৭ আর ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২০১০ ও ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে আম্পায়ারিং করেছেন তিনি।
প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে জায়গা করে নিয়েছিলেন দার, টানা তিন বছর বিশ্বের সেরা আম্পায়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সততা এবং ক্রিকেটের প্রতি প্যাশনের কালিতে দুর্দান্ত একটা উপন্যাস লিখে গেলেন তিনি।
তবে এখানেই থামতে চাইবেন না এই মহারথী, এবার হাতে নিচ্ছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। নিজের গড়া থ্যালাসেমিয়া হাসপাতালের পিছনে এখন থেকে সময় দিবেন তিনি, কাজ করবেন মানবতার সেবায়।