উইকেটরক্ষক ক্রিকেটের ফিল্ডিং পজিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ১১ জনের দলে একটি ফিল্ডিং পজিশনের জন্য দলে একটি জায়গা বাঁধা কথাটি শুনতে খারাপ লাগলেও, আমরা জানি একটি ক্রিকেট দলে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা কতটুকু। তবে দিনে দিনে উইকেটরক্ষকের সংজ্ঞা কিংবা ভূমিকা পাল্টে গিয়েছে কালের প্রয়োজনে।
একটা সময় ছিল যখন উইকেটরক্ষক এই ভূমিকাতেই একজন দলে সুযোগ পেতেন, প্রয়োজনটা বদলে যায় সীমিত ওভারের ক্রিকেট প্রচলন হওয়ার পর। তখন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কথাটি আসে এবং সেই অনুসারে এক একটি দল তাদের যোগ্য ব্যাক্তিকে খুঁজে নিতে থাকে। আর বর্তমান আধুনিক ক্রিকেটে তো তা একেবারে উল্টে গিয়েছে, এখন ব্যাটসম্যান-উইকেটরক্ষকের বেশি গুরুত্ব।
যদিও তার যে ব্যাতিক্রম থাকে না তা নয়, এখনও ক্রিকেটের বড় ফরম্যাটে ‘উইকেটরক্ষক’ এই শব্দটি বেশি গুরুত্ব পায় কোনো কোনো দলের ক্ষেত্রে। অতীতে যাচ্ছি না, দেখা হিসেবে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মার্ক বাউচার, কুমার সঙ্গাকারা, মঈন খান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দীনেশ রামদিন (তালিকাটি আরও লম্বা হবে) প্রভৃতিদের দেখেছি।
কেউ উইকেটরক্ষক হিসেবে ভাল, কেউ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবার দুটোতেই অসাধারণ এমনও রয়েছে এবং তর্ক-সাপেক্ষে তারা যেকোনো দলের প্রথম এগারোয় উইকেটরক্ষক হিসেবে জায়গা করে নেবেন। তবে, এবার একজন ‘অনামী’র কথা বলবো। প্রচলিত ধারা মানলে তাঁকে আসলে কিংবদন্তি বলার কথা নয়। তাঁর নাম জয়াবর্ধনে, মাহেলা জয়াবর্ধনে নয়, প্রসন্ন জয়াবর্ধনে। এসেছিলেন লঙ্কান দলে, স্বয়ং কুমার সাঙ্গাকারার বিকল্প হয়ে।
আচ্ছা একথা তো সবাই মানবেন ১৯৯০ থেকে ২০১০-১২ এই সময়টা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সোনালী সময় গিয়েছে।।অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুন রনতুঙ্গা, মুত্তিয়া মুরারিধরন, চামিন্ডা ভাস, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা, মারভান আতাপাত্তু, তিলকারত্নে দিলশান প্রভৃতি অসাধারণ সব প্রতিভা বেরিয়ে এসেছে দ্বীপরাষ্ট্র হতে। রেকর্ডের সাথে সাথে তারা ক্রিকেট বিশ্বের আদর্শও হয়ে উঠেছে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্বকাপ জয়, একাধিক বিশ্বকাপে রানার্স আপ, টেস্টে সাফল্য প্রভৃতি এসেছে, এক কথায় এখনও পর্যন্ত স্বর্ণযুগ এবং ভবিষ্যতেও হয়তো অক্ষত থাকবে।
এদের মাঝে ৫০-এর কিছু বেশি টেস্ট ও গোটা কয়েক ওয়ানডে ম্যাচ খেলা প্রসন্ন জয়াবর্ধনেকে কেইবা আর নোটিশ করবে, কিংবা কেই বা আর মনে রাখবে। কিন্তু উপমহাদেশের পিচে মুত্তিয়া মুরালিধরণ কিংবা রঙ্গনা হেরাথ-সহ চামিন্দা ভাসের বিরুদ্ধে উইকেটের কিভাবে সাবলীল থাকতে হয় তা তিনি তাঁর দক্ষতা ও নৈপুণ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
টিন-এজ বয়স থেকেই এনার উইকেট কিপিং দক্ষতা গোটা দ্বীপরাষ্ট্রে চর্চিত হয়েছিল বলে জানা যায়। রমেশ কালুভিতারানান উত্তরসূরি হওয়ার দৌড়ে তখন তাঁর সাথে লড়াই আরেক কিংবদন্তি সাঙ্গাকারার। দু’জনে একই সাথে শুরু করলেও সঙ্গাকারার ব্যাটিং নৈপুণ্য তাঁকে কিছুটা পিছিয়ে দেয়। মাঝে বার কয়েক সুযোগ পেলেও তা নিয়মিত ছিল না।
২০০৬ সালে যখন সাঙ্গাকারা যখন টেস্ট ক্রিকেটে গ্লাভস জোড়া তুলে রেখে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে শুরু করেন তখন আবার এনার জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়। উইকেট কিপিংয়ের প্রশংসা তো তাঁর জন্য সারাজীবনই ছিল, এবার সুযোগ পেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ রানও করতে থাকেন। বিশেষ করে সেই সময় টেল এন্ডারদের সাথে ব্যাট করায় সুনাম পেয়েছিলেন, ফলে ক্যারিয়ার ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
৫৮ টেস্টে ১২৪ টি ক্যাচ ও ৩২ টি স্টাম্পিং, রেকর্ড খুব খারাপ নয়, বিশেষ করে উপমহাদেশের পিচে, যেখানে স্লিপে ওই সময় মাহেলা রেকর্ড গড়েছেন। ব্যাটিংয়েই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিছু বড় রান করেছেন, যার মধ্যে পাঁচটি শতরান রয়েছে। যাইহোক সারাজীবন প্রচারের পেছনেই থেকে গিয়েছেন। একজন অসাধারণ উইকেটরক্ষকের নাম আজ কিছু জন অন্তত জানুক।