রিকশাওয়ালা থেকে ক্রিকেটার, একটা রূপকথার গল্প

রূপকথার এই গল্পটা ঠিকঠাক এগুলো একদিন নিশ্চয়ই আইডল মোহাম্মদ শামির মত জাতীয় দলে খেলবেন জুনেদ খান। রিকশাওয়ালার ছেলে ক্রিকেটার হয়েছে এমনটা তো অনেক শোনা গিয়েছে, এবার বোধহয় রিকশাওয়ালার নিজেরই তারকা হওয়ার পালা।

মুকেশ কুমার ছিলেন, ইয়াশ দয়াল কিংবা শার্দূল ঠাকুরও ছিলেন কিন্তু ইরানি কাপে গ্যালারি থেকে সবচেয়ে বেশি জোরে শোনা গিয়েছে যে নামটা সেটা জুনেদ খান। এটিই তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম চার দিনের ম্যাচ, কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে উৎসাহ দিতে কমতি রাখেনি একটুও। প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি, ইনিংস জুড়ে দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি পেয়েছেন প্রতিপক্ষ কাপ্তান রুতুরাজ গায়কড়ের উইকেট।

এর মধ্য দিয়ে একটা রূপকথার গল্পের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা বুকের খাঁচা ভেঙে ডানা মেলার সাহস পেলো।

জুনেদ নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। তিনি বলেন, ‘ম্যাচের আগেরদিন যখন শুনেছি আমি পরেরদিন একাদশে থাকব তখন থেকে একটুও ঘুমাতে পারিনি। মুম্বাইয়ের হয়ে খেলব, সেটাও আবার ইরানি কাপে এটা আমার জন্য স্বপ্নের মত। আর উইকেটটা মূলত বোনাস, খেলতে পেরেছি সেটাই বিশাল ব্যাপার।’

ক্রিকেটার হওয়ার নেশায় উত্তরপ্রদেশের ছেলে মুম্বাই বা কলকাতা চলে আসার কাহিনী ভারতীয় ক্রিকেটাঙ্গনে নতুন নয়। এই পেসারও নিজের রাজ্য ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন অন্য শহরে, তবে তাঁর গল্পটা পুরোপুরি ভিন্ন। ক্রিকেটার হওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিল না সে সময়, স্রেফ জীবিকার তাগিদে প্রায় এক দশক আগে মুম্বাই এসে হাজির হয়েছিলেন তিনি – কাজ করেছেন গার্মেন্টসে।

সময়ের ব্যবধানে এই তরুণ শিখেছেন অটোরিকশা চালানো; অটোরিকশা চালাতে চালাতেই একদিন চলে আসেন সঞ্জিবনী ক্রিকেট একাডেমিতে, তারপর থেকেই নিয়মিত ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয় তাঁর। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুটা হয়েছিল তখন – জুতো কেনার টাকাও সে সময় অন্যের সহায়তায় কিনতে হয়েছিল তাঁকে।

করোনা কালে যখন স্থবির হয়ে আসে সবকিছু, জুনেদের জীবনে তখন ভাগ্যের ছোঁয়া লাগে। পিজে হিন্দু জিমখানার হয়ে স্থানীয় টুর্নামেন্টে খেলার সময় কলকাতা নাইট রাইডার্সের তৎকালীন সহকারী কোচ অভিষেক নায়ারের চোখে পড়েন তিনি। নায়ারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এরপর থেকে চলে তাঁর অনুশীলন।

একটা সময় মুম্বাই রাজ্য দলের রাডারে আসেন এই ডান-হাতি, বুচিবাবু এবং কেএসসিএ টুর্নামেন্টের জন্য স্কোয়াডে রাখা হয় তাঁকে। আর সবশেষ অভিষেক হয় ইরানি কাপে, যে রাজ্যে তাঁর জন্ম ঠিক সেখানেই পেশাদার ক্রিকেটের সূচনা করলেন তিনি।

রূপকথার এই গল্পটা ঠিকঠাক এগুলো একদিন নিশ্চয়ই আইডল মোহাম্মদ শামির মত জাতীয় দলে খেলবেন জুনেদ খান। রিকশাওয়ালার ছেলে ক্রিকেটার হয়েছে এমনটা তো অনেক শোনা গিয়েছে, এবার বোধহয় রিকশাওয়ালার নিজেরই তারকা হওয়ার পালা।

Share via
Copy link