খাদের কিনারা থেকে কি করে লড়াই করে ফিরে এসে যে বিশ্বজয় করা যায়, সেরাদের সেরা হওয়া যায় তারই এক উদাহরণ সৃষ্টি করে ফেললেন অস্ট্রেলিয়া নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটার এলিসা হিলি। কি দূর্দান্ত এক ইনিংস! কি অসাধারণ এক ইনিংস তিনি খেলে ফেললেন নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে। ১৩৮ বলে ১৭০ রানের অনবদ্য এক মহাকাব্য।
অথচ এই হিলি এক সময় ভুগছিলেন দারুণ ছন্দহীনতায়। দল থেকে বাদ হওয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আরেকটা হোচট আর তিনি দল থেকে ছিটকে যেতে পারতেন কোন দ্বিধাদ্বন্দ ছাড়াই। ব্যাটে যে একেবারেই রান ছিল না তাঁর। গড়টা ছিল নামমাত্র। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের পথ খুঁজে ব্যাটিং অর্ডারেই নিজেকে আবিষ্কার করেন নতুন এক পজিশনে। সেখান থেকেই লেখেন বদলে যাওয়ার গান।
এবারের নারী বিশ্বকাপে যেন তিনি আবার নতুন উদ্যমে। ফাইনালে তাঁর সেই ১৭০ রানের সুবাদে এবারের নারী বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বনে গেলেন হিলি। তাঁর সংগ্রহ সব মিলিয়ে ৫০৯ রান। কি দারুণ এক সময় পার করলেন তিনি! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের সপ্তম ফাইনাল খেলতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেন ইংলিশ মেয়েদের।
হিলি জুঁটি গড়েন র্যাকেল হায়নেসের সাথে। বেশ লম্বা একটা জুঁটি। ১৬০ রান দু’জনে মিলে জড়ো করলেন। ৬৮ করে হায়নেস প্যাভিলনে ফিরে গেলেও হিলি ছিলেন আরেকপ্রান্তে অনঢ়। তিনি রেকর্ড গড়ে তবেই যেন হবেন শান্ত এমন পণ করেই নেমেছিলেন মাঠে। তাই করলেন। ভিন্ন এক রেকর্ড গড়ে ফেললেন। যে রেকর্ড পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল।
প্রথমমত, বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে কখনোই কোন ব্যাটার সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে টানা দুইটি শতক হাঁকাননি। এমনকি ছেলেদের বিশ্বকাপেও এই রেকর্ডের সাক্ষী হয়নি ক্রিকেট বিশ্ব। তাহলে ভাবুন পরিবর্তনের কেমন এক ছায়া ছুঁয়ে দিয়ে গেছে হিলিকে। যে কিনা একটা সময়ে রানের খরায় ভুগেছেন। সে হিলি এখন নিজেই রানের বৃষ্টি ঝড়াচ্ছেন বাইশ গজে। এই বৃষ্টিতে অবশ্য বাইশ গজের খুব একটা ক্ষতি হয়না। বরং বেশ আনন্দ হয়।
নিউজিল্যান্ডে ক্রাইসচার্চে। আগে ব্যাটিং করা অস্ট্রেলিয়া স্কোর বোর্ডে সংগ্রহ করেছিল ৩৫৬ রান। দলীয় সংগ্রহ যখন ৩১২ তখনও ব্যাট হাতে নিজের ইনিংসটা আরও একটু সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন হিলি। হয়ত বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো এক মঞ্চে প্রথম দ্বিশতক করা ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলেন তিনি। তা হয়ত হতে পারেননি। তবে বিশ্বকাপ ফাইনালের দেড়শ’র বেশি রান করার রেকর্ডটা কিন্তু ঠিকই গড়ে ফেললেন হিলি।
এর আগে কোন ক্রিকেটার বিশ্বকাপের ফাইনালে ১৫০ কিংবা তার বেশি রান করতে পারেননি। সেদিক থেকে হিলি হয়ে রইলেন অনন্য। তাঁর এই রেকর্ড একটা লম্বা সময় ধরে রয়ে যাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১২৩ এর বেশি স্ট্রাইকরেট হিলির করা ১৭০ রানের বদৌলত ইংল্যান্ডের পাহাড়সম এক টার্গেট ছুড়ে দেয় অজি মেয়েরা। আর সে পাহাড় টপকাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২৮৫ রানে থেমে যায় ইংলিশ মেয়েদের ইনিংস।
অজিদের সপ্তম শিরোপা জয়ের দিনেও ম্যাচ সেরা হয়েছেন এলিসা হিলি। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল এবং ফাইনালে টানা ম্যাচ সেরা হওয়াও তো আর নিত্যদিনের কোন ঘটনা না। এক দিকে শিরোপা জয় অন্যদিকে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সের ফুলঝুরি। সব মিলিয়ে দারুণ এক দিন পার। এমন দিনের জন্যেই হয়ত নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু লুকিয়ে রেখেছিলেন হিলি।