রোজ খবরের পাতা উল্টালে পর্যায়ক্রমে দেখা যায় পুরুষ ক্রিকেটের খবরের অধ্যায়গুলো। নারী ক্রিকেটাররা খুব কম অংশেই বিরাজ করে কাগজের পৃষ্ঠাগুলোতে। তবুও ক্রিকেট সৌন্দর্যের। কাগজের পৃষ্ঠার পাতাগুলোর ঝলকানির দ্যুতিও মাঝেমাঝে নারী ক্রিকেটারদের আলংকারিক অর্জনে আরও দীপ্তিমান হয়ে উঠে।
মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মত খেলার অবয়বেও আছে দুইটি ছায়া। ঘরের বাহিরে মাঠে নেমে পুরুষের পাশাপাশি নিজের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা এমনই এক নারী ক্রিকেটারের গল্প হবে আজ- যিনি দলের শুধু একজন সফল কাণ্ডারি নন; উইকেটের পেছনে পুরো দলের যিনি অতন্দ্র প্রহরী।
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কস্টে ২৪ মার্চ ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই নারী ক্রিকেটার। এগারো জনের দলকে ঘিরে ১০ জনের কেন্দ্রবিন্দুর ঘরে বাকি একজন হয়ে উইকেটের পেছনে দেখা যায় তাঁকে। খেলে থাকেন ঘরোয়া ক্রিকেট দল নিউ সাউথ ওয়েলস এবং অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের দলের হয়ে। শুধু উইকেট-রক্ষক নয়, এর সাথে তিনি একজন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ; তিনি অ্যালিসা জিন হিলি।
হিলি হলেন গ্রেগের কন্যা যিনি কুইন্সল্যান্ড স্কোয়াডের একজন সদস্য ছিলেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে খ্যাত ‘হিলস’ ডাকনামে পরিচিত ইয়ান হিলি সম্পর্কে তাঁর চাচা। ইয়ান হিলি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম আলোচিত কিংবদন্তি। ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক ছিলেন এবং সর্বোচ্চ টেস্ট ডিসমিসালের জন্য বিশ্ব রেকর্ডের ধারকও ছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের ৪৯ টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চতম উইকেট শিকারী অস্ট্রেলিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মিশেল স্টার্কের সাথে ২০১৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন অস্ট্রেলিয়ান এই নারী ক্রিকেটার। মিশেল স্টার্কও একাধারে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় দল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে খেলেন।
অ্যালিসা হিলির ক্রিকেটের পদচারণা শুরু হয় বার্কার কলেজ থেকে। ২০০৬ সালে বার্কার কলেজ প্রথম একাদশ এর জন্য উইকেটরক্ষক হিসেবে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে নির্বাচন করা হয়। ঘরোয়া ক্রিকেট দল নিউ সাউথ ওয়েলসে তিনি ২০০৭ সালে যোগদান করেন। বর্তমানেও তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের একজন ক্রিকেটার হিসেবে অব্যাহত আছেন।
২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যালিসা হিলির প্রথম ওয়ানডে অভিষেক হয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। নিজের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারের খাতায় চার টেস্টে ২০১ রান, ৭৩ ওয়ান ডে তে ১৬৩৮ রান, ১১২ টি-টোয়েন্টিতে ২০৬০ রানের রেকর্ড করেছেন হিলি।
২০১৮ সালে হিলি দলকে নেতৃত্ব দেয়া সহ ব্যাট হাতে করেছেন ৫৪ গড়ে ৩২৯ রান। মেয়েদেরকে চতুর্থ বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানোয় ২০১৯এর বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মুকুট উঠেছে তার মাথায়। সেই সাথে হয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ও।
২০২০সালের প্রমীলা টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বড় জয় পায় অজিরা, সে ম্যাচে সবোর্চ্চ রান করেন হিলি। ভারতের বোলাদের নাস্তানাবুদ বানিয়ে হিলি খেলেন ৩৯ বলে ৭৫ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস।
ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে উইকেটের পেছনে থেকে তিনি শিকার করেছেন ১৮০টি উইকেট। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে ভারতীয় ক্রিকেটবোদ্ধা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ধোনির ৯১ উইকেটের রেকর্ড টপকে তাকে পিছনে ফেলে ১০০ উইকেট শিকারি অ্যালিসা হিলিই আছেন চূড়ায়।
২০২০ এর সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে কিউই ব্যাটসম্যান অ্যামি স্যাটার্থওয়েটকে স্ট্যাম্পিং করে তিনি ছুঁয়েছিলেন ধোনিকে। এরপরেই লরেন ডাউনকে কট বিহাইন্ড করে টপকে যান ভারতীয় ক্রিকেটের সাবেক উইকেটরক্ষক অধিনায়ক ধোনিকে। ধোনির রেকর্ড টপকাতে হিলির লেগেছে ৯৯টি ম্যাচ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বাধিক ডিসমিসালের মালিক হিসেবে রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখালেন এই নারী উইকেটরক্ষক।
ক্রিকেট ইতিহাসে নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবোর্চ রানের ঝুলিও হেলির হাতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ইনিংসেই হিলি ১৪৮ রান সংগ্রহ করেছে।
শুধু তাই নয়, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের পাতায়ও নিজের কীর্তির ইতিহাস গড়েছেন এই অজি তারকা। ২০১৯ সালে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নিয়ে গ্রিনিচ বুকে নাম তুলে নেন হিলি। তিনি অনেক কিছুই তার অর্জেনের ঝুলিতে ভর্তি করেছেন, হয়তো সামনের দিনগুলোতেও তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন সেরাদের সেরার তালিকায়।