ভারতের ভরসার ভরত

‘আমি আমার সকাল বেলার সাধারণ কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ সাপোর্ট স্টাফের একজন এসে আমাকে জানালেন আমাকে কিপিং করতে হবে। আমার হাতে মাত্র বারো মিনিট সময় ছিল নিজেকে প্রস্তুত করার।’ ভারতের হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে অপ্রত্যাশিতভাবে উইকেটকিপিং করতে নামা শ্রীকর ভরত এমনটাই জানাচ্ছিলেন নিজের প্রথম জাতীয় দলে হয়ে উইকেট কিপিং করতে নামার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

শ্রীকর ভরত ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ভারত দলের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তাঁকে খানিক অপ্রত্যাশিতভাবেই কিপিং করতে হয়েছে টেস্টের তৃতীয় দিন। দলের প্রথম কিপার ঋদ্ধিমান সাহা তাঁর ঘাড়ে অস্বস্তি বোধ করায় অগ্যতা ভরতকে দায়িত্ব নিতে হয় উইকেটরক্ষকের। প্রথমবারের মতো ভারতের হয়ে টেস্টে কিপিং করতে নামা ভরত বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে ধারাভাষ্যকারদেরও।

তাঁর সম্পর্কে ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটার ভিভিএস লক্ষ্মণ জানান ভরতের সম্পর্কে অনেক আগেই তাঁকে অবহিত করেছিলেন জাতীয় দলের বর্তমান প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ভরতের প্রশংসা করে লক্ষণ আরো বলেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে আমাকে রাহুল বেশ ক’বার ভরতের উইকেট কিপিং স্কিল সম্পর্কে বলেছিলো। সে এমনও বলেছিলো যে ভারতীয় ক্রীকেটে ঋদ্ধিমান সাহার পরেই শ্রীকর ভরতের অবস্থান স্কিল বিবেচনায়।’

ভরত বদলি উইকেরক্ষক হিসেবে বেশ ভালই করেছেন। নিজের উপর একটা চাপ নিশ্চয়ই বোধ করছিলেন ভরত। তবুও সেই অদৃশ্য চাপ উপেক্ষা করে উইকেটের পিছনে অসাধারণ দুইটি ক্যাচ ধরার পাশাপাশি একটি স্ট্যাম্পিং-এও অবদান রেখেছেন শ্রীকর ভরত। এই তিনটি উইকেটের মধ্যে ভরতে কিপিং শৈলী এবং বুদ্ধিদীপ্ততার প্রধান উদাহরণ হতে পারে নিউজিল্যান্ড ওপেনার উইল ইয়ং -কে আউট করতে নেওয়ার ক্যাচটি।

অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বল বেশ খানিকটা নিচু লেন্থে যাচ্ছিলো তাতে ইয়ং এর ব্যাটের আলতো খোঁচা লেগে বল ক্রমশ নিচের দিকেই ধাবিত হতে থাকে। বুদ্ধিদীপ্ত ভরত শুরু থেকেই নাকি জানতেন পিচে বল অনেক নিচু হয়ে যাচ্ছে এবং সেই তথ্য মোতাবেক তিনি প্রস্তুত ছিলেন এমন নিচুতে আসা ক্যাচগুলো লুফে নিতে। তিনি শেষমেশ ভুল করেননি ঠিকই লুফে নিয়েছেন ক্যাচ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচে ইয়ং ফেরেন ৮৯ করে।

ভরতের কিপিং এ সন্তুষ্ট লক্ষ্মণ বলেন, ‘সে যে নির্বাচক এবং প্রধান কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছেন তা দেখে ভাল লেগেছে।’ তাছাড়া লক্ষণ আরো বলেন, ‘এমন সুদক্ষ স্পিনিং আক্রমণের সাথে যদি উইকেট কিপিং এ আস্থাভাজন কেউ না থাকে তবে আপনি নি:সন্দেহে বেশকিছু সুযোগ হারাবেন। কিন্তু ভরত তাঁর অসাধারণ স্কিল এবং দারুণ উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’

ভরত উইকেটরক্ষক হিসেবে যেমন দক্ষ ঠিক তেমনি তিনি খুব ভাল করেই জানেন কি করে ব্যাট চালাতে হয়। ব্যাটিং টেকনিকের দিক থেকেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ তিনি। ভারতের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে ভরতের রানের সংখ্যা ৪২৮৩। রয়েছে ৩০৮ রানের একটি সুবিশাল ইনিংস। তাছাড়া তাঁর গড়ও বেশ ভাল ৩৭.২৪। ৭৮ ম্যাচে তাঁর শতকের সংখ্যা নয়টি এর পাশাপাশি রয়েছে ২৩টি অর্ধশতক। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে যদি ভারত জাতীয় দলের টেস্ট দলে তাঁর অভিষেক ঘটে তবে তিনি যে অনায়াসে দলের হয়ে কিপিং এবং ব্যাটিং উভয়ক্ষেত্রেই অবদান রাখতে পারবেন তা বলাই যায়।

ভরতের প্রসংশায় লক্ষ্মণ আরো বলেন, ‘সাহার ইনজুরিতে প্রথম্বারের মতো দলের হয়ে কিপিং করতে নেমে সে একতুও বিচলিত হয়নি কিংবা তাঁকে উদ্বিগ্ন দেখা যায়নি। এটা বেশ ভাল এক অভিজ্ঞতা হলো তাঁর জন্যে। তাঁর এই অভিজ্ঞতা নির্দ্বিধায় তাঁর ক্যারিয়ারে বেশ কাজে আসবে।’

ভারতকে আর হয়ত ভাবতে হবে না উইকেট রক্ষকদের নিয়ে। তাঁদের রাডারে রয়েছে অত্যন্ত সুদক্ষ তিনজন উইকেট রক্ষক ব্যাটার ঋষভ পান্ত, ঋদ্ধিমান সাহা ও নতুন করে আশা জাগানিয়া শ্রীকর ভরত। এই একটা জায়গায় নির্বাচকদের খুব বেশি দুশ্চিন্তা কিংবা চিন্তা কোনটাই করতে হবে না নিকট ভবিষ্যতে। এখন অপেক্ষা শ্রীকর ভরতের জাতীয় দলের অভিষেকের। তা নিশ্চয়ই ঘটতে যাচ্ছে অতি শীঘ্রই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link