ক্রিকেট প্রভাবিত হয় পারিপার্শ্বিক বহু কিছু দ্বারা। সেটা হোক আবহাওয়া কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগ। অথবা হতে পারে মাঠের বাইরে কিংবা ভেতরের বিশৃঙ্খলা। তাছাড়া নিরাপত্তা জনিত কারণ তো রয়েছেই। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটে বাঁধ সেধেছে রাজনৈতিক ভাবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বৈরিতা।
রাজনৈতিক বৈরিতাপূর্ণ্য মনোভাব কারণ হয়ে দাঁড়ায় নিরাপত্তার। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে যেন হরহামেশাই ঘটে গুলির আদান-প্রদান। পাকিস্তানে নিত্যদিন কোন বোমা হামলার খবর নিশ্চয়ই কারো অজানা না। এমতবস্থায় অনেক দেশই হয়ত চাইবে না তাঁদের দেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়দেরকে পাঠাতে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার আশ্বাসের পরও।
ভারত-পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ঠিক এমনটাই ঘটে থাকে বারংবার। তাই তো সচরাচর দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সিরিজের দেখাও মেলেনা এখন আর তেমন। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ তো দূরের বিষয় এশিয়া কাপ কিংবা বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টে ভারত জাতীয় দলের অনীহা কিংবা রাজনৈতিক একটা চাপ কাজ করে পাকিস্তানের খেলতে যাওয়া বিষয়ে।
অনেকে ভাবছেন কেন এসব নিয়ে আবার হচ্ছে আলোচনা। তাঁর পেছনে নিশ্চয়ই রয়ছে কারণ। সম্প্রতি এই ইস্যু আবার জেগেছে মাথাচারা দিয়ে। দিন দুয়েক হলো আইসিসি তাঁর বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের সাল এবং আয়োজক দেশগুলোর এক তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকা মোতাবেক ২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজিত হবে পাকিস্তানে।
যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তবে ১৯৯৬ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২০২৫ সালে পাকিস্তানে বসতে চলেছে আইসিসির কোন টুর্নামেন্টের আসর। ভারতীয় ক্রিকেট মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক পাড়ায় এ নিয়ে এক শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হয়ত শেষ মুহূর্ত অবধি হতে পারে অনেক জল্পনাকল্পনা। কিংবা ভেস্তে যেতে পারে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার সুযোগ।
ভারতীয় ক্রীড়া মন্ত্রী ও বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সাবেক সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ভারত পাকিস্তানে খেলতে যাবে কি না তা নির্ধারণ করবে ভারতীয় সরকার। তিনি বলেন, ‘যখন একটা বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হয় তখন বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে সিধান্ত নিতে হয়। ভারতীয় সরকার এর আগেও এমন বিষয়ে সিধান্ত নিয়েছে এবং এবারেও নেবে।’
তাঁর মানে বিষয়টা মোটামুটি পরিষ্কার যে ২০২৫ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারত খেলতে যাবে কি না তাঁর সিধান্ত নেবে দেশটির সরকার। অনুরাগ এই বিষয়ে আরো বলেন, ‘অতীতে বিভিন্ন দল পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর নজির কিন্তু রয়েছে কারণ সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। সেখানে খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রধান চ্যালেঞ্জ। আগেও খেলোয়াড়দের উপর হামলা হয়েছে সেখানে এটা চিন্তার বিষয়। সুতরাং যখন সময় আসবে তখন সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার তাঁর সিধান্ত জানাবে।’
দুই দেশের এমন বৈরীতায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ক্রিকেট ম্যাচ থেকে বঞ্চিত হয় পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। শেষ ভারত পাকিস্তানে খেলতে গিয়েছিল ২০০৫-০৬ এ। সেবার তিন টেস্ট ও পাঁচটি ওয়ানডে খেলতে গিয়েছিলেন ভারত দল রাহুল দ্রাবিড় ছিলেন সেবারের অধিনায়ক। পরবর্তীতে পাকিস্তান ভারতে এসেছিল ২০০৭ সালে এবং ২০১৩ সালে। এরপর দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজে আসে ভাটা। আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ছাড়া এই দুই দলের মুখোমুখি হবার সুযোগও একেবারে শূন্যের কোটায়।