আন্দ্রে রাসেল, আসলে এই ভদ্রলোকের সাদা পোশাকের হিরো হওয়ার কথা ছিল। ১৯ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির অভিষেক যার, ২২ বছর বয়সে যিনি ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলে ফেলেছেন – তাঁকে নিয়ে আসলে এই স্বপ্ন চোখ বুজে দেখে ফেলা যায়।
কিন্তু, সকালের সূর্য সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয়নি। অভিষেকের পর আর টেস্টই খেলেননি এই জ্যামাইকান। প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১৭ টি।
ঠিক প্রচলিত কাঠামোর গড়পড়তা স্বপ্নে আন্দ্রে রাসেল যাননি। তিনি বনে গেছেন সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট। আরো নির্দিষ্ট করে বললে তিনি টি-টোয়েন্টির স্পেশালিস্ট। তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হট কেক। তিনি ভবঘুরে এক ক্রিকেট দানব। আজ ভারতে, তো কাল অস্ট্রেলিয়ায়, পরশু বাংলাদেশ, এরপর হয়তো দুবাই বা পাকিস্তান – এটাই তাঁর জীবন।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই নেন চার উইকেট। আট নম্বরে নেমে কাউন্টার অ্যাটাকে করেন ৪৯ রান, ফিল্ডিংয়ে ছিলেন দারুণ অ্যাথলেটিক। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। কালক্রমে বোলিংয়ের চেয়ে ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগী হয়েছেন। দৌঁড়ানোর চেয়ে চার-ছক্কা দিয়ে রান তোলাতে মনোযোগ বেড়েছে আরো বেশি।
আন্দ্রে রাসেল হচ্ছেন ক্যারিবিয়ান সেসব এক্সাইটিং ক্রিকেটারদের মাঝে সেরা যারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নিলামে ঝড় তোলেন। আগে এই জায়গাটা ছিল ক্রিস গেইলের। গেইলকে সেই জায়গাটা থেকে আর কেউ সরাতে না পারলেও আন্দ্রে রাসেল পেরেছেন। বিশ্বের যে প্রান্তের ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হোক না কেন – আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে টানাটানি লাগবেই।
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় বছর নিশ্চয়ই ২০১৬ সাল। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যেতে বড় অবদান রাখেন। বিশ্বকাপ জিতেন। এরপর সেই বছরই জিতেন বিগ ব্যাশ, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শিরোপা।
আর বাজে সময় আসে ঠিক এর পরের বছরই। ডোপ টেস্টে পজিটিভ আসায় এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন। ২০১৮ সালে ফিরেন। ফিরেই আইপিএলে ঝড় তোলেন। চিপকে ৩৬ বলে করেন ৮৮ রান। যেখানে ছিল ১১ টি ছক্কা আর একটি চার।
আন্দ্রে রাসেল ক্রিকেটের এক অভিনব অধ্যায়। তিনি চাইলে সবই করতে পারেন – ব্যাটে, বলে বা কখনো ফিল্ডিংয়েও। ব্যাট হাতে স্লগ করে অস্বাভাবিক সব লক্ষ্য তিনি সহজেই পাড় করিয়ে দিতে পারেন, আর সেটা বিশ্বের যেকোনো বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে। সামনে বোলার কে আছেন সেটা নিয়ে তিনি ভাবেন না একদমই।
বোলিংয়েও তাই, তিনি চাইলে দুই ওভারের মধ্যে পাঁচ উইকেট নিয়ে ফেলতে পারেন। আবার চার বলে চার উইকেট নেওয়ার কীর্তিও তাঁর আছে।
রাসেলের দুর্নামও আছেন। কোয়ালিটি বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে সব সময় তাঁর ব্যাট ক্লিক করে না। বোলিংয়েও মাঝেমধ্যে বেদম প্রহারের শিকার হন। ইদানিং ফিল্ডিংয়ে মন নেই। ফ্র্যাঞ্চাইজিতে মন দিতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতি তিনি খুব বেশি কমিটমেন্ট রাখে না। এটা অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের পুরনো সংকট।
তবুও এত কিছুর পরও আলাদা আন্দ্রে রাসেল। একটা অভিনব স্ট্যাট দিয়ে শেষ করি। কমপক্ষে ৫০ টা ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে কাজ স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে বেশি জানেন? – কে আর, আন্দ্রে ডোয়াইন রাসেল, ১৩০.২২!